ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চা আবাদ

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

চা আবাদ

চা বাগান ও চা শিল্পের উন্নতির লক্ষ্যে দেশে প্রথমবারের মতো চা বিধিমালা প্রণীত হয়েছে। বিধি অনুযায়ী চা বাগানের চাষযোগ্য জমি পতিত ফেলে রাখা যাবে না। প্রতিবছর অন্তত দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে আবাদ বাড়াতে হবে। এই নিয়ম মানা না হলে চা বোর্ড প্রতিবছর প্রতি একরের জন্য পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা আরোপ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে। প্রস্তাবিত বিধিমালায় চা, চা বাগান, ক্ষুদ্রায়তনের চা বাগান, টি এস্টেট, চা চাষযোগ্য জমি, ব্রেন্ডার, ব্রোকার ইত্যাদির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী বর্তমানের মতোই চা সম্পর্কিত সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে চা বোর্ড। বোর্ডের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে রয়েছে, সেখানেই থাকবে। চাষের জন্য চা বাগানের মালিকদের চা বোর্ড থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। পরে চা কারখানার জন্য নিতে হবে আলাদা লাইসেন্স। লাইসেন্স ফি ও নবায়ন মাসুল নির্ধারণ করবে চা বোর্ড। প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। লাইসেন্সের আবেদনপত্র কারণ ছাড়াই নামঞ্জুর করতে পারবে চা বোর্ড। তবে নামঞ্জুর আদেশ পাওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে আবেদনকারী ওই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ওই দুই লাইসেন্সের পর নিতে হবে চা ওয়্যারহাউস লাইসেন্স। প্রতিবছর নবায়ন সাপেক্ষে যার মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বাগানে উৎপাদিত চা নিলামে বিক্রির জন্য মজুত রাখতে গুণগত মান ও চা সংরক্ষণের জন্য উপযোগী নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কাস্টমস বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবহৃত হয়। লাইসেন্সবিহীন কোন ওয়্যারহাউসে-বাগানে উৎপাদিত চা নিলামে বিক্রির উদ্দেশে বা অন্য কোন কারণে মজুত রাখা যাবে না। প্রস্তাব অনুযায়ী এখন হতে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী হিসেবে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও নিতে হবে চা বোর্ড থেকে লাইসেন্স। এই লাইসেন্সও নবায়ন করতে হবে প্রতিবছর। তিন বছরের মধ্যে নবায়ন না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। নয়া বিধি অনুয়ায়ী নিলামে অংশ নেয়া ছাড়া চা বাগানের মালিকদের বাগান থেকে সরাসরি চা বিক্রির সুযোগের কথাও বলা হয়েছে। চা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে তা করা যাবে। তবে পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। বোর্ড প্রথম দফায় ১৫ শতাংশ এবং আবেদন সাপেক্ষে দ্বিতীয় দফায় আরও ১০ শতাংশ চা বিক্রির অনুমোদন পাবে। নান্দনিক প্যাকেটজাত ও বিশেষ সুগন্ধিযুক্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ চায়ের ক্ষেত্রে চা বোর্ড এই অনুমতি দেবে। নিলাম থেকে রফতানির উদ্দেশ্যে কেনা চা রফতানি করা যাবে। সে ক্ষেত্রে রফতানিকারকদের প্রত্যেক ‘কনসাইনমেন্টের’ জন্য চা বোর্ড হতে অনুমতি নিতে হবে। তবে নিলাম কেন্দ্র থেকে কেনা দামের চেয়ে কম দামে চা রফতানি করা যাবে না। নিলাম থেকে রফতানির উদ্দেশ্যে কেনায় ১৮০ দিনের মধ্যে রফতানি করা না গেলে ওই চা আবার নিলামের মাধ্যমেই বিক্রি করতে হবে। আবার চা বাগান মালিক তার বাগানে উৎপাদিত চা নিলাম কেন্দ্রে না পাঠিয়ে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমেও রফতানি করতে পারবেন। চা এক ধরনের মৃদু উত্তেজক পানীয়। বিশ্বজুড়ে যার রয়েছে জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামেও চায়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চায়ের যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছেÑ চা অর্থ বর্জ্য ব্যতীত ক্যামেলিয়া সাইনেনসি বা ক্যামেলিয়া থিয়াগাছের পাতা ও কচি কা- থেকে তৈরি পণ্য। এ দেশে চা এসেছিল চীনাদের হাত ধরে। ব্রিটিশ শাসকরা এ দেশে চা বাগান স্থাপন করে। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে দেশে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে ক, খ ও গ-এই তিন শ্রেণীর ১৬৩ চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯০টি চা বাগান রয়েছে মৌলবীবাজার জেলায়। এছাড়া হবিগঞ্জের ২০, সিলেটে ২০, চট্টগ্রামে ২২, পঞ্চগড়ে ৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাঙ্গামাটিতে একটি করে চা বাগান রয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৫ দেশে বর্তমানে চা উৎপাদিত হয়। বিশ্বব্যাপী দৈনিক তিন শ’ কোটি কাপ চা পান করে। এক সময় চা রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। বর্তমানে কোন অবস্থানেই নেই। ১৯৯০ সালের পর থেকে চা রফতানি কমেছে। চায়ের হৃত বাজার ফিরিয়ে আনার জন্য প্রস্তাবিত বিধিমালা মাইলফলক হতে পারে।
×