ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছিটমহলে ভোট আনন্দ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ছিটমহলে ভোট আনন্দ

এ এক আনন্দের দিন। চিত্তে শান্তি পাবার দিন। এই দিন তাদের জীবনে প্রথম দেখা দিতে যাচ্ছে। আটষট্টি বছর কেটেছে তাদের বিচ্ছিন্ন ভূখ-ের বাসিন্দা হিসেবে। ভিন দেশের মাঝখানে খ- দ্বীপের মতো তারা বসবাস করে আসছিল। বিশ্ব মানচিত্রে তাদের অবস্থান কোথায় জানা ছিল না তাদের। সেই তারা শেখ হাসিনার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, শ্রম ও নিষ্ঠায় পেয়েছে নিজ দেশ; মাতৃভূমি, পতাকা, নাগরিকত্ব, অধিকার। লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষ পেয়েছে উদার আকাশ, বিস্তীর্ণ প্রান্তরে স্বাধীন সত্তা। বাংলাদেশের মূল ভূখ-ে যুক্ত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন বিলুপ্ত ছিটমহলের ভোটাররা। ভারতের মানচিত্র থেকে বাংলাদেশের মানচিত্রে এরা স্থান করে নিয়েছে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই মধ্যরাতে। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও এবারই প্রথম তারা সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানের সুযোগ পাচ্ছেন। দেশ পরিচালনার প্রতিনিধি নির্বাচনে নাগরিক অধিকার প্রয়োগের এমন সুযোগে তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সংযোগ ঘটেছে। প্রথম ভোটার হয়েছে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার পর। তাই সারাদেশের ভোটারদের মতো তারাও মেতে উঠেছেন ভোটের এই উৎসবে। শেখ হাসিনার সরকার তাদের জীবনধারা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল মুজিব-ইন্দিরার মধ্যে ১৯৭৪ সালে। তার আগে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পরে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর ও কুচবিহারের সীমানা নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় ছিটমহলের উদ্ভব হয়েছিল। সমস্যা সমাধানে নেহরু-ফিরোজ খান নুন চুক্তি হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। কিন্তু বাস্তবায়নের পদক্ষেপ আর নেয়া হয়নি। ১৯৭৪ সালে ছিটমহল বিনিময়, অমীমাংসিত সীমান্ত ও অপর জমি নিয়ে সীমান্ত চুক্তি হয়; যা বাংলাদেশের সংসদে অনুমোদিত হলেও সংবিধান সংশোধন করে চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি ভারত সরকার। ২০১৫ সালে লোকসভা চুক্তি অনুমোদন করে। একই বছরের জুনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বিল বিনিময় হয়। চুক্তি বাস্তবায়নে রূপরেখাও নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী ভারতের ১১১ ও বাংলাদেশের ৫১ ছিটমহল বিনিময় হয়। যার মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের ছিটমহলবাসীর প্রায় ৬৮ বছরের দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণার অবসান ঘটে। নাগরিকরা দীর্ঘ অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি পায়। ছিটমহলগুলো বিনিময়ের পর এসব স্থানের অধিবাসীরা স্ব স্ব দেশের নাগরিকত্বসহ ভোটাধিকার ফিরে পায়। সেই সঙ্গে সব ধরনের নাগরিক সুবিধাও। বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জন্য শেখ হাসিনা সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ক্ষেত্রকে দ্রুত আধুনিকায়ন করেছে। তাদের জীবনমান হতদরিদ্র, অতিদরিদ্র, দরিদ্র অবস্থা থেকে সচ্ছল অবস্থানে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের অন্যান্য অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে। জীবনে এই প্রথম বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারার স্বপ্ন তাদের মধ্যে। পরিবারের ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য রোমাঞ্চ জাগছে তাদের মধ্যে। দীর্ঘদিন অন্ধকারে থেকে আলোর পথে ফিরে এসেছে তারা। তা সম্ভব হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। তারা আশা করে, শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হয়ে সারাদেশের মতো বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। তারা সেই প্রার্থীকেই ভোট দিতে চাইছেন, যিনি তাদের জীবনমান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর আনন্দের উচ্ছ্বাস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। হিংসা, হানাহানি, সংঘর্ষমুক্ত ভোট হোক, সবার সেই কামনা।
×