ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩৭ মামলা মাথায় নিয়ে ফিরলেন মিলন

প্রকাশিত: ০৩:০৩, ১৮ নভেম্বর ২০১৮

৩৭ মামলা মাথায় নিয়ে ফিরলেন মিলন

অনলাইন রিপোর্টার ॥ দেশের ফিরেছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। বিভিন্ন মামলায় ২০১০ সালের ৪ মার্চ থেকে টানা ৪৪৯ দিন কারাবরণ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। অবশেষে গত ১৩ নবেম্বর ৩৭ মামলা মাথায় নিয়ে অনেকটা গোপনেই দেশে ফিরেছেন তিনি , লড়বেন নির্বাচনেও। চাঁদপুর-১ আসনে বিএনপি থেকে তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী। জানা গেছে, রবিবার (১৮ নবেম্বর) থেকে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎ চলবে। তাই গোপনেই প্রায় চার বছর পর গত মঙ্গলবার দেশে আসেন মিলন। ওই দিন সকালে ঢাকায় নেমেই জামিনের আশায় আত্মসমর্পণ করতে রওনা দেন চাঁদপুরের আদালতের দিকে; কিন্তু পুলিশ দেখে ফিরে আসেন। একইভাবে পরপর তিন দিন আদালতে গিয়েও আত্মসমর্পণ করেননি। মূলত গ্রেফতার এড়াতেই তার এই লুকোচুরি খেলা বলে জানান। এহসানুল হক মিলন বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওয়ান-ইলেভেনের সময় কোনো মামলা হয়নি; কিন্তু ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর যে মামলাগুলো হয়েছে তা হাস্যকর, সেটা সবাই জানে। তবু আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেওয়াসহ জেলও খাটি। এর পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মালয়েশিয়া যাই। সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে পড়াশোনা করি। এ সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি। তিনি বলেন, দেশের মানুষ সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছে। এ জন্য আমার পক্ষ থেকে মনোনয়ন নেওয়া হয়েছে। এখন আমি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে চাচ্ছি; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আদালতে হাজিরা দেওয়ার আগেই আমাকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র চলছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। কীভাবে জানলেন যে গ্রেফতার হচ্ছেন, জবাবে মিলন বলেন, দেশে ফেরার আগে আমার নির্বাচনী এলাকা কিংবা আদালতে এতো পুলিশ মোতায়েন ছিল না। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আদালতে যাওয়ার আগে পথিমধ্যেই আমাকে তুলে নিয়ে গুম করে ফেলা হবে। এটা গণতান্ত্রিক কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ইসির হাতে; কিন্তু একজন প্রতিনিধি আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে গেলেও তাকে ধরে নিতে হবে, এটা কী ধরনের সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষণ? এলাকার নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে সাবেক এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনগণ ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালে আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে। ২০০৯ সালে এমপি হয়েও মামলার জালে সংসদের বাইরে থাকতে হয়েছে। আদালত পরে আমার পক্ষে রায় দিলেও প্রতিহিংসার কারণে জনগণের সেবা করতে পারিনি। নকলের বিরুদ্ধে সারাদেশে যে আন্দোলন করেছি, তাতে মানুষ বিএনপি এবং আমাকে মনে রেখেছে। গত কয়েক বছর আমি এলাকায় না থাকলেও নেতাকর্মী-ভোটারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছি। আমার স্ত্রী মাঠে কাজ করছে। নেতাকর্মীরা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরও ভালো মনোবল নিয়ে আছে। এখন সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণ অতীতের চেয়েও বেশি ভোটে আমাকে নির্বাচিত করতে প্রস্তুত। এদিকে বর্তমানের আত্মগোপনে থাকা মিলনের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি তার স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবি রবিবার ইসি দফতরে জমা দিয়েছেন। নাজমুন নাহার বেবি একই সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ চান। তবে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তিনি সিইসির সাক্ষাৎ পাননি। চিঠিতে তিনি লিখেন, আমি একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, পুলিশ আমাকে আদালতে হাজির হওয়ার সুযোগ না দিয়ে বাইরে থেকে গ্রেফতার, অতঃপর নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের লক্ষ্যই এমন ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ কারণে আমি আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ এবং নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত করার সুযোগ থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হচ্ছি। যেহেতু নির্বাচনী আইন অনুযায়ী বর্তমান পুলিশসহ সমস্ত প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন, সে কারণে আমাকে ঘিরে পুলিশ প্রশাসনে এহেন বেআইনী তৎপরতা বন্ধ এবং আইনী প্রক্রিয়াসহ স্বাভাবিক নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার পথে সকল প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে আমি নির্বাচন কমিশনের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে নাজমুন নাহার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আইনিভাবে লড়তে চাই। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কোর্টে হাজিরা দিতে চাই। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের বাধা দিচ্ছে। আদালত প্রাঙ্গণে ডিবি পুলিশ বসানো হয়েছে। বোরকা পরে কোনও মহিলা গেলেও তাকে চেক করে দেখা হয়। এ অবস্থায় আমরা কোর্টে যাওয়ার নিরাপত্তা চাই।
×