ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রতিবাদী নারীর গল্প ‘আয়না বিবির পালা’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 প্রতিবাদী নারীর গল্প ‘আয়না বিবির পালা’ মঞ্চস্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর পথচলাটা বড্ড কঠিন। পদে পদে শিকার হতে হয় প্রতিবন্ধকতার। বারংবার মুখোমুখি হতে হয় অমানবিকতার। তবে সেই প্রতিকূলতার মাঝে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে কিছু নারী। প্রতিবাদী নারীর গল্প বলা তেমনই নাটক আয়না বিবির পালা। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো নারী জাগরণের ভাষ্যময় নাটকটি। নাট্যদল নাট্যধারার কুড়িতম প্রযোজনাটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন রবিউল আলম। লোকসাহিত্য সঙ্কলন ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে শৃঙ্খল ভাঙ্গা নারীর আখ্যান আয়না বিবির পালা। বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম হচ্ছে পালা। সেই পালার আদলে এগিয়েছে প্রযোজনাটির কাহিনী। এই পালার প্রধান চরিত্র ‘আয়না বিবি’। আয়না বিবি দূর যুগের লৌকিক গল্প বা কথন থেকে গ্রামীণ প্রেম-বিশ্বাসের পটভূমিকায় মৌখিকভাবে রচিত ও চর্চিত। গল্পের আবেদন বর্তমান পেশাবাদী আধুনিক যুগে এসেও শেষ হয়ে যায়নি। ভোগবাদী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বক্তৃতামালা, কলমের খোঁচায় পত্রিকার কলামে, ফেসবুকের পাতায় বা ওয়েব লিংকে যতটা বলিষ্ঠতা পায়, বাস্তবে ততটা পায় না। কর্পোরেট কালচারেও ঘরে ফেরা নারী ঘরের চৌকাঠে পা রেখেই হয়ে যায় গৃহিণী, শোষিত-বঞ্চিত নতমুখী নারী। পরিবর্তন যে কিছুই হয়নি, সেটা বলাও অর্থপূর্ণ নয়। সে যুগেও আমরা বলিষ্ঠ, কর্তৃত্ব পরায়ণ নারী চরিত্রের সন্ধান পাই। উজ্জালের মা কিংবা কুরুঞ্জিয়া নারীরা পুরুষের চেয়ে ক্ষমতায়-নেতৃত্বে কোন অংশে কম নন, বরং পুরুষরা সেখানে অবনত কিংবা সমান্তরাল। কিন্তু এটাকে পুরো সমাজ ব্যবস্থার চিত্র বলা যাবে না, বলা যায় বিচ্ছিন্ন ছেঁড়াপত্র, যেমনটি কুরুঞ্জিয়া জাতি ও সমাজ বিচ্ছিন্ন। প্রকৃত চিত্র পুরুষতান্ত্রিক সমাজ মস্তিষ্কের চাপে সত্য যুগের সীতাকে যেমন অগ্নি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে, পতি ছাড়া হতে হয়েছে, ঠিক তেমনই আয়নাকে হতে হয়েছে ঘর ছাড়া, স্বামী ছাড়া। সকলের মতোই আয়নার এই বিসর্জন ও নিগৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়ায় শেষ ধাক্কাটা আসের স্বামীর কাছ থেকেই। একপর্যায়ে আয়নাও দৃঢ়ভাবে মুখোমুখি হয় পরিস্থিতির। রুখে দাঁড়ায় প্রতিবাদী চরিত্র নিয়ে। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক লিটু সাখাওয়াত বলেন, বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান ঐতিহ্য পালাগান। এই ধারার প্রতি আমার রয়েছে গভীর ভালবাসা। যখন থেকে থিয়েটার শুরু করেছি, তখন থেকেই স্বপ্ন লালন করতাম অন্তরে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়েছি এ নাটকে। খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত প্রান্তরে শত বছর ধরে পালাকাররা যা পরিবেশন করে আসছে, সেটাকেই আমরা প্রসেনিয়ামের ঘেরাটোপে সুনির্দিষ্ট চরিত্রায়নের মাধ্যমে দর্শকের সামনে তুলে ধরেছি।’ নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শামীমা আক্তার মুক্তা, লিটু সাখাওয়াত, সাগর আহমেদ রুবেল, শামসুন্নাহার বিউটি, সব্যসাচী চঞ্চল, রহিসুল ইসলাম তমাল, রোকনুজ্জামান শ্রাবণ, দুখু সুমন প্রমুখ। নাটকটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন সব্যসাচী চঞ্চল। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন শামীমা আক্তার মুক্তা। আলোক পরিকল্পনা করেছেন শাহাবুদ্দিন ও তানজিল আহমেদ।
×