ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শুরুতেই ভোটের প্রচারে উত্তাল রাজশাহী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

শুরুতেই ভোটের প্রচারে উত্তাল রাজশাহী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পৌষ মাস আসতে আর কদিন বাকি। এরই মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা কমলেও বাড়তে শুরু করেছে ভোটের উত্তাপ। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু হয়েছে রাজশাহীর সর্বত্র। প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রার্থীরা সর্বশক্তি নিয়ে নেমে পড়েছেন মাঠে। শহরের রাজপথ থেকে শুরু করে গ্রামের অলিগলি সর্বত্র এখন ভোটের উৎসব। সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। এরইমধ্যে পোস্টারে ছেয়ে গেছে শহর, বন্দর, গ্রামের পাড়া-মহল্লা। আগে থেকেই প্রস্তত করা পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে ভরে গেছে সর্বত্র। বিশেষ করে প্রধান দুটি দলের পরিচিত প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষের ছবি সংবলিত পোস্টার শোভা পাচ্ছে সর্বত্র। দুপুরের পর থেকেই মাইকের আওয়াজ ছুয়েছে ভোটারদের কানে কানে। সব দলের সক্রিয় অংশ গ্রহণে একাদশ নির্বাচনের পরিবেশ এখন সর্বত্র উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে। কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ভোটের উৎসবে শামিল হয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলছে শুধু ভোটের গল্প। প্রার্থীদের মাইকের আওয়াজে গানের সুর পৌঁছে গেছে সবার মনে। রাজশাহী মহানগর ছাড়াও জেলার ৬ টি সংসদীয় আসনের সর্বত্র এখন ভোটের প্রচার। প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে নেমে পড়েছেন সর্বশক্তি নিয়ে। সব নির্বাচনী এলাকা তাই এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে ভোটারের মন। রাজশাহী নগরীতে সকাল থেকেই লক্ষ্য করা গেছে শক্তিশালী প্রধান দুই দলের দুই প্রার্থীর পোস্টার। মহাজোট মনোনীত ফজলে হোসেন বাদশার নৌকা আর ঐক্যফ্রন্টের মিজানুর রহমান মিনুর ধানের শীষের পোস্টার। নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সকাল থেকেই পৃথকভাবে মাঠে গণসংযোগে নেমেছেন বাদশা ও মিনু। সকালে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামেন মহাজোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। তার সঙ্গে ছিলেন ১৪ দলের নেতাকর্মীরা। রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী একসঙ্গে নৌকার পক্ষে প্রচারে নামেন। ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, জনগণ উন্নয়ন চায়। তারা উন্নয়নের সঙ্গে থাকতে চায়। এ জন্য নির্বাচনে নৌকার বিজয় হবে। বিএনপির প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাদশা বলেন, তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা এখনও ঠিক নেই। সুতরাং এমন ছন্নছাড়া দলের প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবার কোন কারণ নেই। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেছে। এ থেকে বিচ্যুতি হওয়া যাবে না। যদি হয় তবে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু হতে পারে না। আর জামায়াত-শিবির ছাড়া বিএনপি চলতে পারে না। জনগণ জামায়াত-শিবিরকে প্রত্যাখ্যান করবে, বিএনপিকেও প্রত্যাখ্যান করবে। রাজশাহী-১ আসনের গোদাগাড়ীর গোগ্রাম থেকে ভোটের প্রচার শুরু করেছেন এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হক প্রচার শুরু করেছেন। রাজশাহী-৩ আসনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আয়েন উদ্দিন মাঠ নেমেছেন বিপুল নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে। জেলার মোহনপুর থেকে তিনি ভোটের প্রচার শুরু করেন। রাজশাহী-৪ আসনে শুরুতেই পোস্টার, ব্যানারে এলাকা ভরে দিয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী প্রকৌশলী এনামুল হক। এ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু হেনার পোস্টার চোখে পড়েনি শুরুর দিন। রাজশাহী-৫ আসনেও প্রধান দুই দলের দুই প্রার্থী নেমেছেন ভোটের মাঠে। শুরুতেই রাজশাহী-৬ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমে পক্ষে ঝড় উঠেছে নির্বাচনী এলাকার বাঘা-চারঘাটে। এ দুটি উপজেলার সর্বত্র শাহরিয়ার আলমের নৌকা প্রতীক শোভা পাচ্ছে। শুরু হয়েছে মাইকিং। প্রথম দিনেই শাহরিয়ার আলমের পক্ষে দুই উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা থেকে মিছিল বের করে ভোটের বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়। রাজশাহীর সব আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরাও নেমেছেন ভোটের মাঠে। তবে আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকায় তাদের পোস্টার এখনও তেমন দেখা মেলেনি। আর আগাম প্রস্তত থাকায় ভোটের মাঠে অগ্রসর হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। প্রধান দুই দল ছাড়াও রাজশাহীর বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী থাকলেও তাদের প্রচার চোখে পড়েনি প্রথম দিন। এখন রাজশাহীর ভোটের মাঠ উদ্বেলিত শুরু নৌকা আর ধানের শীষে। নির্বাচনী প্রচার শুরুর দিন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সর্বত্র ভোটের আমেজ। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটের প্রচার বার্তা পৌঁছে গেছে। তাদের হাতে হাতে পৌঁছেছে প্রার্থীদের লিফলেট, পোস্টার। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এখন ভোটের আনন্দ চলছে সবখানে। এমন উৎসব শেষ পর্যন্ত দেখতে চান তারা।
×