ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ নভেম্বর ২০১৮

 আওয়ামী লীগের দলীয়  মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রাথমিকভাবে তিন শ’ আসনেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হলেও জোট-মহাজোটের সঙ্গে আলোচনার পর তাদের ছেড়ে দেয়া আসনগুলো থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। এখন শরিকদের কোন আসন ছেড়ে দেয়া হবে, ছেড়ে দেয়া আসনগুলোতে তাদের বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী রয়েছে কিনা, এ নিয়ে দলটিতে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর আজকালের মধ্যে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসনবণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে বলে দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলটির সংসদীয় বোর্ড টানা কয়েকদিন বৈঠকে বসে দলের একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে। বোর্ডের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, তিন শ’ আসনে দফায় দফায় পরিচালিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জরিপ এবং দলগতভাবে গোপন জরিপের রিপোর্টের ভিত্তিতে দলের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে দলটি। আর এ বাছাই প্রক্রিয়ায় অনেক মন্ত্রী-এমপির কপাল পুড়ছে। সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে জনপ্রিয় অনেক নতুন মুখ। তরুণদের আধিক্যও এবার দেখা যেতে পারে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায়। ৬০ থেকে ৬৫ আসন জোট শরিকদের জন্য রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এবার দলে রেকর্ড সংখ্যেক মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাই আগে থেকে যদি দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়, তবে অনেক আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা নিয়েছেন এবার ভিন্ন কৌশল। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনই দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করবে না। দ্বন্দ্ব-বিভেদ এড়াতে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় স্থান পাওয়া নেতাদের ক্ষুদে ম্যাসেজ ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। দলের প্রার্থিতা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রবিবার সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের মনোনয়নের বিষয়টা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত। তবে ফাইনালি ফিনিশিংটা বাকি আছে। তবে আমাদের এ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলোচনা করে ফাইনাল করা হবে। আমাদেরটা প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি অলমোস্ট ক্লোজড। তবে এ্যালায়েন্সের সঙ্গে আলোচনা করে একসঙ্গে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। আমরা মনোনয়নটা দিয়েছি জরিপ রিপোর্টের ভিত্তিতে। যাদের ছয়মাস আগেও খারাপ ছিল তারা হয়ত এখন ভাল হয়েছে। তাই তাদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দু’একদিনের মধ্যে জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৪ দল ছাড়াও এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্টসহ অন্যান্য শরিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক এই বৈঠক হতে পারে। তবে ইসলামী কিছু দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চায়, তাদের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈঠক করে আসনবণ্টনের বিষয়টি সমাধান করবেন। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ আসনবণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠিও দিয়েছেন। জানা গেছে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ২২০ থেকে ২৩০টি আসনে দলের একক প্রার্থী দেবে। বাকি আসনগুলো ১৪ দলসহ মহাজোটের শরিকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কে কয়টা আসন পাবে তা নির্ধারণ করতে জোট শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। যে কোন কঠিন মুহূর্তে জিততে পারে এমন প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলসহ মহাজোট শরিকদের ক্ষেত্রেও জয়ী হতে পারে এমন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে। তাই প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আগামী চ্যালেঞ্জের নির্বাচনে অজনপ্রিয় কোন প্রার্থীকে জোট বা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ছাড় দিয়ে কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তবে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তড়িঘড়ি করে দলের সকল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষকে কোন ধরনের সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। বরং বিরোধী রাজনৈতিক জোটের প্রার্থী তালিকা দেখেই তারা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে। আর শেষ মুহূর্তে যাতে নিজ দলের প্রার্থী পরিবর্তন করা যায়, সেজন্য প্রত্যেক মনোনীত প্রার্থীর কাছ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ফরমে সই নিয়ে রাখা হবে। যা দল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিলেই মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে। সূত্রগুলো বলছে, দলীয় প্রধানের নেতৃত্বে গঠিত সংসদীয় বোর্ড তিন শ’ আসনের প্রার্থীর খসড়া তালিকা করে রেখেছেন। ভাবতে হচ্ছে জোট ও মিত্রদের নিয়ে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আসন বণ্টন দেখেই আওয়ামী লীগ জি জোট ও মিত্রদের আসনগুলো চূড়ান্ত করে ঘোষণা দিতে পারে। এ কারণে দলটির প্রভাবশালী নেতারা মুখে যাই-ই বলুন না কেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে একটু বিলম্বই করবে আওয়ামী লীগ।
×