ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকের সমমানের হবে

চালু হচ্ছে জাতীয় পদক ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২০ নভেম্বর ২০১৮

 চালু হচ্ছে জাতীয় পদক ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পাঁচটি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সমাজকল্যাণ পদক দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক নীতিমালা, ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম পরে সাংবাদিকদের বলেন, মাদার অব হিউম্যানিটি বলতে প্রধানমন্ত্রীকে বোঝানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উনাকে যে মাদার অব হিউম্যানিটির স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তার প্রতিফলন হিসেবে। মিয়ানমারের রাখাইনে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় গত বছর যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘চ্যানেল ফোর’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত করে। সেই নামেই এ জাতীয় পদক চালু করছে সরকার। এই পুরস্কারের নীতিমালা অন্যান্য জাতীয় পুরস্কারের মতোই জানিয়ে শফিউল বলেন, পাঁচজন ব্যক্তি ও সংস্থাকে প্রতি বছরের ২ জানুয়ারি সমাজকল্যাণ দিবসে এই পদক দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নামে এই পদক দেয়ার প্রস্তাব করেছিল সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, নিজের কথা নাইবা বললাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এ দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আবার এই দেশের মানুষ তাকে হত্যা করেছে। যে পাঁচটি ক্ষেত্রে এই পদক দেয়া হবে সেগুলো হলো- বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে অবদান। প্রান্তিক, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা, আত্মনির্ভরশীলকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। প্রতিবন্ধী ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ, জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ইনক্লুসিভ শিক্ষা বাস্তবায়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান। সুবিধাবঞ্চিত, আইনের সংস্পর্শে আসা, আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু, কারামুক্ত কয়েদি, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের কল্যাণ, উন্নয়ন, পুনঃএকত্রীকরণ। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমন কোন কর্ম যা সমাজের মানুষের মেধা ও মননের বিকাশ, জীবনমান ও পরিবেশের উন্নয়ন, সমাজবদ্ধ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সর্বোপরি মানবকল্যাণ ও মানবতাবোধে সমাজ বা রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার কার্যক্রম। শফিউল বলেন, পুরস্কারপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম সোনায় তৈরি একটি পদক, মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদকের রেপ্লিকা, দুই লাখ টাকার চেক এবং সম্মাননা সনদ দেয়া হবে। এই জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকের সমমানের হবে। প্রতি বছর কারা পুরস্কার পাবেন তা ঠিক করতে জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে একটি এবং জাতীয় পর্যায়ে মন্ত্রিসভার সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি থাকবে। ২০১৮ সালে এই পদকে দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে শফিউল বলেন, মন্ত্রণালয়ের সেই প্রস্তুতি আছে কি না জানি না। তবে পদক দেয়ার কার্যক্রম প্রতি বছর জুলাই মাস থেকে শুরু করা হবে। পুতুলকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন ॥ অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন (পুতুল) আবারও ইউনেস্কোর জুরি বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এ্যান্ড অটিজম বিষয়ে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ হোসেন দ্বিতীয়বারের মতো ইউনেস্ক-আমির জাবের আল-আহমেদ আল-সাবাহ পুরস্কার’ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় মন্ত্রিসভা তাকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আগামী দুই বছরের জন্য এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০১৬ সালে একই পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, কুয়েত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই বোর্ড প্রতি বছর শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের আধুনিক পদ্ধতিতে স্বনির্ভর হওয়ার উপায় উদ্ভাবনের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘ইউনেস্কো-আমির জাবের আল আহমেদ আল-জাবের আল-সাবাহ’ নামে দুটি পুরস্কার দেয়। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নে ডিজিটাল পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কাজ করছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার ডলার মূল্যের এই পুরস্কার দেয়া হয়। শাহরিয়ার শহীদের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক ॥ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহরিয়ার শহীদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে শোক জানানো হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাসসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শাহরিয়ার শহীদ শনিবার মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। তিনি বলেন, শাহরিয়ার শহীদ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বাসসে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। অঞ্চলভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকারভিত্তিক ৩০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। হার্ট এ্যাটাকের পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৭ নবেম্বর শাহরিয়ার শহীদ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
×