ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সমন্বিত চেকপোস্ট

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

সমন্বিত চেকপোস্ট

সিদ্ধান্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী বলা যায়। সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন মানেই বাণিজ্যিক ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হওয়া। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি ছাড়াও প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। এতে স্থল সীমান্ত দিয়ে পণ্য পরিবহন আরও সম্প্রসারিত হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে পণ্য রফতানির বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। একইসঙ্গে ‘কানেক্টিটিভিটি’ও বাড়বে। আর সীমান্ত অঞ্চলগুলো সমন্বিত চেকপোস্টে উন্নীত হওয়ার পরিসর গড়ে উঠবে। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে ভারত সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন করতে চাইছে। এ লক্ষ্যে চার হাজার পাঁচ শ’ কোটি রুপী বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটি। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ভারত নিজে যেমন লাভবান হবে, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোও সমভাবে উপকৃত হবে। কৌশলগত দিক থেকে ভারতের জন্য বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়বে। ভারতের ইকোনমিক টাইমস সাময়িকী বলেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ব্যবসায়িক উপস্থিতির বিপরীতে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন ভারতের জন্য সহায়ক হবে। চীন থেকে বাংলাদেশ, নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে সস্তা পণ্যের বিপুল আমদানি ভারতের জন্য একটি কৌশলগত উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। তাই ভারতের মন্ত্রিপরিষদ কমিটি এই অর্থ অনুমোদন দিচ্ছে। এই অর্থে তেরোটি স্থল শুল্কবন্দরকে সমন্বিত চেকপোস্ট বা আইসিপিতে উন্নীত করা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সাতটি সীমান্ত হিলি, ফুলবাড়ি, চ্যাংড়াবান্ধা, ঘোজাডাঙ্গা, মাহাদিপুর, সুতারকান্দি এবং কাত্তরপুইচুয়াহ পোস্টের উন্নয়ন করা হবে। এর পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে থাকা ছয়টি পোস্টও উন্নীত হতে যাচ্ছে। ভারত এরই মধ্যে ১০৯টি স্থল শুল্কবন্দরের মধ্যে সাতটিকে সমন্বিত চেকপোস্টে রূপান্তর করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে বেনাপোল-পেট্রাপোল ও আখাউড়া-আগরতলা রূপান্তর হয়েছে। স্থল সীমান্ত দিয়ে ভারতের বাণিজ্য তেরো বিলিয়ন ডলারের। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হওয়া দেশটির ৭৬৯ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের এক-দশমিক সাত শতাংশ। এর মধ্যে রফতানি হচ্ছে ১১ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের। যা ওই সময়ের মোট রফতানি ৩০৩ বিলিয়ন ডলারের তিন দশমিক সাত শতাংশ। ওই অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে মোট রফতানি করে আট দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বিপরীতে আমদানি করে ৬৮৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর মধ্যে দেশটির ৫০ শতাংশ রফতানি এবং ৭৫ শতাংশ আমদানি স্থল সীমান্ত দিয়ে হয়ে আসছে। তাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে ভারত সীমান্ত অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে চাইছে। এর ফলে নেপাল ও ভুটানের মতো ভূবেষ্টিত দেশগুলো সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পাবে। বর্তমানে সার্ক দেশগুলোতে ভারতের রফতানি ১৪ বিলিয়ন ডলারের। যা ৬১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা যায় বলে সেদেশের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিকে শীর্ষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারত। অবশ্য এটা মনে করা হয় ভারতের পক্ষ থেকে যে, সস্তা পণ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের উপস্থিতি ভারতের জন্য একটি কৌশলগত উদ্বেগের কারণ। যে দুটি স্থল বন্দরকে সমন্বিত চেকপোস্টে রূপান্তর করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশও লাভবান হতে যাচ্ছে। স্থল শুল্কবন্দরকে সমন্বিত চেকপোস্টে রূপান্তরের উদ্যোগ এরই মধ্যে ফল দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে গত অর্থবছরে ভারতের বাণিজ্য হয়েছে ১৯ হাজার কোটি রুপী। যেখানে পূর্ববর্তী বছরে ছিল ১৬ হাজার কোটি রুপী। বাংলাদেশও চায় বাণিজ্য সম্প্রসারণ। এই লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়তে পারে বলে আশাবাদী আমরা।
×