ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বস’ সিনেমায় অনুপ্রাণিত হয়ে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি!

প্রকাশিত: ২২:১৫, ২০ নভেম্বর ২০১৮

‘বস’ সিনেমায় অনুপ্রাণিত হয়ে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি!

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করা দলের প্রধান এ কে এম রানা। নিজেকে ডিবির এএসপি (এসি) পরিচয় দেন তিনি। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও অভিযানের পর তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রানা পিবিআইকে জানিয়েছেন, বলিউডের হিন্দি সিনেমা ‘বস’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সংঘবদ্ধ এ চক্রটি গড়ে তোলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআইর প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি চক্রের প্রধান রানাসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি সম্পর্কে বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে পল্টন এলাকা থেকে খিলক্ষেত এলাকায় নিজ বাসায় যাওয়ার জন্য এক বন্ধুসহ সুপ্রভাত গাড়িতে ওঠেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাসটি নর্দ্দা যাওয়ার পর কয়েকজন ব্যক্তি বাসটির সামনে ২টি মোটরসাইকেল দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে বাসটি থামায়। এরপর ওই ব্যক্তিরা বাসে উঠে। তাদের একজনের কাছে ওয়ারলেস সেট ও দুইজনের পরনে ডিবি লেখা জ্যাকেট ছিল। তারা ভিকটিম মোস্তাফিজুর রহমান ও তার বন্ধুর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা ডিবির লোক, আমাদের কাছে তথ্য আছে তোরা ইয়াবা খাস, তোদের কাছে ইয়াবা আছে।’ এই কথা বলে তারা মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার বন্ধুকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে আনেন। এরপর তাদেরকে চড়থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারেন এবং ভিকটিমের পকেটে থাকা নগদ ৪২ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন সেট এবং ভিকটিমের বন্ধুর কাছে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ১টি মোবাইল ফোন সেট জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন। ভিকটিমের বন্ধুর কাছে ইয়াবা আছে বলে তার বন্ধুকে তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেন। পরে ভিকটিমের ব্যাগে ইয়াবা আছে বলে তাকে জোর করে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নেন।’ পিবিআই প্রধান আরও বলেন, ‘ভিকটিমকে থানায় নিয়ে মামলা দেয়ার কথা বলে গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে থাকেন তারা। পরবর্তীতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভিকটিমকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিএসটিআই মোড়ে এনে বলেন, ‘তোকে আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। তুই আর ইয়াবা খাবি না। এ সময় তারা ভিকটিমের কাছ থেকে টানাটানি করে তার ব্যাগটি নেয়ার চেষ্টা করেন। ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা ছিল।’ বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘একপর্যায়ে ভিকটিম বুঝতে পারেন তারা পুলিশ না। তখন তিনি ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এরপর আসামিরা ভিকটিমের ব্যাগটি ছেড়ে দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে দ্রুত পালিয়ে যান।’ পরে ভিকটিম মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা (মামলা নম্বর ৩১) দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করলে একপর্যায়ে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে। পিবিআই প্রধান বলেন, ‘পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা এই চক্রের সোর্স। তারা তথ্য দিতেন-কোন ব্যবসায়ী কত টাকা নিয়ে ফেরত যাচ্ছেন। তথ্য অনুযায়ী ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে অনুসরণ করা হতো। এরপর অন্য এলাকায় যাওয়ার পর কখনও মোটরসাইকেল বা কখনও মাইক্রোবাসে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে সবকিছু কেড়ে নিতেন তারা। তারা ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৪০ ভাগ সোর্সদের দিতেন।’ এ চক্রের আরও দুইজন সদস্য পলাতক রয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন আরও দুইটি চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আশা করি শীঘ্রই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’ এ ঘটনায় গ্রেফতার অন্যরা হলেন ডিবির ইন্সপেক্টর পরিচয়দানকারী জাবেদ আহমেদ ওরফে বাবু (৩৭) ও সোহাগ খন্দকার (৩১), উপ-পরিদর্শক পরিচয়দানকারী নাজমুল হোসেন (২৪) ও দেলোয়ার হোসেন (৫০), কনস্টেবল পরিচয়দানকারী আসাদুজ্জামান (৩৫), বুলবুল আহমেদ (৩২), হারুন ওরফে হিরা (৩২)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোটরসাইকেল, ৩টি ওয়ারলেস, এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল ২টি, চাপাতি ১টি, ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়।
×