ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যারিবীয়দের হার ৫ উইকেটে

ওয়ানডেতেও দারুণ জয়ে শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

 ওয়ানডেতেও দারুণ জয়ে শুরু বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ মাশরাফি বিন মর্তুজার মাইলফলকের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সহজেই হারাল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট সিরিজে পাত্তাই দেয়নি। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও অনায়াসে জিতল বাংলাদেশ। রবিবার প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারাল মাশরাফিবাহিনী। তাতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল। মঙ্গলবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতলেই সিরিজ জয় হয়ে যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেই প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলার মাইলফলকে পা দিলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি। এমন ম্যাচে অসাধারণ বোলিংও করলেন। ১০ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন। শুরুতে তার অসাধারণ বোলিংয়ের সঙ্গে শেষে ৩ উইকেট নেয়া মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ১৯৫ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে মুশফিকুর রহীমের অপরাজিত ৫৫ রানের সঙ্গে লিটন কুমার দাসের ৪১ ও সাকিব আল হাসানের ৩০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৫.১ ওভারে ১৯৬ রান করে জিতে বাংলাদেশ। প্রায় ১৫ ওভার আগেই ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজ এটি। সেই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশই বাজিমাত করল। তামিম ও সাকিব ফিরেছেন। তাতে করে স্বাভাবিকভাবেই একাদশ থেকে দুইজন বাদ পড়া নিশ্চিত হয়ে যায়। রুবেলও ফিরেছেন। তাই আরেকজনের বাদ নিশ্চিত হয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে মুস্তাফিজ ও মিরাজ খেলেননি। এই দুইজন একাদশে যোগ হওয়া মানে আরও দুইজনের একাদশ থেকে বাদ পড়া। তাই হয়েছে। সর্বশেষ ওয়ানডে থেকে একাদশে পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে নেমেছে বাংলাদেশ। তামিম, সাকিব, রুবেল, মুস্তাফিজ, মিরাজ যোগ হয়েছেন। মিঠুন, আরিফুল, অপু, সাইফউদ্দিন ও আবু হায়দার রনি বাদ পড়েছেন। অসাধারণ একাদশ হয়েছে। শক্তিশালী একাদশ মিলেছে। দলে আট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান থাকেন। দুই স্পিনার ও তিন পেসারের দল নিয়ে নামে বাংলাদেশ। উইকেট যেমনই থাকুক, তাতে বাংলাদেশই ফেবারিট। এমনই একাদশ গড়া হয়েছে। সেই একাদশ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কাতও করেছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিবারাত্রির ম্যাচটিতে টস হেরে যায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। শিশিরে কৃত্রিম আলোয় বোলারদের অসুবিধা হবে। তা জেনেও আগে ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদি বড় স্কোর গড়া যায়, শিশিরের সুবিধা নিয়ে পেসারদের নৈপুণ্যে ম্যাচ জয়ও মিলতে পারে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের সুবিধাই হয়েছে। একাদশে যে ব্যাটসম্যান মজবুতই ছিল। বোলাররা যে কাজ করে দিয়েছেন, তাতে ব্যাটসম্যানদেরতো চাপে পড়ার সুযোগই ছিল না। স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে পেরেছেন ব্যাটসম্যানরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৫ রানের বেশি করতে পারেনি। এত গভীর ব্যাটিং একাদশ নিয়ে নামায় এই রানওতো বাংলাদেশের সামনে কম হয়েই ধরা দিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই চাপ প্রয়োগও করতে পারেনি। একাদশে চার ওপেনার থাকে। তামিমের সঙ্গে ইমরুল, লিটন না সৌম্য ওপেনিং করবেন, সেদিকেই সবার নজর থাকে। শেষ পর্যন্ত ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী হন লিটন। তামিম বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। ১২ রান করতেই আউট হয়ে যান। