ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের মাসে ‘বিজয় মঞ্চ’ করে নৌকার জন্য ভোট চাওয়া হবে

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২১ নভেম্বর ২০১৮

 বিজয়ের মাসে ‘বিজয় মঞ্চ’ করে নৌকার জন্য ভোট চাওয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে সারাদেশে ‘বিজয় মঞ্চ’ করে সেখান থেকে স্বাধীনতা ও আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকায় ভোট চাইবে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন এই নির্বাচনী জোট। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা বলেন, মুজিব কোট এখনও পরে থাকেন, তাদের কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর খুনী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে দেশের জনগণ তাদের এ সমুচিত জবাব দেবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যখনই দেশে নির্বাচন আসে, তখনই একটি অপশক্তি দেশের সংখ্যালঘুদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করে। অনেক সময় আঘাত করার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া যেহেতু শুরু হয়ে গেছে, এখন থেকে সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। নির্বাচনের সময়, নির্বাচনের পরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন গাফিলতি সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, অতীতে আমরা দেখেছি নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হয়। এই কাজ কারা করে তা আপনারা সকলেই জানেন। ক্ষমতার লোভে ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নারা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন উল্লেখ করে ১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, ড. কামাল হোসেনরা এক সময় আওয়ামী লীগে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে মন্ত্রীও করেছিলেন। সেই কামাল হোসেন এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের জোটসঙ্গীদের সঙ্গে ঐক্য করেছেন। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ এসব বর্ণচোরা ভ-দের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে ব্যালটের মাধ্যমে। প্রমাণ করে দেবে এই ভ-দের সঙ্গে দেশের জনগণ নেই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, কিন্তু যারা আওয়ামী লীগকে ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে যোগ দিয়েছেন, এটা আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটি আমাদের দুর্ভাগ্যের ব্যাপার না। জাতির দুর্ভাগ্য। যারা বিপক্ষে যোগ দিয়েছেন, তাদেরই দুর্ভাগ্য। আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য নয়। তিনি বলেন, সব অপশক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কি কারণে কামাল হোসেনরা বিভ্রান্ত হয়েছেন তা জানি না। তবে বর্ণচোরা রাজনীতিকরা সব সময় অপশক্তির মদদ দিয়ে থাকেন। তবে যারা একাত্তরের পরাজিত শক্তির মূল পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তাদের ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা হবে। বৈঠক সম্পর্কে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪ দল ও উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিজয় নিশ্চিত করার জন্য মাঠে-ময়দানে কাজ করবে। ১৪ দলের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৪ ডিসেম্বর থেকে বা তার আগে ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে বিজয় মঞ্চের কাজ শুরু হবে। সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে সারা দেশের জেলা-উপজেলায় বিজয় মঞ্চ স্থাপন করা হবে। বিজয় মঞ্চে বিজয়ের গান হবে। বঙ্গবন্ধুর কথা হবে। স্বাধীনতার ইতিহাসের কথা হবে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয়ের জন্য দলের লড়াই, সংগ্রামের কথা বলা হবে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিজয়ের জন্যও কাজ করা হবে। বিজয়ের মাসেই স্বাধীনতার বিরোধীশক্তিকে পরাজিত করা হবে। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪ দলের একটি নির্বাচনী প্রচার কমিটি হয়েছে। এই কমিটির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন ও অন্যান্য সংগঠনের একটি কমিটি করা হবে। এই কমিটি প্রয়োজনে প্রতিটি জেলা, উপজেলায় গিয়ে আওয়ামী লীগ জোট প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবে। তরুণের প্রথম ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক ॥ আগামী নির্বাচন উপলক্ষে ১৪ দলীয় জোট একটি পোস্টার তৈরি করবে। যেখানে রাজাকার, আলবদরদের ভোট না দেয়ার আহ্বান জানানো হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আহ্বান জানানো হবে। পাশাপাশি ‘তরুণের প্রথম ভোট, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হোক’, ‘রাজাকারমুক্ত সংসদ চাই’, ‘পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীদের বিচার চাই’, ‘স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিন’ -এ জাতীয় কথাও পোস্টারে থাকবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, আগামী নির্বাচনে মাঠের অবস্থা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অবস্থান খুবই ভাল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিজয় হবেই। এর আগে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব) কে এম সফিউল্লাহ, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নূরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির ডাঃ শাহাদাত হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রে অসীত বরণ রায়, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, কাজল দেবনাথ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×