ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ এবার জনগণের বন্ধু ও সেবক

পুলিশের সেবা পেতে শীঘ্রই ১-০-০ শর্টকোড নাম্বার

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

পুলিশের সেবা পেতে শীঘ্রই ১-০-০ শর্টকোড নাম্বার

তপন বিশ্বাস ॥ পুলিশকে জনগণের বন্ধু ও সেবক হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমানো, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশী সেবা প্রদান, নিরাপত্তা এবং সেবা সাধারণের জন্য নিশ্চিত করতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পুলিশ টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের আওতায় ইমার্জেন্সি কল ডেসপাস সেন্টারে জনবল বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পুলিশ টেলিকম ও ইনফরমেশন কল ডেসপাস সেন্টারের সেবা বর্তমানে পুলিশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। শীঘ্রই এই সেবা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এই কল সেন্টার শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিটিআরসি পুলিশের সেবার জন্য শর্টকোড নম্বর ১-০-০ বরাদ্দ দিয়েছে। সূত্র জানায়, ১-০-০ কোড ব্যবহার করে ছোট একটি পুলিশ টিম আট ঘণ্টায় ৪৫০ থেকে ৫০০টি কল রিসিভ করে সেবা প্রদান করছে। তবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী একটি কল সেন্টারে একজন এজেন্ট আট ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দেড়শ’টি কল রিসিভ এবং মান সম্পন্ন সেবা প্রদান করতে পারেন। এই সেন্টারে আরো জনবল নিয়োগ দিয়ে জনগণকে উপযুক্ত সেবা দেয়া হলে একদিকে যেমন অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যাবে তেমনি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। এই ইমার্জেন্সি কল সেন্টারের জন্য নতুন করে ২শ’ জনবলের পদ সৃষ্টি এবং তিনটি যানবাহন কেনার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। যে কোন মোবাইল অপারেটর এবং টেলিফোন নম্বর থেকে ১-০-০ ডায়েল করলে একজন হেল্পডেস্ক এক্সিকিউটিভ এজেন্ট অথবা কল টেকার কল রিসিভ করবেন। নাগরিক সমস্যা শোনার পর তিনি একটি নির্দিষ্ট কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) ব্যবহার করে অভিযোগকারীকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করবেন। সিএমএস হলে এমন এক ধরনের সিস্টেম যেখানে আগে থেকেই বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে করণীয় সম্পর্কে নির্দিষ্ট কনটেন্ট প্রস্তুত করা থাকবে। প্রতিটি অভিযোগ জিডি আকারে গ্রহণ করা হবে। নির্দিষ্ট জিডির বিপরীতে সিআরএম (কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্টে) সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বংক্রিয়ভাবে একটি টিকেট উন্মুক্ত হবে। একজন হেল্পডেস্ক এক্সিকিউটিভ, কল এজেন্ট, কল টেকার জনসাধারণের কাছ থেকে কল রিসিভের পর নাগরিককে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা দেয়ার জন্য কলটি সিআরএম সফটওয়্যারের মাধ্যমে জেলা, থানা, অফিসার ইনচার্জ, ডিউটি অফিসারকে মোবাইল অথবা ল্যান্ডফোনে কলটি ফরওয়ার্ড, রি-ডাইরেক্ট অথবা কল কনফারেন্সের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান কর ওই কল সেন্টার হেল্প ডেস্ক থেকে তা অভিযোগকারীকে জানিয়ে দেয়া হবে। একটি ডেটাবেজ তৈরি করে সেখানে দেশেন সব থানা, অফিসার ইনচার্জ, ডিউটি অফিসারের মোবাইল ও ল্যান্ডফোন নম্বার থাকবে। হেল্প ডেস্কে মনিটরিং ডাসবোর্ডে অনুমোদিত পুলিশ কর্মকর্তারা লগ ইন করে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের তাৎক্ষণিক রিপোর্ট জেনারেট করতে পারবে। যেমন পুলিশের কাছে মানুষ কি ধরনের সেবা চাচ্ছে, কোন সেবার ক্ষেত্রে পুলিশ কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, কোন কোন মামলার সমাধান হয়েছে এবং কোন কোন মামলা পেন্ডিং রয়েছে তা জানা যাবে। দেশের কোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন, কোন অঞ্চলের মানুষ হেল্পডেস্কে ফোন বেশি করছেন, কোন অঞ্চলে কি ধরনের সমস্যা বেশি ইত্যাদি সর্বশেষ তথ্যও পাওয়া যাবে এই সেন্টারে। এর ফলে পুলিশের কার্যক্রম ব্যাপ্তি, সুযোগ, দুর্বলতা, ইত্যাদি নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দিক নির্দেশনামূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। ভবিষ্যত রেফারেন্স, মামলার এভিডেন্স ইত্যাদির জন্য প্রতিটি কল একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেকর্ড অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে। এই তথ্য একটি শক্তিশালী সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে। কোর্ট অর্ডার বা ভবিষ্যতের প্রয়োজনে এই রেকর্ড কাজে লাগানো সম্ভব হবে। ফলে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশের সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে। জনহিতকর এই পুলিশী সেবার জন্য পুলিশ টেলিকমের আওতায় ইমার্জেন্সি কলসেন্টারে ২০০ নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তিনটি যানবাহনও কেনা হবে। তার মধ্যে একটি মিনিবাস এবং দু’টি মোটরসাইকেল কেনা হবে। ওই সেন্টারে একজন এএসপি নিয়োগ দেয়া হবে। তিন এএসপি যাদের টেলিকম অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হবে। ৬ পরিদর্শক যাদের সহকারী টেলিকম অফিসার পদে নিয়োগ দেয়া হবে। দুন এসআই যাদের টেলিকম টেকনিশিয়ান (অপারেশন) পদে নিয়োগ দেয়া হবে। অপর দুইজন এসআই যাদের টেলিকম টেকনিশিয়ান (মেনটেন্যান্স) পদে নিয়োগ দেয়া হবে। ১০ এএসআই যাদের সহকারী টেলিকম টেকনিশিয়ান (অপারেশন) পদে নিয়োগ দেয়া হবে। ১৩ এএসআই সহকারী টেলিকম টেকনিশিয়ান (মেনটেন্যান্স) পদে নিয়োগ দেয়া হবে। ১৬০ কনস্টেবল এবং ২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী এই সেলে নিয়োগ দেয়া হবে। বিষয়টি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×