ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিংখাতের সুশাসন নিশ্চিত করার দাবি

প্রকাশিত: ০২:০৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিংখাতের সুশাসন নিশ্চিত করার  দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংকিংখাতের সুশাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়ার দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদরা। আর এ খাতের প্রকৃত চিত্র চিহ্নিত করতে আগামী সংসদ নির্বাচনের পর নাগরিক কমিশন গঠন করবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। নাগরিক কমিটি ব্যাংকিংখাতের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরবে। শনিবার সকালে রাজধানীর একটি স্থানীয় হোটেলে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিংখাত নিয়ে আমরা কী করব’ শীর্ষক আয়োজিত সিপিডি’র এক সংলাপ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নাগরিক কমিশন ব্যাংকিং খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে। ব্যাংকিং খাত নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করা হবে। এছাড়া সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরবে এ কমিশন। তিনি বলেন, ব্যাংকিংখাত অর্থনীতির হৃৎপিন্ড। এ হৃৎপিন্ড সচল রাখতে সবাইকে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। সংলাপে দেশের আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, সাবেক ব্যাংকার ও আমলারা নানা সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের পরামর্শ দেন। তারা সবাই ব্যাংকিংখাত ঠিক রাখতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ভূমিকার আশা করেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে ব্যাংকিংখাতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। সুশাসনের অভাবে বিভিন্নভাবে লুটপাট হওয়ায় পুরো আর্থিকখাতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগামী বছর সিপিডি একটা নাগরিক কমিশন করতে চায়। কেননা আলাদা কমিশন ছাড়া এ খাতের বিপর্যয় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এজন্য সরকার উদ্যোগ না নিলে সিপিডি নিজ উদ্যোগেই তা করবে। সংলাপের মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে বলেন, গত ১০ বছরে এখাতের ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গেলো এক দশকে ব্যাংক থেকে সাড়ে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। যা পদ্মাসেতু নির্মাণ খরচের চার ভাগের তিন ভাগ। সংস্থাটির মতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল অবধি সরকারী-বেসরকারি ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলিয়ে ১৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব অর্থ খোয়া গেছে। বাড়তি খেলাপি ঋণ, যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ অনুমোদন, ঋণ দেয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, ব্যাংকারদের পেশাদারিত্বের অভাবে চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় এখন দেশের ব্যাংকিংখাত। একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের অনুমোদন, পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিকদের যুক্ত করা, পরিচালকের দুর্বৃত্তায়ন, দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ও সবশেষে ঋণ দেয়ায় সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ভঙ্গুর হচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ, নতুন ব্যাংক অনুমোদন না দেয়া, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিচারিক ব্যবস্থাসহ জরুরি ভিত্তিতে পাঁচটি ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিংখাতের অবস্থা নাজুক। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে মধ্যম আয়ের দেশের যে স্বপ্ন তা বাধাগ্রস্ত হবে। বিগত সরকার এ খাতের যে ক্ষতি করেছে তা পুষিয়ে নিতে আগামীতে কী করবে সেটি এখনই তাদের বলা উচিত। তা না হলে বিশাল এ খাতে মানুষের আস্থা ফিরবে না। অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে নেমেছে দলগুলো। অথচ ব্যাংকিংখাতের সুশাসন কিংবা স্থিতিশীলতা কীভাবে আসবে ইশতেহারে তার কোনো কিছু আমরা দেখছি না। তাদের প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। তা না হলে আগামীতে অবস্থা হবে আরও ভয়াবহ। অর্থনীতিবিদ মো. নুরুল আমীন বলেন, নির্বাচনী হলফনামায় দেশের ভিভিআইপিরা তাদের সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছেন তা দেখলে মনে হয় তারা খুবই গরিব। অথচ বাস্তবতা কি ? তাদের হলফনামার তথ্য যদি আমরা সত্য ধরে নেই তবে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের স্বপ্নতো সুদূর পরাহত! তার মতে, প্রার্থীরা যেমন সত্য তথ্য দিচ্ছেন না তেমনি ব্যাংকিং কিংবা দেশের আর্থিকখাত নিয়ে যত বুলিই আওড়ানো হোক প্রকৃত অবস্থা কিন্তু খুবই নাজুক। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সুশাসন জরুরি। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দীন, বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ প্রমুখ।
×