ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ সমাজ ভেদে গণতন্ত্রেও নিয়ন্ত্রণের দরকার আছে

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ সমাজ ভেদে গণতন্ত্রেও নিয়ন্ত্রণের  দরকার আছে

রাজনীতি বড় জটিল। যারা বলছেন আমজনতাই তার সমাধান দিতে পারে তাদের কথার সঙ্গে একমত হতে পারলে খুশি হতাম। বলুন তো কোন দেশে কোন সময় সাধারণ মানুষ আসলে সমাধান দিতে পেরেছিল? তারা নির্ধারণ করার সুযোগ পায় বটে কিন্তু নির্ধারণের চাবিকাঠি তাদের হাতে থাকে না। ধরুন যদি তাদের মনের আক্রোশ বা নানা কারণে তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেয় তা কি সত্যি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলের হবে? সাধারণ মানুষকে বোঝানো বা সঠিক জায়গায় আনতে পারার মতো ক্যারিশমেটিক লিডার এখন আর জন্মায় না। সেটা সম্ভবও না। বঙ্গবন্ধুই তার শেষ উদাহরণ। বদলে যাওয়া বিশ্ব বাস্তবতায় এখন আর তা হবার নয়। তাই নির্বাচন বা যে কোন ভোটযুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ বিষয়টা হেলাফেলার কিছু না। একথা বলছি না তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বলছি তাদের আশা হতাশা এবং মতামতের ওপর নজরদারির কথা। কেন বলছি? ইতিহাসের কথা দিয়ে শুরু করলে আমরা কি দেখি? গ্যালিলিও বলেছিলেন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। আর সাধারণ মানুষ কি বিশ্বাস করতেন তখন? সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে এতেই ছিল মানুষের বিশ্বাস। সত্য বলার অপরাধে গ্যালিলিওকে মেনে নিতে হয়েছিল সর্বোচ্চ শাস্তি। সাধারণ মানুষের কথা মানলে বিজ্ঞান কিভাবে তার সত্য প্রতিষ্ঠা করত? সাধারণ মানুষের এমন ভুল দুন্যিাকে আটকে রাখত বৃত্তে। সীমাবদ্ধ মানুষ কখনই এতটা সভ্য আর উন্নত হতে পারত না। আমাদের দেশের বাস্তবতা আরও ভয়াবহ। মুখে যতই বলি দেশের সিংহভাগ মানুষ এখনও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অন্ধকার যুগে বাস করেন। লেখাপড়া বলতে সত্যিকারভাবে যা বোঝায় তার অভাব প্রকট। মানুষকে দোষারোপ করে লাভ নেই। যুগের পর যুগ দুঃশাসন আর অন্ধত্বে তাদের এই হাল। এসব মানুষের ভোটাধিকার বা মতামত একদিকে যেমন জরুরী তেমনি তাদের মতামত কিভাবে নির্ধারণ হচ্ছে সেটা দেখাও কর্তব্য। এই যে সাধারণ নির্বাচন দুয়ারে আমরা কি দেখছি? এত আয় উন্নতি এত অগ্রগতির পরও কি শেখ হাসিনার দল নিরাপদ? না তারা চাইলেই অনায়াসে জিতে আসতে পারবে? বরং আজও দেখলাম ব্যারিস্টার মওদুদ বলছেন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিতে পারলেই তাদের জয় নিশ্চিত। এ কথার ভিত্তি যাই হোক এ আশাবাদের সূত্র যাই হোক কথায় জোর আছে। জোর যে আছে তার বড় প্রমাণ ঐক্যফ্রন্ট। বয়স্ক নেতারা অভিজ্ঞ নেতারা সব হারিয়ে এই ফ্রন্টে কেন শামিল হয়েছেন? তারা জানেন সাধারণ মানুষের কাছে আসলে আদর্শ বা নীতি এখন বিষয় না। রাজনীতি তাদের জানিয়েছে এগুলো কথার কথা। আর এই কথার কথা সমাজে দুটির যেকোন একটি বেছে নেয়ার বিকল্প নেই। হয় নৌকা নয়তো ধানের শীষ। তারা জানে না ধানের শীষের মাথার ওপর হঠাৎ বসে যাওয়া নেতা ড. কামাল হোসেন একদা আওয়ামী লীগের টাকায় নির্বাচন করতেন। ব্যারিস্টার সাহেব এতই দরিদ্র যে, ’৯১-এর নির্বাচনেও পার্টি তহবিল থেকে টাকা নিয়ে ইলেকশন করেছিলেন। নিজের টাকার ওপর বড় দরদ তাঁর। সে দরদ আওয়ামী লীগে থাকতে যেমন টানটান ছিল এখন দীর্ঘসময় সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়ে শেখ হাসিনা তথা পুরনো দলের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার বেলায়ও টনটনে। বাজারে জোর গুজব তারেক জিয়ার নির্দেশমতো নিজের টাকায় নির্বাচন করার জন্য রাজি নন ড. কামাল হোসেন। হয়তো অতীতের দিকে তাকিয়ে তিনি এ বিষয়ে ছাড় দিতে নারাজ। কারণ, অতীতে তাঁর জয় ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার। গণজোয়ার না উঠলে তাঁর নৌকা কূলে ভিড়তে পারত না। ধানের শীষেও সে বাস্তবতার ভয়েই হয়তো তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন আমরা সাধারণ মানুষকে কিভাবে তা বোঝাব? তাদের অন্তরে যে বৈপরীত্য সেটাই তো ভোটের বাক্সে ভয়ের বিষয়। