ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা

জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি মাসেই। ইলেকশন কমিশন একটি ভাল নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য জাতির কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে কমিশনের এখন অত্যন্ত ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোও সঙ্গত কারণেই ব্যস্ত সময় পার করছে। অপেক্ষা এখন মেনিফেস্টো বা নির্বাচনী অঙ্গীকার নিয়ে দেশের মানুষের দোরগোড়ায় যাওয়া এবং তাদের সমর্থন আদায় করা। এরই মধ্যে কূটনীতিকদের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, শরিক দলের নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাতে দেখা যাচ্ছে সব পক্ষেরই বক্তব্যে একটি সাধারণ বিষয় উপস্থিত। সেটি হলো সবাই চায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। কিছুকাল আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) যথার্থই বলেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা শুধু নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে সম্ভব নয়, এজন্য সরকারের প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা প্রয়োজন। অন্যদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল আশাবাদ জানিয়ে বলেছিল, বাংলাদেশ সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে সক্ষম। তাহলে তো আর সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া নিয়ে কোন শঙ্কা থাকে না। সরকারপ্রধান সরকারের অবস্থান মানুষের কাছে স্পষ্ট করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গণতন্ত্র জোরদার এবং অব্যাহত উন্নয়নের স্বার্থে তাঁর সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা। দেখা যাচ্ছে সব পক্ষই চান নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। কেউই ত্রুটিযুক্ত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের প্রত্যাশা করেন না, এটাই স্বাভাবিক। তাই সব পক্ষেরই দায় রয়েছে যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। নিজ নিজ দায়বদ্ধতা থেকে অন্তরে দেশপ্রেম ও গণতান্ত্রিক চেতনা লালন করে তাই ইতিবাচক ভূমিকাও রাখা চাই। সেটাই প্রত্যাশিত। কিছুতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো যাবে না। কিন্তু নির্বাচনের আগে আইনসম্মতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে নির্বাচনে অযোগ্য প্রার্থীরাই বলতে শুরু করে দিয়েছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার আদ্যোপান্তও সুষ্ঠু হওয়া চাই। তবেই না গন্তব্যে সুন্দরভাবে পৌঁছানো সম্ভব হবে। যারা ঋণখেলাপী তাদের মনোনয়ন কি বৈধতা পেতে পারে? রীতি ও নিয়মকানুন ভঙ্গ করে ঋণখেলাপীদের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষিত হলে শুরুতেই তো বলে দেয়া যায় এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সবচেয়ে বড় কথা যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে টাকা ফেরত দেন না তারা মানুষকে কথা দিয়ে সেটি রক্ষা করবেন তার কোন গ্যারান্টি কি আছে? বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠের প্রধান শিরোনাম ছিল- বিএনপির এক ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর খেলাপী ঋণ দশ হাজার কোটি টাকা! এসব প্রার্থীর মধ্যে আবার রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা। টাকার কাছে বিক্রি হতে পারে কি নীতিশাস্ত্র? যে দলের হেভিওয়েট প্রার্থীরা গণমানুষের আমানত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন তাদের কাছ থেকে অন্তত মানুষের জন্য ভাল কিছু আশা করা যায় না। যাদের কাছে ভাল কিছু পাওয়ার আশাই নেই তারা জনপ্রতিনিধি হলে জনতার কি কোন উপকার হবে? কেবল পকেট ভারি হবে এদেরই, যাদের পকেট ইতোমধ্যে কৃত্রিম উপায়ে ফুটো করে রাখা। যে পকেট শুধু নিতেই জানে একান্ত নিজের প্রয়োজনে সেখানে যত অর্থই দেয়া হোক না কেন সেটি রসাতলেই যাবে। কোন উৎপাদনমুখী কর্মকান্ডে বা জনকল্যাণে তা ব্যয় হবে না। শিয়ালের হুক্কা হুয়া রব শুনে তাই গেরস্থের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে তারা যতই চিৎকার করুক দেশের সচেতন ও উন্নয়নকামী মানুষ সম্মিলিতভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পথের যাবতীয় বাধা অপসারণ করবে, এমনটাই প্রত্যাশিত।
×