ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাসানী আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

ভাসানী আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস ॥ ড. কামাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৭ নবেম্বর ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সকলেই আমরা যাকে শ্রদ্ধা করি। এখানে জনগণের পক্ষে যত আন্দোলন, সংগ্রাম হয়েছে। সবকটিতে আমাদের মূল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। যিনি আমাদের বঙ্গবন্ধুরও গুরু। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করতে পেরেছি। মওলানা ভাসানী আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে চিরদিন আমাদের মাঝে থাকবেন। আজকে আমরা যেসব কাজ করে যাচ্ছি সাধারণ কৃষক-শ্রমিক ও গরিব মানুষদের পক্ষে তার সবই ভাসানীর অনুপ্রেরণায়। তিনি যে শিক্ষা ও প্রেরণা গিয়েছিলেন, সেটা আমাদের পথকে পাথেয় হয়ে চলছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই সন্তোষ থেকে সারা বাংলাদেশে সেই প্রেরণার আলো ছড়িয়ে যাবে। এই জায়গার গুরুত্ব যেন সবাই উপলব্ধি করতে পারি। টাঙ্গাইলের সন্তোষে শনিবার সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের কাছে একথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) মাহমুদুল হাসান প্রমুখ। এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর মাজার প্রাঙ্গণে আসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ডাঃ জাফরুল্লাহ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শেখ মুজিব, মওলানা ভাসানী ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ নয়। আজকে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমান ইতিহাসের যেমন কিংবদন্তি ঠিক একইভাবে ওসমানি, জিয়াউর রহমান, তাজউদ্দীনকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস হবে না। মওলানা ভাসানী বাংলাদেশ। তিনি জনগণের সাধারণ মানুষের কথা বলেছেন। তাই আজ আমরা এখানে এসেছি। এরপর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি মাজার প্রাঙ্গণে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে বলব লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনও সমতা আসে নাই, সমতা আনতে হবে। তা না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সে সমতা ফিরিয়ে আনতে হবে। আওয়ামী লীগ যখন নতুন কোন সঙ্কটের সৃষ্টি করে তখন তা বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেয়। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যে ঘটনা ঘটেছে তা আপনারা দেখেছেন। পুলিশের গাড়িতে আগুন কারা দিয়েছে তা টিভিতে দেখানো হয়েছে। তারপরও আমরা আবারও বলছি এটা আমরা করি নাই। জনগণ সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছে। সরকার চায় নির্বাচনে ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে না যায়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মাজার প্রাঙ্গণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষে শনিবার যথাযোগ্য মর্যাদায় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। তার অসংখ্য মুরিদান ও ভক্তের কণ্ঠে যুগ যুগ জিও তুমি মওলানা ভাসানী সেøাগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে মজলুম জননেতার সমাধিস্থল টাঙ্গাইলের সন্তোষে অবস্থিত মাজার প্রাঙ্গণ। সকালে ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলাউদ্দিন-এর নেতৃত্বে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর মওলানা ভাসানীর পরিবার, জেলা জাতীয় পার্টি, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দেশী-বিদেশী অসংখ্য ভক্ত মুরিদান ও সর্বস্তরের জনতা। দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, ওরশ, গণ ভোজসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মওলানা ভাসানীর আপোসহীন ভূমিকাকে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। ১৮৮০ সালের (১২ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে মওলানা ভাসানীর জন্ম। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার জীবনের সিংহভাগই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সারাজীবনই তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর তার সর্বশেষ কীর্তি ছিল- ফারাক্কা লং মার্চ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন মওলানা ভাসানী। বঙ্গবন্ধুও তাকে শ্রদ্ধা করতেন পিতার মতো। শিক্ষা অনুরাগী ও গ্রাম-বাংলার নির্যাতিত মানুষের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন মহান এই নেতা।
×