ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরাতে দুই ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরাতে দুই ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও ফিলিপাইনের রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যেই এই দুই ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মামলা করা ও তা পরিচালনা সংক্রান্ত আইনগত দিকগুলোর যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। বুধবার সচিবালয়ে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকারের জন্য দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে একটি পরামর্শ দিয়ে যাবো। ওই পরামর্শে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়ে ত অনেক কিছুই থাকবে। মুহিত বলেন, সময় দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। এ সংক্রান্ত মামলা করার জন্য আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। তাই এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মামলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ফিডের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। মামলাটা কার কার বিরুদ্ধে হবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড) এবং ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে হবে। তাহলে কি ফেড বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে-জানতে চাইলে মুহিত বলেন, আমার মনে হয় থাকবে। কারণ তাদের মাধ্যমেই তো সবকিছু হয়েছে। তিনি বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশের বিষয় না। এটা সারাবিশ্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সারাবিশ্বের টাকা-পয়সা তারা সংরক্ষণ করে। প্রসঙ্গত, গত ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনও ফেরত আসেনি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। পরে এই অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ১৫ মার্চ (২০১৬) মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি এ পর্যন্ত ২০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে। এদিকে, ফরাস উদ্দিনের তদন্ত রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকেই এর জন্য দায়ী করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. ফজলে কবির। গত ২৯ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তাকে এর জন্য কোনো ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। একইভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে রিজাল ব্যাংকের ওপর করা তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসপি (ব্যাংককো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইনস)। অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলায় চলে চলে যাচ্ছে তাই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা সঠিক হবে না। এতে মামলা পরিচালনা কঠিন হয়ে যেতে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল আসামি রিজাল কমার্সিয়াল ব্যাংক হলেও এই ঘটনার সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশ জড়িত। আমাদের আইনজীবীরাও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন।
×