ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তিনি কথা রেখেছেন, এবার আমাদের পালা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

তিনি কথা রেখেছেন, এবার আমাদের পালা

৬ নবেম্বর ২০০৮। তখন মধ্যদুপুর পেরিয়েছে প্রায়। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম তিনি আসবেন, তিনি এলেন। মুষ্টিবদ্ধ হাতে তিনি জানান দিলেন আমি আছি। আমি গড়তে এসেছি, ভাঙতে নয়। এ যেন সেই দিনের কথা। জননেত্রী শেখ হাসিনা, আমাদের ভরসারস্থল। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। চারদলীয় জোট সরকারের অপশাসনে অনিয়ম-দুর্নীতিতে ছেয়ে থাকা সমাজ-রাষ্ট্র এবং প্রায় দুই বছরের অগণতান্ত্রিক সরকারের অপছায়ায় পিষ্ট এই দেশটিকে তিনি আজ নিয়ে এসেছেন মধ্যম আয়ের দেশে, দেখিয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। এক সময়ের অপবাদ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামের এই দেশকে তিনি দাঁড় করালেন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। দরিদ্রতা, বেকারত্বকে নামিয়ে নিয়ে এসেছেন শূন্যের কোটায়। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, ক্রমবর্ধমান জিডিপি গ্রোথ দেশের অর্থনীতিকে নিয়ে গেছে এক নতুন মাত্রায়। উন্নয়ন থেমে থাকেনি। আসুন দেখে নেই ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের তুলনামূলক উন্নয়নের একটি চিত্র। আমি আগেই বলেছি বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে একটি রোল মডেল। এই অবস্থানে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া বিএনপি-জামায়াত জোটের সামর্থ্য এবং দক্ষতার সম্পূর্ণ বাইরে ছিল। এর প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্রে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯ থেকে নেমে ৪৭তম তে চলে এসেছে। বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা-৩৩৭৮ মেগাওয়াট থেকে উন্নীত হয়েছে ২০৪৩০ মেগাওয়াটে, বিদ্যুত আওতাধীন জনগোষ্ঠী-৩৮% থেকে ৯৫%। মোট বিদ্যুত কেন্দ্র-৪২ থেকে ১২৩টিতে রফতানি আয়-১.০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে উন্নীত হয়েছে ৪১.১ বিলিয়ন ডলারে। বৈদেশিক বিনিয়োগ-২০০৬ সালের ৪৫.৬ কোটি ডলার থেকে উন্নীত হয়েছে ৩০০ কোটি ডলারে। অতি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা হয়েছে ২৪.২% থেকে ১১.৩% তে। মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ৪ মাস থেকে ৬ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন-২৭২ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০০ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি ভর্তুকি ২০০৬ সালে ০ থেকে ২০১৮ সালে ১০৩৭৬ কোটি টাকা। অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে তুলনামূলক কিছু উন্নয়ন তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছেন নিজস্ব স্যাটেলাইট। ছাত্ররা পাচ্ছে অনলাইনে ডিজিটাল পাঠ সহায়িকা। বর্তমানে ইন্টারনেটে গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবায় যুক্ত হয়েছে প্রায় ৫ কোটি মানুষ। স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সাধারণ সেবা গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ৬২ কোটি ৫৭ লাখ। প্রসূতি মাদের সেবা গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৬৬৩টি। দূরবর্তী চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চালু করেছেন অত্যাধুনিক নৌ এ্যাম্বুলেন্স। শিক্ষাখাতকে ডিজিটালাইজেশন করার পাশাপাশি প্রায় ২৬০০০ প্রাইমারী স্কুলকে সরকারীকরণ করা হয়েছে। দুস্থ ও অতি দারিদ্র্য শিশুদের জন্য করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। ‘শেখ হাসিনার নির্দেশ ভিক্ষাবৃত্তির দিন শেষ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে, ১ লাখ ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়েছে, ৪৮০০০ ভিক্ষুক বর্তমানে এর আওতায় আছে। কৃষি ক্ষেত্রে কৃষকরা পাচ্ছেন কৃষি কার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট। নারী-ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে প্রথমে রয়েছে। ৬২ হাজার নারীকে প্রায় ৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হয়েছে। সুদক্ষ রাজনৈতিক নীতিমালার কারণে পার্বত্য এলাকায় শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এনেছেন স্বস্তি। নিজস্ব দেশের সীমানা নিশ্চিত করে তাতে যুক্ত করেছেন বিশাল সামুদ্রিক অংশ। অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তাঁর নির্দেশে পার্বত্য এলাকায় সব ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে সরকার। ঢাকার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের দেড় বিঘা জমি ফেরত পেয়েছে সনাতন ধর্মীয় মানুষ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিশ্চিত করে বাংলাদেশের মানুষদের বিচারের প্রতি ফিরিয়ে এনেছেন আস্থা। যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে জাতিকে করেছেন কলঙ্কমুক্ত। এছাড়াও ক্রমবর্ধমান মৃত্যু হার হ্রাস, জনশক্তি রফতানি ইত্যাদি খাতে ক্ষমতাসীন দলটি দেখিয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। ‘ঈর্ষণীয়’- কথাটি এ ক্ষেত্রে খাটে না। এই উন্নয়ন জনগণ তথা আমাদের জন্য। কাজেই এতে ঈর্ষার কিছুই নেই। তা বলে এই জায়গাটি কিন্তু ফাঁকা নেই। অক্লান্তভাবে একটি পক্ষ জনগণের উন্নতিকল্পে কাজ করে যাচ্ছে, তখন এই জনগণই বিএনপি-জামায়াত জোটের ঈর্ষার স্বীকার হয়েছে বার বার। তাদের দেয়া গনগনে আগুনে পুরতে হয়েছে নারী, শিশু, বৃদ্ধদের। সংখ্যালঘু হত্যা, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার মাধ্যমে তারা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় বার বার আঘাত করেছে। একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে নয়, সচেতন নাগরিক হিসেবে বার বার মনে হয়েছে এদের হাতে দেশ কিভাবে নিরাপদ থাকবে, আদৌ ছিল কি? ক্রমবর্ধমান উন্নতির পথ রুখতে এরা বার বার এদের সর্বশক্তি দিয়ে ব্যর্থ আঘাত হেনেছে। দুর্নীতির দায়ে অনেকেই আজ জেলে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আমাদের মূল্যবান ভোটটি তাই আবেগনির্ভর না হয়ে সচেতন নির্ভর হয়ে প্রদান করা উচিত। আসুন একটু ভাবি, কাকে সমর্থন করছেন? দেশ পরিচালনার ভার কার হাতে থাকা উচিত? শত শত নিরন্ন মানুষকে দেশে জায়গা দিয়ে নিজেদের অন্ন ভাগ করে নেয়া একজন মানুষ, যাকে পৃথিবী জানে মাদার অফ হিউম্যানিটি নামে তাঁকে নাকি এতিম শিশুর অর্থ মেরে বিলাসবহুল জীবন পার করা এবং দুর্নীতির দায়ে বর্তমানে সাজাপ্রাপ্ত একজন মানুষের কাছে? বিভিন্ন জোটের নামে বার বার ভিন্ন ভিন্ন মুখোশে এই অপশক্তিকে রুখে দেবার এখনই সময়। আমরা পেরেছি, আমরাই পারব। লেখক : চিকিৎসক ও রাজনৈতিক কর্মী
×