ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহিলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করবে এমন নেতাদের নির্বাচিত করার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

 নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করবে এমন নেতাদের নির্বাচিত করার আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করতে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কাজ করবে এমন রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কার্যকর ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটি রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানম। সভাপতির সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের এডভোকেসি এ্যান্ড লবি পরিচালক জনা গোস্বামী। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফওজিয়া মোসলেম, ভাইস প্রেসিডেন্ট লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেমসহ কেন্দ্রীয় সম্পাদকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আয়শা খানম বলেন, বর্তমানে রাজনীতিতে বিভিন্নমুখি, পরস্পর বিরোধী চিন্তাধারাগুলো একসঙ্গে হচ্ছে। যদিও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা নয়। এখানে রাজনীতির যে ধারা, রাজনীতির যে সংস্কৃতি এবং গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা, মানবাধিকার, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ৭২ এর সংবিধান এর বর্ণিত যে চিন্তাধারা, মর্মবাণী, সেটার সঙ্গে বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের শক্তির ঐক্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে সামাজিক প্রগতি, সামাজিক উন্নয়ন, আদর্শবাদী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রক্রিয়ায় আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি আমরা তেমন লক্ষ্য করছি না। তিনি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচন কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন করা। নির্বাচনকালে রাজনৈতিক কৌশলের নামে কোন দল, জোট বা রাজনৈতিক দলের নেতা যেন যুদ্ধাপরাধী, স্বৈরাচার, ঋণখেলাপী, নারী নির্যাতনকারী, মাদকব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ গডফাদারদের সঙ্গে কোন প্রকার নির্বাচনী ঐক্য বা সম্পর্ক গড়ে না তোলে তার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি, জঙ্গীবাদী, ধর্মের লেবাসধারী কেউ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাতে জড়িত না হয় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দেয়া ধর্মভিত্তিক রাজনীতি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা, নির্বাচনী কার্যক্রমে নারী-পুরুষ সবাইকে সম্পৃক্ত করতে এবং সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নারীসহ প্রান্তিক সকল জনগণ যেন নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ২০০৮ এর ৯০ নং অনুচ্ছেদ কার্যকর করা, নির্বাচনে ‘না’ ভোট প্রয়োগ এর বিধান চালু, নারী ভোটকেন্দ্র ও বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, নারীর মর্যাদা বিষয়ক কমিশন গঠন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ, নারী নির্যাতনকারী, নারীর মর্যাদায় অবিশ্বাসী ও প্রগতিবিরোধীদের চিহ্নিত করে নির্বাচনে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা, বৈষম্যমূলক সকল আইন সংস্কার করে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রতিষ্ঠা করাসহ ১৯৭২ সালে সংবিধানের মূল ভিত্তিগুলো পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে নারী-পুরুষের সম অধিকারসহ সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার অঙ্গীকার থাকা, দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রতিটি শাখায় শতকরা ৩৩ ভাগ নারীকে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা, সব রাজনৈতিক দল থেকে অধিকহারে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া এবং উক্ত প্রার্থীদের নির্বাচনে জিতিয়ে আনার সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়। সম্মেলনে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি, আসন সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি এবং নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে থাকা যুক্ত করা, রাজনৈতিক কৌশলের নামে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, স্বৈরাচারী, ঋণখেলাপী, নারী নির্যাতনকারী, মাদকব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, গডফাদারদের সঙ্গে কোন প্রকার ঐক্য না গড়ে তোলা, নির্বাচনকে কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাবমুক্ত রাখতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
×