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজে তিন ম্যাচের দুটিতেই সেঞ্চুরি করা ইমরুলও ওয়ানডাউনে নেমে কিছুই করতে পারেননি। ৪ রান করতেই বোল্ড হয়ে যান। ৪২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তাতে চাপেও পড়ে। শিশিরের জন্য পেসারদের বলগুলো খেলাই কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর লিটন ও মুশফিক এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে ৮৯ রানে নিয়েও যান। এমন সময় বোল্ড হয়ে যান একবার ‘নো’ হওয়াতে ‘নতুন জীবন’ পাওয়া লিটন (৪১)। আউট হওয়ার আগে দলকে একটু চাপমুক্তও করেন। দুইজনের জুটি ৪৭ রানেই থেমে যায়। লিটন আউটের পর মুশফিক-সাকিব মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। আর ৪ রান হলে ১৫০ রানেও যেত দল। কিন্তু দলের যখন ১৪৬ রান হয় তখন সাকিব (৩০) আউট হয়ে যান। মুশফিক-সাকিবের ৫৭ রানের জুটি হয়। মুশফিক উইকেট আঁকড়ে থাকেন। আরেকদিকে সৌম্য ব্যাট হাতে নেমেই বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। সৌম্যের ২ চার ও ১ ছক্কায় মুহূর্তেই দল ১৮০ রানের কাছাকাছি চলে যায়। দল ১৭৫ রানে যেতেই সৌম্য (১৯) স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন। উইকেট যেতে থাকে ঠিক। তবে রান দরকার থাকে ২১। তাই চাপ তৈরি হয়নি। মুশফিক যে অনায়াসে ব্যাটিং করছিলেন। দেখতে দেখতে ৫৯ বলে ৫০ রানও স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলেন মুশফিক। শেষে বিশুর বলে দুই রান নিয়ে ম্যাচ জেতান মুশফিক। তিনি ৫৫ রানে ও মাহমুদুল্লাহ ১৪ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়েন। ৮৯ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিপদেই পড়ে থাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরুতেই খাদের কিনারায় পড়ে যায়। ১০০ রান করতেই ৩০ ওভার খেলতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ১২৭ রানে আবার ৬ উইকেটও হারায়। কাইরন (১০), ব্রাভো (১৯), হোপ (৪৩), হেটমায়ার (৬), রোভম্যান (১৪), স্যামুয়েলসের (২৫) মতো ব্যাটসম্যানরা আউট হয়ে যান। তখন মনে হয়েছিল, ১৮০ রানও করতে পারবে না ক্যারিবীয়রা। টপাটপ যে উইকেট পড়ছিল। প্রথম ৬ উইকেটের তিনটিই মাশরাফি তুলে নেন। যখনই দুইবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া ব্রাভো, হোপ ও অধিনায়ক রোভম্যান মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, তাদের সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। মাইলফলকের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের মাজা ভেঙ্গে দেন শুরুতেই। কিন্তু এরপরই খানিক ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সপ্তম উইকেটে গিয়ে চেস ও পল মিলেই একটু উইকেটে থিতু হয়ে যান। দুইজন মিলে ৫১ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। এই দুইজনই দলের স্কোরবোর্ড বাড়িয়ে দেন। দুইজন মিলে দলকে ১৭৮ রানে নিয়ে যান। এমন সময় চেসকে (৩২) আউট করে দেন মুস্তাফিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরে আবার লাগাম টানা যায়। পল ও রোচ মিলে এগিয়ে যেতে চাইলেও মুস্তাফিজ তা করতে দেননি। পলকেও (৩৬) দলের ১৯৪ রানের সময় আউট করে দেন মুস্তাফিজ। আর ১ রান হতেই বিশুকেও সাজঘরের পথ দেখান। শেষ পর্যন্ত এই রানেই আটকে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোচ ৫ রানে অপরাজিত থাকেন। টেস্টের সঙ্গে ওয়ানডের কি পার্থক্যই না দেখার মিলে। টেস্টে স্পিনাররা আধিপত্য দেখান। ওয়ানডেতে পেসাররা দাপট দেখান। টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ডোবান স্পিনাররাই। প্রথম ওয়ানডেতে পেসাররাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৭ উইকেট তুলে নেন। স্পিনারদের মধ্যে সাকিব ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। মাশরাফি ও মুস্তাফিজ ৩টি করে উইকেট তুলে নেন। রুবেল নেন ১ উইকেট। তবে বোলিংয়ের শুরুটা স্পিন দিয়েই করে বাংলাদেশ। কিন্তু বাজিমাত করেন পেসাররা। পেসারদের দাপটে বিশেষ করে মাশরাফি ও মুস্তাফিজের তোপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এত অল্প রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে যে সহজেই জিতে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ওয়ানডেতে একরকম উড়িয়েই দেয় বাংলাদেশ।
×