ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন দিনের ফুল প্রদর্শনী ও উৎসব শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

তিন দিনের ফুল প্রদর্শনী ও উৎসব শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ‘ফুলের মতন আপনি ফুটাও গান, হে আমার নাথ এই তো তোমার দান।’ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসংখ্য কবিতা ও গানে তিনি এইভাবে ফুলের বন্দনা করে গেছেন। পৃথিবীর সকল মানুষ ফুল ভালবাসে। প্রেম ও ভালবাসার জগতে যুগে যুগে ফুল এক অপরিহার্য্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তাই তো ফুলের কদর সব সময় ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতে ও থাকবে। ফুলের এই চাহিদাকে পুঁজি করে দেশে-বিদেশে হচ্ছে বড় অঙ্কের বাণিজ্য। বাংলাদেশের কৃষিখাতেও সম্ভাবনাময় অর্থকরী পণ্য হিসেবে উঠে এসেছে ফুলের নাম। বর্তমান দেশেই প্রতিবছর ১২শ’ কোটি টাকার ফুলের বাণিজ্য হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনের জন্য আন্তর্জাতিক ফুল উৎসব ও প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। দেশে এত বড় আয়োজনে ফুলের প্রদর্শনী এটাই প্রথম। প্রদর্শনী চলবে আগামী শনিবার বিকেল পর্যন্ত। ফুল প্রদর্শনীর এই উৎসবে ভারত, নেপাল ও থাইল্যান্ডের ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ৫৮টি প্রতিষ্ঠান স্টলে নিয়ে ফুলের প্রদর্শন করছে। গোলাপ, অর্কিড, চামেলী ও রজনীগন্ধাসহ নাম না জানা অসংখ্য দেশী-বিদেশী ফুলের দেখা মিলছে এই প্রদর্শনীতে। ফুলের উৎসব বলে কথা! তাই প্রদর্শনী উদ্বোধনীর পরই শত শত মানুষ ফুল দেখতে ঢুকে পড়ে উৎসব প্রাঙ্গণে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তরুণীরা খোঁপায় গুজে দিচ্ছে তার প্রিয় ফুল। ভিড় বাড়তে থাকায় প্রথম দিনেই জমে উঠেছে ফুল প্রদর্শনীর এই উৎসব। ইউএসএআইডি’র সহায়তায় ও বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি’র সহায়তায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ফুল উৎসব ও প্রদর্শনীর এই আয়োজন করেছে। মূলত ফুলের রফতানি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং এ খাতে নীতিগত সহায়তা প্রদানের জন্য এই প্রদর্শনী ও উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এর আগে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুর রউফ বিশেষ অতিথি হিসেবে ফুলের বাণিজ্য নিয়ে তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন। কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ হলো, ফুলের উর্বর ভূমি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মানুষের জীবনযাত্রারমান বৃদ্ধির ফলে সমাজের নানা স্তরে ফুলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই বাস্তবতায় দেশে ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কৃষি ভিত্তিক দুটি পণ্য পাট ও চা-এর উপর ভিত্তি করে আমাদের রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফুলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিডার চেয়ার্যমান বলেন, দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদানের ফলে বর্তমানে সারা বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশে দ্বিতীয় অবস্থানে যেতে সক্ষম হয়েছে। ঠিক তেমনি ফুল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগোনোর জন্য এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদান প্রয়োজন। কারণ ফুল কৃষিভিত্তিক একটি অতি সম্ভাবনাময় খাত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল বিদেশে রফতানির জন্য প্যাকের্জিং ব্যবস্থার উন্নয়ন, হিমাগার স্থাপন, ফুলের নতুন নতুন জাত উৎপাদনের উপর গুরুত্বারোপের জন্য এখাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ফুল খাতের উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং গবেষণা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার গ্রোওয়ার্স এ্যান্ড এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়শন নামে একটি সংগঠন গঠন করার উপরও গুরুত্বারোপ করেন। যারা ফুল খাতে নীতিসহায়তা প্রাপ্তিতে সরকার ও স্টেকহোল্ডাদের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারবে। আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৪ দশমিক ৩২ ভাগ, এবং মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪০.৬ শতাংশ কৃষিখাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক একটি পণ্য হিসেবে ফুলের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তিনি জানান, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (আইটিসি)’র তথ্যমতে, সারা পৃথিবীতে ফুলের বাজার প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সার্বিকভাবে ফুলের বাজার মূল্য প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। তাই এ সম্ভাবনাময় শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এর সঙ্গে জড়িত কৃষক ও উদ্যোক্তাদের স্বল্প হারে ঋণ সুবিধা প্রদান, আধুনিক প্রযুক্তি প্রাপ্তি ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রদান, উন্নত ও নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ করা, ওয়্যারহাউজ ও কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ এবং সর্বোপরি অবকাঠামো উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি জরুরী। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় হিমাগারের অভাবের কারণে দেশের কৃষি খাতে উৎপাদিত পণ্যের প্রকৃত মূল্য পাচ্ছে না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আব্দুর রউফ বলেন, ফুল একটি উচ্চ মূল্যমান কৃষি পণ্য এবং বাংলাদেশে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশে বর্তমানে ২০টি জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। ফুল খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য তিনি সরকারী-বেসরকারী যৌথভাবে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, বাংলাদেশ ফুল খাতের বিকাশে এ ধরনের আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ফুলের জন্য স্থায়ী পাইকারী বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।
×