ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদ নির্বাচনে দশম বারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আমু-তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

 সংসদ নির্বাচনে দশম বারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আমু-তোফায়েল

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ ষাটের দশকে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ছাত্রনেতা হিসেবে ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতিতে হাতখড়ি দেয়া বিভাগের সবকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বর্ষীয়ান দুই নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতির উপদেষ্টা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি। তারা দক্ষিণাঞ্চলে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে বেশি বার জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেছে তার সবগুলোতে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ আমির হোসেন আমু মোট ১০ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। তোফায়েল আহমেদও একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ বার। বিগত নির্বাচনগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমির হোসেন আমু পাঁচ আর তোফায়েল আহমেদ সাত বার বিজয়ী হয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এই দুই নেতার জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। দলীয় সূত্রমতে, এ দুই বর্ষীয়ান নেতা ষাটের দশকে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ছাত্রনেতা হিসেবে ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতিতে হাতখড়ি দিয়েছিলেন। আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদের সমকক্ষ রাজনীতিবিদ এখন আর দক্ষিণাঞ্চলে নেই। দুজনেরই রাজনীতির সূচনা হয়েছিল বিএম কলেজের ছাত্রলীগের হাত ধরে। আমির হোসেন আমু ষাটের দশকে বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রায় একই সময়ে ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডাকসুর) ভিপি নির্বাচিত হন। আমির হোসেন আমু ১৯৭০ সালের প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বরিশাল সদর আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পরিষদেও নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালে। তখন তিনি ঝালকাঠী-২ (সদর-নলছিটি) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই আসনে ৭৯, ৮৬, ৯১ ও ৯৬ সালে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ১৯৯৮ সালে ঝালকাঠী-২ এর উপনির্বাচনে আমির হোসেন আমু এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আবারও তিনি পরাজিত হন। ২০০৮ সালে ঝালকাঠী-২ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমির হোসেন আমু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে ঝালকাঠী-২ এর পাশাপাশি বরিশালের বানারীপাড়া ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী সংসদীয় আসনে এবং ১৯৯৬ সালে ঝালকাঠী-২ এর সঙ্গে ১ আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আমির হোসেন আমু। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঝালকাঠী-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। আমির হোসেন আমু প্রসঙ্গে ঝালকাঠী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, তার মতো বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদকে নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসী গর্বিত। তাকে আবারও বিজয়ী করতে ঝালকাঠীর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ঝালকাঠী-২ আসনে মোট কেন্দ্র হলো ১৪৭। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ২০০ থেকে ২৫০ কর্মী নিয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্র কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে মাত্র ২৬ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। তিনি দ্বীপজেলা ভোলা-১ (সদর) থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। একই আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন ১৯৭৩, ’৯১, ’৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে। ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ভোলা-২ আসন থেকে। ওই আসন থেকে ৯১ ও ৯৬ সালেও বিজয়ী হন তোফায়েল আহমেদ। অর্থাৎ ওই বছরগুলোতে তিনি দুটি করে আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭৯ ও ২০০১ এর নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। তোফায়েল আহমেদ ভোলা-১ আসন থেকে একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহে মাত্র ২৬ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। আমি নির্বাচনে কখনও পরাজিত হইনি। প্রহসন করে দুইবার আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। সাতবার আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে সাতবার অংশগ্রহণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বর্তমান বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ১৯৭৩ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে স্বাধীন বাংলাদেশে বরিশাল পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। ’৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে হাসানাত আব্দুল্লাহ বরিশাল সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বরিশাল-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ’৯৬ সালে বরিশাল-১ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে চীফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রহসন করে তাকে পরাজিত দেখানো হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো বরিশাল-১ আসন থেকে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তমবারের মতো দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
×