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের স্বনামধন্য বিশিষ্টজনদের অধিকাংশই নৌকার হয়ে কথা বলছেন। অভিনেতা নায়ক নায়িকা গায়ক গায়িকা বুদ্ধিজীবীদের সিংহভাগ এগিয়ে এসেছেন। খেলোয়াড়দের কেউ কেউ সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তারপরও কি আপনি সাধারণের মন পড়তে পারবেন আসলে? পরিচিত এক শিল্পী বন্ধুকে জানি। লেখাপড়া যাই হোক, বড় সার্টিফিকেটধারী। শিল্পচর্চা করলেও সব কথার শেষ কথা শেখ হাসিনাকে চান না। তার মতো প্রচুর মানুষ আছেন যারা যে কোন উন্নয়ন বা অগ্রগতির সুবিধাভোগী হবার পরও ঘোরতর আওয়ামী বিরোধী। এর কারণ যে পরিষ্কার না সেটা তাদের অভিযোগেই স্পষ্ট। এরা কখনও ভারত বিরোধিতা কখনও সংখ্যালঘু তোষণ কখনও দেশ বিক্রির নামে বিরোধিতার জন্য মরিয়া। এর একটাও প্রমাণ করতে পারেন না তারা। তাতে কি? অধুনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির পর সে ইস্যুটাও তাদের ভেতর জ্বলছে। তারা মুখে না বললেও মনে মনে এই শাস্তি মেনে নিতে পারেনি। তাদের আচরণ এখনও লুকায়িত। সুযোগ মিললেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসবে। তাই প্রশ্ন করি, এই মতামতই কি সাধারণ মানুষের মত? যে কথা বলছিলাম যে, কোন দেশের ভোট বা নির্বাচনে জনমনের আশা ভালবাসার প্রতিফলন ঘটলেও এর একটা রূপরেখা থাকা দরকার। নেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের পাশাপাশি নেতৃত্বের নাড়ি বোঝেন। যার প্রমাণ পেলাম ডিগবাজি খাওয়া নেতাদের দেখে। তিনি যাদের বিশ্বাস করেননি বা আস্থা রাখতে পারেননি তাদের চেহারা এখন প্রকাশ্য। নৌকায় থাকা না থাকা বিষয় না। বিষয় হলো তাদের ডিগবাজি। শেষ বয়সে এরা জনগণের কোন উপকার করার জন্য লম্ফঝম্প দিচ্ছেন তা আমাদের বোধগম্য না। এককালের তথ্যমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এককালের বঙ্গবীর সবাই এখন মারমুখো। সাধারণ জনগণ কি জানেন না বোঝেন যে মনোনয়ন না পেলে পিতার হত্যাকারীদের সঙ্গেও আঁতাত করা যায়? তারা কি জানেন সবকিছুর ওপর ভোল পাল্টানো এসব নেতারা আসলে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এমপি বা মন্ত্রী হতে চান? আর তারা যদি তা না পান তাহলে এই ফ্রন্ট মূলত টিকবে না? অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যার বিষয়টা একেবারেই ভিন্ন। তিনি আর কি পেতে পারেন আমাদের কাছ থেকে? দেশজ ও আন্তর্জাতিক কত পুরস্কার কত সম্মান তাঁর। বঙ্গবন্ধু কন্যা তাঁর পিতা আর অতীতের পরিচয়েই সম্মান নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। সেখান থেকে তিনি এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছেন যেখানে তাঁর জীবনের ঝুঁকি সবসময় চরমে। একথা তিনি বরাবর বলেও থাকেন। জলে স্থলে আকাশে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তাঁকে টার্গেট করা হয়নি। বারংবার বেঁচে যাওয়া অলৌকিকভাবে প্রাণ ফিরে পাওয়া নেত্রীকে মারতে না পারার আক্রোশ এখনও ঘুরছে আকাশে বাতাসে। আর যাদের আমরা সাধারণ মানুষ বা আমজনতা বলছি তাদের এক বড় অংশ না জেনেই এই ঘাতকদের জন্য সহানুভূতিশীল। একেই কি বলে গণতন্ত্র? না এর নাম সর্বজনীন ভোটাধিকার? আবারও বলছি সাধারণ নির্বাচন জরুরী। মানুষের ভোটাধিকার মৌলিক বিষয়ের অন্তর্গত। কিন্তু তারও একটা ব্যাখ্যা বা রূপরেখা থাকা দরকার। আমার ধারণা এটাই মানতে পারে না বিরোধী দল নামের বিএনপি। তাদের আক্রোশ আর জিঘাংসার শিকার হলে এদেশ জাতির ভাগ্যে কি নেমে আসবে ভাবাও কঠিন। অথচ অবাধের নামে তাই চাওয়া হচ্ছে। সরকার প্রশাসন নির্বাচন কমিশন এমনকি প্রগতিশীল জনগণও তাদের অপছন্দের। তাদের কথা একটাই তাদের জিততে দিতে হবে। আর তারা পরাজিত হলেই নির্বাচন ঠিক হয়নি। দেশে ছিটমহল ফিরে পাওয়া সমুদ্রসীমা মামলায় দুই প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান পাওয়া এসব কিছুই কিছু না? এবারের নির্বাচনে এসবের জবাব না পেলে ফলাফল যাই হোক, আমরা কিভাবে তা সফল নির্বাচন বলব? নাগরিক ও সুধী সমাজের নামে যারা টিভি মিডিয়ায় কর্তৃত্ব করেন তাদের দায়িত্ব শুধু ঝগড়া করা? না দেশ ও জাতিকে সম্মানজনকভাবে বাঁচতে দেয়া? এর উত্তর চাই নির্বাচনে। আমজনতার ভোট পড়ুুুক নির্বাচন জমজমাট হয়ে উঠুক সঙ্গে এও চাই মানুষকে প্রগতির পথে নেয়া শেখ হাসিনার পথের সঙ্গে একাত্ম হোক তারুণ্যের আগামী যাত্রা। [email protected]
×