ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ৫০, নিহত ১

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৮

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ৫০, নিহত ১

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভোলাইল এলাকায় পোশাক তৈরি এন আর কারখানার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংর্ঘষ, ধাওয়াপাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানায় ভাংচুর চালায় ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ম্সুীগঞ্জ সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ প্রর্দশন করেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় ২০ পুলিশসহ অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় গুলেনুর বেগম ওরফ গুলি(৪৫) নামে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি সে আতঙ্কিত হয়ে হার্টএ্যাটাকে মারা গেছে। তবে শ্রমিকদের দাবি পুলিশের ছোড়া গ্যাস ও লাঠির আঘাতে গুলেনুর বেগম প্রথমে আহত হয় ও পরে মারা যায়। বৃহ¯পতিবার সকাল দশটা থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত এ সংর্ঘষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, এন আর কারখানার শ্রমিকদের উৎপাদন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার সকাল দশটা থেকে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে। তারা কারখানায় ভাংচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পাগলা সড়ক অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। এ সময় শ্রমিকরা রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও থানা পুলিশ গিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে। শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। শ্রমিকরা জানায়, এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ছোড়েছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ কমপক্ষে অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়। আহতদেরকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে বেলা এগারোটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত একঘন্টা নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে এ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। এন আর গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের অভিযোগ, অন্যান্য গার্মেন্টেসের শ্রমিকদের চেয়ে আমাদের ফ্যাক্টরীতে বেতন-ভাতা কম দেয়া হয়। একই এলাকার বিভিন্ন গামেন্টেসের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। আমরাও বেতন বাড়ানোর জন্য দাবি করে আসছি কিন্তু মালিক পক্ষ তা কর্ণপাত করেননি। এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সড়কের পঞ্চবটি দিয়ে ফুতুল্লা কাশিপুরের একটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকের অবরোধের কারণে আটকা পড়েন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। পরে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানা মালিকদের সাথে কথা বলে শ্রমিকদের দাবী পূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা শান্ত হয়। দুপুর একটায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এদিকে শ্রমিকদের সাথে সংর্ঘষ চলার সময় এন আর গার্মেন্টেসে কর্মরত নারী শ্রমিক ভয়ে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে দ্রুত নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর তিনশ শয্যা হাসপাতালের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খানপুর তিন শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাহমিনা নাজনীন জানান, শ্বাস কষ্টজণিত কারণে গুলেনুর বেগম গুলির (৪৫) মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঞ্জুর কাদের জানান, নিহত গুলেনুর বেগম বাড়ি নওগা জেলায়। সে ভোলাই এন আর গার্মেন্টের সপ্তম তলার ফ্লোরে হেলপার হিসেবে কাজ করতো। ভোলাইল গেদ্দুর বাজার এলাকায় ভাড়া থাকতো। তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে নারী শ্রমিক গুলেনুর বেগম ভয়ে আতঙ্কে স্টোক করে মারা গেছেন। তার পরও নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে রিপোর্ট পাওয়া গেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে শ্রমিকদের দাবি পুলিশের সাথে সংর্ঘষ চলার সময় গুলেনুর বেগম গুলি আহত হয়। এ সময় সহযোগি শ্রমিকরা তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের উপর লাঠি চার্জ করে। তাদের দাবি পুলিশের ছোড়া গ্যাস ও লাঠির আঘাতে প্রথমে আহত হয় ও পরে সে মারা যায়। তারা এই ঘটনার বিচার দাবি করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী জানান, ধারণা করা হচ্ছে ওই নারী শ্রমিক হার্টএ্যাটাকে মারা গেছেন। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই নারীর ময়নাতদন্ত করতে রাজি হচ্ছে না। সংঘর্ষে ইটপাটকেলের আঘাতে ১৮-২০ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় শিল্প পুলিশ টিয়ারগ্যাস শেল ব্যবহার করেছে। শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জ জোনের পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, উত্তেজিত শ্রমিকদের শান্ত করার জন্য মাইক দিয়েও বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করে পরিস্থিতি মোকাবেল করছিলো। কিন্তু শ্রমিকরা যখন এন আর গার্মেন্টেসের ভেতরে স্টাফ রুম, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাংচুর শুরু করে এবং গেইট লাগিয়ে পুলিশ ঢুকতে বাধা দেয় এবং পুলিশের উপর ইটপাটকলে নিক্ষেপ শুরু করে তখন পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় অনেক শ্রমিক দৌড়ে বের হতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যেতে দেখা যায়। যেমন জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয় ঠিক একই ভাবে অনেকে এখানেও পড়ে যেতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, মারা যাওয়া ওই নারী বিষয়ে ডাক্তার বলেছেন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সে মারা গেছে। ময়নাতদন্ত রির্পোট হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃতি কারণ জানা যাবে। তিনি দাবি করেন শ্রমিকদের ইটপাটকেলের আঘাতে শিল্প পুলিশের ১০ সদস্য আহত হয়েছে।
×