ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরিকদের সঙ্গে আসনবণ্টনে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ২০ নভেম্বর ২০১৮

শরিকদের সঙ্গে  আসনবণ্টনে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি  আওয়ামী  লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মহাজোট ও জাতীয় যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড। সোমবার রাতে গণভবনে দীর্ঘ বৈঠক করেও আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি দলটি। আগামী শুক্রবারের মধ্যে সংসদীয় বোর্ড দফায় দফায় বৈঠকে বসে জোটের মধ্যে আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। পরে আগামী শনিবার জোট ও দলগতভাবে একযোগে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তিন শ’ আসনে দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে পুনরায় বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড। এতে বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রথমদিকে দলের কয়েকটি আসন নিয়ে আলোচনার পর মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি ও একেএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্টের আসন বণ্টন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন বোর্ডের সদস্যরা। তবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি তারা। বৈঠক শেষে সংসদীয় বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকার খসড়া মোটামুটি চূড়ান্ত। জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ৩শ’ আসনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে দল ও জোটের প্রার্থীদের নাম একযোগে প্রকাশ করা হবে। বৈঠক সূত্র জানায়, আসন বণ্টন নিয়ে ১৪ দলের শরিক, জাতীয় পার্টি ও নির্বাচনী অন্য শরিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির নেতাদের গণভবনে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাননি। তবে তাদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে আলোচনা চলছে। আসন বণ্টন নিয়ে তাদের সঙ্গে দর কষাকষি চলছে। বৈঠক সূত্র জানায়, আরেক দফা বৈঠকে বসে আসন বণ্টনের খসড়া তালিকা প্রণয়নের পর জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারে আওয়ামী লীগ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জরিপের ভিত্তিতে তাদের হাতে থাকা সব আসনগুলোর প্রকৃত চিত্র তাদের সামনে তুলে ধরে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সমাধান করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। তবে শুধু জোট-মহাজোটের স্বার্থে পরাজিত নিশ্চিত এমন কোন প্রার্থীকে ছাড় দিয়ে আসন হারানোর কোন ঝুঁকি নিতে চায় না আওয়ামী লীগ। বিষয়টি সোমবারের রাতের বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। জানা গেছে, মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে সোমবার দিনভর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতা, মন্ত্রী-এমপি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত না পেলেও কয়েক তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান। এ সময় তারা মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানালে প্রধানমন্ত্রী তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন বলেও জানা গেছে। সূত্র জানায়, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কয়েকজনের নাম প্রকাশ হলেও সংসদীয় বোর্ডের কোন সদস্যই তা নিশ্চিত করেননি। বরং প্রকাশিত তালিকাকে মনগড়া এবং বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। সংসদীয় বোর্ডের সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, আমরা এখনও কারও মনোনয়ন চূড়ান্ত করিনি। যা করেছে তা মিডিয়াই করেছে। তবে সংসদীয় বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়নের ক্ষেত্রে একটি চমকের আভাস দেন। তিনি জানান, এবারের মনোনয়নে বেশকিছু চমক থাকছে। টানা ১০ বছর মেয়াদে নিজেদের জনপ্রিয়তা এলাকায় ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বার্ধক্যজনিত কারণে এবার কয়েক মন্ত্রী-এমপি মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন। তার ভাষায় চমকটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করে চট্টগ্রামের মেয়র হওয়া মঞ্জুরুল আলম এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। চট্টগ্রাম-৪ আসন থেকে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলেই আভাস দেন তিনি। এটি হলে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন ওই আসনের বর্তমান এমপি দিদারুল আলম। ওই সদস্য অবশ্য এও বলেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে অনেক কিছুই পরিবর্তন হতে পারে। বৈঠক সূত্র আরও জানায়, এবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা নিয়ে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী তালিকা দেখার পরই নিজ দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে দলটি। তবে চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় থাকা দলীয় প্রার্থীদের আজ রবিবার থেকেই মোবাইল ম্যাসেজ কিংবা তথ্যপ্রযুক্তির এ্যাপের মাধ্যমে গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে নির্বাচনী ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হতে পারে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
×