ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ নাসিরুল আলম চৌধুরী

অভিমত ॥ অঘোষিত এক ইশতেহার এবং...

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

অভিমত ॥ অঘোষিত এক ইশতেহার এবং...

ইশতেহারে সব সত্য প্রকাশ পায় না, বুঝে নিতে হয়। তার ওপর সব সম্ভবের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। টাকা আত্মসাতের মামলায় যখন এরশাদকে সাজা দেয়া হয় তখন ড. কামাল হোসেন টাকা আত্মসাতকে গরু চুরির সঙ্গে তুলনা করে এরশাদকে দেয়া সাজার যথার্থতা নিরূপণ করেন। অথচ একই অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উপদেষ্টা তিনি। যিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একমাত্র ধারক এবং বাহক মনে করেন, সেই ড. কামাল হোসেন আজ তার দলসহ যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে আবদ্ধ। আমাদের এখনকার সময়ের রাজনীতিবিদরা হয়ত সত্যিই বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কোন কথা নেই।’ অর্থাৎ আমি যা বলি তা করি না, যা করি তা বলি না। একজন সিঁধেল চোরও নিজেকে মিথ্যাবাদী বলতে লজ্জা পায়, আমাদের রাজনীতিবিদরা পান না। এদেশে আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি দেখেছি। সে সময় রাজনীতিতে চালু ছিল, ‘রাজনীতিতে আপোস বলে কোন কথা নেই।’ আজ নিজেকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে, আমরা কি আজও সেই জাতিই আছি, যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশের জন্য হাসতে হাসতে জীবন দিতে পারতাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্ট তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে। ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই এই ইশতেহার। যে জোট কোন নীতি নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে না, তাদের ইশতেহারে বাস্তবতার ছোয়া কতটুকু থাকতে পারে? ঐক্যফ্রন্টে সম্পৃক্ত হওয়া দলগুলোর নেতাদের রাজনৈতিক চরিত্র বিবেচনায় তাদের সম্ভাব্য ইশতেহার কি হতে পারে সেটাই বিশ্লেষণের মাধ্যমে সেই বাস্তবতাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ড. কামাল হোসেনসহ যুক্তফ্রন্ট থেকে আগত ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানেন, বিএনপি সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারুক বা না পারুক তাদের নিজেদের নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা কম। তাই বিএনপি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তাদের কোন লাভ নেই। বরং বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে পারলেই তাদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশ দলীয় জোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নির্বাচন যদি স্থগিত করা যায় তাহলে ওয়ান ইলেভেনের মতো আর একটি সরকার আসার পথ তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তাই বিএনপিকে নির্বাচিত করে সরকারে আনতে এই জোট গঠিত হয়নি। তারা এটা জানেন বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পারলেও তারা হয়ত সরকারের বাইরেই থাকবেন। কারণ সরকার গঠন করতে পারলে বিএনপি কোন প্রতিশ্রুতির ধার ধারবে না। নির্বাচন পরবর্তীতে হয়ত আরও বড় চমক অপেক্ষায় আছে। সম্ভাব্য বড় চমকটি হয়ত ড. কামাল হোসেনই দেখাবেন। তার কৃপায় আজ রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধা একই প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে। তিনি নিজে কিন্তু নির্বাচনের বাইরে। অসুস্থতার অজুহাতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসেন। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কি করে নিজের সঠিক অবস্থান ধরে রাখতে হয় ড. কামাল সেটা ভালই জানেন। তিনি জানেন তার নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা নেই। আর নির্বাচিত হয়ে আসতে পারলেও নির্বাচিত বিএনপি তাকে কতটুকু মূল্যায়ন করবে সেটাও তিনি জানেন। তিনি তো রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর বিদায় নেয়া দেখেছেন। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ড. কামাল হোসেন অন্তত বিএনপির গায়ে হালাল রাজনীতির একটি তক্মা লাগাতে তো পেরেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারলে হয়ত তার অপূরণীয় স্বপ্ন পূরণের একটা সুযোগ আসতেও পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন করা হয় ঐক্যফ্রন্ট। লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের হাত থেকে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা। জোট নেতা ড. কামাল হোসেনকে বলি, তিনি কি ২০০১ সালের ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচনের মাধ্যমে অনির্বাচিত আবার বলছি অনির্বাচিত বিএনপি সরকারের শাসনামল দেখেননি? তিনি সেই সরকারের শাসনামলকে বর্তমান সরকারের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছেন কি? না কি তিনি ভুলে গেছেন বিভীষিকাময় সেই দিনগুলো। দেশবাসী কিন্তু সেই বিভীষিকা আজও ভুলতে পারেনি। তারা ভুলতে পারেনি নারকীয় ২১ আগস্ট। তারা এখনও আঁতকে ওঠে দেশ কাঁপানো ১৭ আগস্টকে স্মরণ করে। অন্য দেশের রাষ্ট্রদূতও রেহাই পায়নি তাদের সন্ত্রাস থেকে। ড. কামাল হোসেন কি ভুলে গেলেন সে সময় ঢাকায় কারফিউ দিয়ে সার্ক সম্মেলন করতে হয়েছিল। দেশবাসী ভুলতে পারেনি রাতের অন্ধকারে রোকেয়া হলে পুলিশ ও ছাত্রদলের যৌথ সহিংস অভিযান। তখন কিন্তু ড. কামাল হোসেনরা নীরব দর্শক ছিলেন। হাওয়া ভবনের অভিশাপ থেকে দেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। আজ সততায়, দক্ষতায়, দেশপ্রেমে, মানুষের প্রতি ভালবাসায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে সকল সফল রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের মাঝে সর্বোচ্চ অবস্থানে। বিশ্বে তাঁর পরিচয় গড়ঃযবৎ ড়ভ ঐঁসধহরঃু। তাকেই আমরা নেতা মানি। আমাদের নেতৃত্ব নীতিহীন কারও হাতে তুলে দেবেন না। পিতা দিলেন স্বাধীনতা, কন্যা মুক্তির পথ দেখালেন। দোহাই আপনাদের আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে থামিয়ে দেবেন না। আসুন দেশবাসী সবাই বলি-ঞযধহশ ণড়ঁ চগ.
×