ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেরেবাংলায় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে আজ

বাংলাদেশের লক্ষ্য জয়, ক্যারিবীয়রা চায় সমতা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের লক্ষ্য জয়, ক্যারিবীয়রা চায় সমতা

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সহজেই জিতেছে বাংলাদেশ। আজ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ১টায় ম্যাচটি শুরু হবে। এই ম্যাচটিতে জিতলেই সিরিজ জিতে নেবে বাংলাদেশ। ২-০ তে সিরিজ জয় হয়ে যাবে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জয় করবে বাংলাদেশ। আর হারলে সিরিজে আসবে সমতা। ১-১ হয়ে যাবে সিরিজ। তখন শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে সিরিজের ফয়সালা হবে। সবারই আশা, আজই সিরিজ জয় হয়ে যাক বাংলাদেশের। আজই কী ২-০ হবে, না ১-১ হবে? বাংলাদেশের লক্ষ্য এবার শুধু সিরিজ জয়ে আবদ্ধ নয়। লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা। সেই সুযোগ একবারই কাজে লাগাতে পেরেছে বাংলাদেশ ২০০৯ সালে। সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ছিল। ৩-০ ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু দেশের মাটিতে এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা হয়নি। তা করতে হলে আগে সিরিজ জয়টি আজই নিশ্চিত করতে হবে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে হবে, সবাইকে আবার প্রস্তুত হতে হবে। দ্বিতীয় ম্যাচটা যেন সেইম এফরড দিয়ে আমরা খেলতে পারি।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। সেই থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার সিরিজে হারানো গেছে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে একবার জিতেছে। আরেকবার ২০১২ সালে দেশের মাটিতে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালেই দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার ছয় বছর পর আবার দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে নেমে প্রথম ওয়ানডেতেই বাজিমাত করেছে মাশরাফি বাহিনী। প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে জিতে গেছে বাংলাদেশ। নয় বছর আগে, ২০০৯ সালের আগ পর্র্যন্ত তো কখনোই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০ ছাড়া অন্য ফরমেটের ক্রিকেটে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে যে টেস্ট, ওয়ানডেতে জেতা শুরু হলো, এরপর বাংলাদেশ অনেক ম্যাচ জিতেছে। এবার তো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েই চলেছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে ৬৪ রানে জেতার পর দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৮৪ রানের বড় ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোন দলকে ইনিংস ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতেও জিতে গেছে বাংলাদেশ। টানা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েই চলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এর আগে ৮ বার ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। তিনবার জেতার বিপরীতে পাঁচবার হেরেছে। তবে সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশেরই জয় হয়েছে। দুই দলের মধ্যকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে এবং বাংলাদেশের মাটিতে সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশই জিতেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ২৬ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। ১০ ওয়ানডেতে জিতেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ১৫ ওয়ানডেতে। একটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। তবে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত যে বাংলাদেশ কখনোই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ানডে জিততে পারেনি, এখন চিত্র পাল্টে গেছে। ২০০৯ সাল থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৮ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। ১০টিতেই জিতে বাংলাদেশ। হারে ৮টিতে। সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশেরই জেতার সংখ্যা বেশি। আজ যদি বাংলাদেশ জিতে, তাহলে চারবার সিরিজ জেতার সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১ ওয়ানডে জয় হয়ে যাবে। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এমন সময়ে বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসল, যখন দেশের মাটিতে ওয়ানডেতে ভয়ঙ্কর দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। টেস্টেই বাংলাদেশের বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডেতে তাহলে কী হবে? সেই আলামত প্রথম ওয়ানডেতে মিলেও গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনেক চেষ্টা করেও ১৯৫ রানের বেশি করতে পারেনি। হেরেছেও প্রায় ১৫ ওভার হাতে থেকে ৫ উইকেটে। তবে প্রথম ওয়ানডে থেকে একটু শঙ্কাও যুক্ত হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অল্প রান স্কোরবোর্ডে জমা করে। তা করতেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। যদি বেশি রান করে ফেলত, তাহলে বিপদেও পড়তে পারত বাংলাদেশ। সঙ্গে অনেকগুলো ক্যাচও মিস হয়েছে। মাশরাফি অবশ্য বিষয়টিকে অন্যভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। ২০০’র নিচে রান, পাঁচ উইকেট হারানো। এমন কথা ওঠাতেই মাশরাফি জানান, ‘উইকেট আসলে এমনই। এখানে লো স্কোরিং ম্যাচগুলো এমনই হয়। মুশফিক খুব ভাল ব্যাটিং করেছে। লিটনও টপে ভাল ব্যাটিং করেছে, সেইম টাইম আমার মনে হয় সাকিবের ইনিংসটাও ইম্পরট্যান্ট ছিল। বিশেষ করে ওই সময় ৩০টা রান, ৯০ থেকে ১৩০ এর মধ্যে কিছু রান খুব কাজ করেছে, এটাও অনেক হেল্প করেছে।’ সঙ্গে ক্যাচ ছাড়া নিয়ে বলেছেন, ‘জেতার পর আসলে এগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি একটু কম হয়। অবশ্যই উইকনেস, আমাদের ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাটিংয়ে হয়তো বা ৫টা উইকেট গিয়েছে, আমরা হয়তো ৩টা উইকেটে শেষ করতে পারতাম, যেহেতু রানের চাপ ছিল না। ব্যাটসম্যানদের জন্যও ভাল হতো নটআউট থাকলে। কিন্তু এইগুলো খেলার অংশ।’ প্রথম ওয়ানডের আগে মাশরাফি বলেছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসলে, মাসল পাওয়ার তাদের অনেক বেশি। এই ধরনের ফরম্যাটে একজন দুইজন কিন্তু গেইম চেঞ্জ করে, রিসেল্টলি। এই জায়গাটায় ওদের কয়েকজন আছে এমন, ধ্বংস করতে পারে। আমাদের ওদের বিপক্ষে এই পার্টটা খেয়াল রাখা ইম্পরট্যান্ট। ওদের জন্য ফরম্যাট যত ছোট হবে, তত বেশি স্যুট করবে। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে উইন্ডিজ মাশল ইউজ করতে পারেনি। বাংলাদেশের বোলিং ভাল হওয়াতেই তা করতে পারেনি। মাশরাফি এ নিয়ে জানান, ‘দুইটাই আমার মনে হয়। ওরা চেষ্টা করেনি তা না, চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যখনই চেষ্টা করেছে তখনই আউট হয়েছে। বোলারদের ক্রেডিট দিতে হয়। মিরপুরের উইকেট যেটা বললাম ক্রমাগত শটস খেলা কঠিন। আনলেস, আনটিল একেবারে সেট না হওয়া পর্যন্ত। আমার মনে হয় বোলাররা ভাল জায়গায় বল করতে পেরেছে।’ আজও একই রকম হলেই হয়। তাহলেই ২-০ হয়ে যেতে পারে। আর তা না হলেই ১-১ হয়ে যাবে। দেখা যাক শেষপর্যন্ত আজই ২-০ হয়ে যায়, নাকি ১-১ সমতা আসে।
×