ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ গড়তে চায় ওরা

কমলা রঙের নতুন দৃশ্য, দ্রুত এগোচ্ছে নারী

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

কমলা রঙের নতুন দৃশ্য, দ্রুত এগোচ্ছে নারী

সমুদ্র হক ॥ বিশ্বজুড়ে কমলা রঙের নতুন দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ইতিহাসের শুধু পালাবদলই হয় না। ইতিহাস ফিরেও আসে। যেমন একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ফিরে আসছে কয়েক হাজার বছর আগের নারীর শক্তি। কমলা রঙের নতুন দৃশ্য সেই পাতা মেলে ধরেছে। নারী সর্বক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতায় তারা মনোসামাজিক শক্তিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সে শক্তিই এবারের আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষে প্রতিপাদ্য তৈরি করে লিখিত হয়েছে ‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড -হিয়ার মি টু’। এর ওপর ভিত্তি করে দেশে দেশে স্লোগান উঠেছে ‘নারীর কথা শুনবে বিশ্ব : কমলা রঙে নতুন দৃশ্য।’ এই প্রতিরোধ পক্ষের ক্যাম্পেন শেষ হচ্ছে আজ ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের দিনে। বলা হয়, নারী ও মেয়েশিশুর প্রতি জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন। বগুড়ায় পাঁচ শ’রও বেশি তরুণী কমলা রঙের পোশাক পরে বাইসাইকেল চালিয়ে নগরীর কয়েক কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ করে ‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড...’ গড়ার বার্তা পৌঁছে দেয়। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তামান্না মেধা বলল, আমি নারী, কমলা পোশাক পরে শুধু বাংলাদেশের নই। নারীর এগিয়ে চলার বিশ্বের নারী হয়ে অধিকার নিয়ে লড়তে এসেছি। এক তরুণীর কণ্ঠই বিশ্বের কোটি তরুণীর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। নারী উন্নয়ন কর্মী নিভা রানী বললেন, বিশ^জুড়ে হ্যাশট্যাগ-মি টু ক্যাম্পেনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের নারী-পুরুষ সামাজিক মাধ্যমে যৌন হয়রানির কথাগুলো তুলে ধরেছেন। নির্যাতকদের পরিচয় প্রকাশের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন। এতদিন সহিংসতার শিকার অধিকাংশ নারী নির্যাতনের কথাগুলো তুলে ধরতে সাহস পেত না। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ বললেও পুরুষ শাসিত সমাজে কথাগুলো চাপা পড়ে যেত বা চাপা দেয়া হতো। কমলা রঙের নতুন দৃশ্য প্রতীকী হয়ে সহিংসতা ও নির্যাতনের অনুচ্চারিত কথাগুলো ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনিত হয়ে এগিয়ে এসেছে। কমলা রঙের প্রতীকী কাজ করছেন আস্থা প্রকল্পের বগুড়ার প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোখলেছুর রহমান পিন্টু। বললেন, সহিংসতার শিকার নারীরা যেন নির্যাতনের কথাগুলো সাহস নিয়ে বলতে পারে এবং সাধারণ মানুষ ও নীতি নির্ধারকরা যেনে তাদের কথা শুনে প্রতিরোধে এগিয়ে আসে সেই আহ্বানে পালিত হয়েছে এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। আস্থা নারী নির্যাতন রোধে সরকার যে কাজগুলো করছে তা জানিয়ে দিয়ে নির্যাতিত নারীদের সহযোগিতা দিতে বগুড়ার তিনটি উপজেলার ২৩ ইউনিয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বিবাহিত নারীর মধ্যে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয় ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। এর মধ্যে মানসিক নির্যাতনের হার বেশি। ২৮ দশমিক ২ শতাংশ নারী যে কোন পুরুষের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ কিশোরী যে কোন পুরুষের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একই জরিপের আরেক অংশে বলা হয়েছে, দেশে অর্ধেকেরও বেশি নারী এক বছরের মধ্যে একবার কোন না কোনভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ায় এবং নারী শক্তি জেগে ওঠায় এই হার কমে আসছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের ৫ নম্বর পয়েন্টেই আছে লিঙ্গ সমতা। এর সঙ্গে নারী নির্যাতনের সহিংসতা প্রতিরোধে দেশগুলোকে সুশাসন, সুবিচারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশও এসডিজি অর্জনের এই ধাপ দ্রুত পার করছে। এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্ত্তী জানালেন, নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে বগুড়ার প্রতিটি থানায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নারীরা দিনে দিনে জেগে উঠছে। ইতিহাস বলে, পৃথিবীর শুরুটা ছিল নারী ক্ষমতায়নের। নারী ছিল শাসক। নারী ফসল ফলাত। নারী ছিল ভূমির মালিক। পুরুষ যখন দেখল নারী সন্তান ও ফসল দুই-ই উৎপাদন করে তখন ভূমির মালিকানা, সন্তান, ফসল নিজের করে নিতে নারীকে বন্দী করে। সেই যে নারী বন্দী হয়ে নির্যাতিত হলো তার ধারাবাহিকতা আজও বয়ে বেড়াচ্ছে তারা। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিতে নারী শক্তিশালী হয়ে এগিয়ে আসছে ‘অরেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড -হিয়ার টু মি’ নিয়ে কমলা রঙের নতুন দৃশ্যে।
×