ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমান বাজেট নতুন সরকার কিছুটা বদলাতে পারবে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 বর্তমান বাজেট নতুন সরকার কিছুটা বদলাতে পারবে

এম শাহজাহান ॥ নয় বছরের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বাজেট বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট দুই সরকারের অধীনে বাস্তবায়ন হবে। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের পর দেশে যে নতুন সরকার হবে, সেই সরকার চলতি বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ছয় মাস সুযোগ পাবে। এদিকে ডিসেম্বরের মধ্যেই বাজেট বাস্তবায়নের প্রথম ছয় মাস সম্পন্ন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। ওই সরকার জানুয়ারির মধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন বাজেট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করবে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংশোধনী বাজেটে পরিবর্তন আনা হতে পারে। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বাজেটের আকার যেভাবে বেড়েছে সেভাবে বাস্তবায়নে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি মন্ত্রণালয়গুলো। এ কারণে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সংশয় ও উদ্বেগ রয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের ভার দুই সরকারের ওপর বর্তাবে বিধায় আগে-ভাগেই সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি রয়েছে। পদ্মা সেতুসেহ দশ মেগা প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের দশ প্রকল্প এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে গত ছয় মাসের বাজেট বাস্তবায়নের একটি চিত্র পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে দ্রুত বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়ন শাখা হতে এ ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠান শেষে জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের সময়ও বাজেট বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, এবার দুই সরকারের অধীনে চলতি বাজেট বাস্তবায়ন হবে। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষায় বাজেট বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। সেখানে মূল এডিপির আকার ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৬ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় হবে। এছাড়া পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে যোগান দেয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। মূল এডিপির বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকেও নতুন অর্থবছরের বাজেটের বড় প্রকল্পের সঙ্গে ছোট প্রকল্পগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। পুরনো যেসব প্রকল্প চলমান আছে, চলতি বছরেও বরাদ্দ আছে সেগুলোকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি হারে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে আন্তরিক সরকার। প্রথম ছয় মাসে বাস্তবায়নের অগ্রগতি বেশ সন্তোষজনক। তিনি বলেন, চলতি বাজেট দুই সরকারের অধীনে ন্যস্ত হলেও বাস্তবায়নে কোন সমস্যা তৈরি হওয়ার কথা নয়। এটি রুটিনওয়ার্কের মতো, দায়িত্ব অর্পিত থাকে। এছাড়া প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ ছাড় যাতে দ্রুত ও যথাসময়ে হয় সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে। এর ফলে নির্বাচন সামনে রেখে বাস্তবায়নে কোন সমস্যা হচ্ছে না। বরং সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এটা ঠিক, শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এতে নানা ধরনের প্রতিকূলতা থাকে। এসবের পরও গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯২ শতাংশ। এবারও বছর শেষে ভাল ফল আসবে। জানা গেছে, বছরের শেষ তিন মাসে বাজেট বাস্তবায়ন হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে আবহাওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত দেশে বর্ষাকালে বাজেট ঘোষণা করা হয়। ওই সময় বাজেট বাস্তবায়নের নিয়ে হার নিয়ে দেশে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকে জুনের পরিবর্তে জানুয়ারিতে বাজেট ঘোষণার কথা বলেছেন। জানুয়ারিতে যে নতুন সরকার গঠন হবে, এসব বাস্তবায়ন তাদের বাজেট বাস্তবায়নের সুযোগ সবচেয়ে বেশি থাকবে।
×