ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চারদিনে সেবা নিয়েছেন ৯ লাখ করদাতা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

চারদিনে সেবা নিয়েছেন ৯ লাখ করদাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার প্রথম চারদিনে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১ হাজার ২৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মেলায় চারদিনে সেবা নিয়েছেন প্রায় ৯ লাখ করদাতা। রিটার্ন দিয়েছেন ২ লাখ ৬১ হাজার। আর কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিয়েছেন ১৯ হাজারেরও বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। উৎসাহ উদ্দীপনায় চলছে আয়কর মেলা। মেলার পঞ্চম দিন শনিবার সকালেই করদাতাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এদিনও মেলা প্রাঙ্গণ ছিল অনেকটাই উৎসবের আমেজ। মেলায় ঢুকলেই চোখে পড়বে অনুসন্ধান ও তথ্য কেন্দ্র। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে যেতে হয় বিভিন্ন স্টলে। তারপর মিলবে কর সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা। সবাই তা’ই করছেন। বিশেষ করে যারা নতুন কর দিচ্ছেন তারা সবাই তথ্য সংগ্রহের জন্য সেখানে যাচ্ছেন। মেলায় আয়কর রিটার্ন জমা, নতুন ই-টিন খোলা কিংবা করসেবা দেয়াসহ সকল কাজই চলছে ক্লান্তিহীনভাবে। সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছুটির দিনে অফিসের ব্যস্ততা না থাকায় শনিবার মেলায় আয়কর দিচ্ছেন। নবমবারের মতো আয়োজিত রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলার গতকাল শুক্রবারও ছিল প্রচ- ভিড়। মেলায় প্রথমবারের মতো রিটার্ন জমা দিয়েছেন সিএ ফার্মে কর্মরত সাইফুল ইসলাম। মিরপুরের এ বাসিন্দা বলেন, প্রথমবার রিটার্ন দাখিল করার আনন্দ অন্য রকম। রিটার্ন জমা দিতে সময়ই লাগেনি। এনবিআর কর্মকর্তারা খুব দ্রুত সেবা দিচ্ছেন। আরেক তরুণ করদাতা উত্তম সিংহ বলেন, প্রথমবারের মতো কর দিয়ে বেশ ভালো লাগছে। মাত্র দুই মিনিটে রিটার্ন জমা দিয়েছি। এখানে সব কিছুই গোছাল। ছুটির দিন হওয়ায় সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও অন্যান্য পেশাজীবীদেরও মেলায় আসতে দেখা গেছে। মেলা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কর অঞ্চলের রিটার্ন গ্রহণ বুথ, হেল্প ডেস্ক, ব্যাংকের বুথ, ই-পেমেন্ট বুথ, ই-টিআইএন বুথসহ সব বুথে করদাতাদের ভিড়। মতিঝিল থেকে স্ত্রীকে নিয়ে নিজের কর বিবরণী জমা দিতে মেলায় এসেছেন সরকারী কর্মকর্তা হামিদ শেখ। তিনি বলেন, প্রতিদিন অফিস শেষে মেলায় আসার সময় হয় না। ছুটির দিন হওয়ায় বিকেলে চলে আসলাম। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর মেলায় সেবার মান খুবই ভালো। মেলায় কর সংক্রান্ত সব সেবাই সহজে মিলছে। মাত্র কয়েক মিনিটেই জমা দেয়া যাচ্ছে আয়কর রিটার্ন। ব্যাংক বুথ ছাড়াও ই-পেমেন্টের মাধ্যমে অনলাইনেই জমা দেয়া যাচ্ছে আয়কর। করা যাচ্ছে ই-ফাইলিংও। কর নিবন্ধন (ই-টিআইএন) নিতেও সময় লাগছে খুবই কম। বিড়ম্বনা ছাড়া সহজে আয়কর জমা দিতে পেরে সন্তুষ্ট করদাতারাও। মেলার সমন্বয়ক ও এনবিআর সদস্য জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মেলায় করদাতাদের সেবা নেয়া, নিবন্ধন ও রিটার্ন জমা দেয়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে। কোন সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গেই মিলছে সমাধান।’ ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’ সেøাগানে শুরু হওয়া এবারের মেলার প্রতিপাদ্য ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এখানে সব ধরনের সেবা মিলছে। এনবিআরের তথ্যমতে, আয়কর মেলায় চারদিনে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১ হাজার ২৬৭ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ টাকা। গতবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২০১ কোটি ৩৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪০ টাকা। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯৭ টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫.৫১ শতাংশ। আর মেলার চতুর্থ দিনে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৪০ টাকা। গতবছরের একই দিনের তুলনায় এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১৬.৮৪ শতাংশ। আর মেলার চারদিনে সেবা নিয়েছেন ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৫ জন করদাতা। এবার গতবছরের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেশি মানুষ সেবা নিয়েছেন। রিটার্ন দাখিল করেছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ২৪৩ জন। গতবছরের চারদিনে রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৯ জন। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫৯.৫৯ শতাংশ। চারদিনে নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ১৯ হাজার ৪১৫ জন। গতবছরের তুলনায় নতুন নিবন্ধনকারী করদাতার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২৪০ শতাংশ। শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেলার চতুর্থ দিনেও হয় ‘কর শিক্ষণ ফোরাম’। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ৪০ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন। তাদের কর বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। জয়ী ১০ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
×