ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার কলকাতা-বাংলাদেশ-শিলিগুড়ি রেললাইন

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

এবার কলকাতা-বাংলাদেশ-শিলিগুড়ি রেললাইন

অর্থনৈতিক রিপোটার ॥ পড়শি দেশের মধ্যে দিয়েই এবার রেলপথে জুড়বে কলকাতা-শিলিগুড়ি। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রেন চলবে দুই শহরের মধ্যে। সেই মতো সীমান্ত পেরিয়ে দু’দেশের মধ্যে রেলপথ গড়ে উঠবে খুব শীঘ্রই। রেল সূত্রে তেমনটাই জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কাজ শুরু করে দিয়েছে ভারতও। ২০২১ সালের মধ্যে রেললাইন বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা রেল কর্তৃপক্ষের। মূলত দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেই ওই রেলপথ জোড়া হচ্ছে। চালু হওয়ার পর আপাতত ওই পথে শুধুমাত্র মালগাড়ি চলবে। তবে ভবিষ্যতে ওই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হতে পারে বলে রেল সূত্রে খবর। এই পরিষেবা চালু হলে শিয়ালদহ থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে ট্রেন। বাংলাদেশের ভেতরে পার্বতীপুর, দর্শনা, সৈয়দপুর, নীলফামারী, তোরণবাড়ি, দোমার, চিলাহাটি পেরিয়ে ফের তা গিয়ে উঠবে ভারতের হলদিবাড়িতে। সেখান থেকে গিয়ে পৌঁছবে শিলিগুড়ি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে শেষবার ট্রেন চলেছিল ভারতের হলদিবাড়ি ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চিলাহাটির মধ্যে। সেই সময় শিলিগুড়ির ওপর দিয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রেন চলত। আবার হলদিবাড়ি হয়ে ট্রেন ঢুকত কলকাতায়। সম্প্রতি ওই রুটটিকে পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। ভারতের তরফে অবশ্য তেমন খরচ নেই। বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার লাইন বসাতে হবে। তার জন্য দু’দফায় মোট ৪২ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে ভারতীয় রেল। চিলাহাটি থেকে সাড়ে ৭ কিলোমিটার লাইন বসাতে বাংলাদেশ সরকার ৮০ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। হলদিবাড়ি স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার জানিয়েছেন, এ পারের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে একটি উড়ালপুল গড়ার কাজ চলছে। চলছে বৈদ্যুতিক সিগন্যালের কাজও। ৫৬০ মিটার করে দু’টি প্ল্যাটফর্মের নির্মাণও প্রায় শেষ। রেললাইনে আগে যে সিøপার পাতা ছিল, সেগুলো ৬০ কেজি ওজনের ভার সইতে পারত। সেগুলো সরিয়ে নতুন সিøপার বসানো হচ্ছে, যেগুলো ৯০ কেজি পর্যন্ত ভার সইতে সক্ষম। তবে এই পথে ট্রেন চলাচল চালু হলে আদৌ কি কোন সুবিধা হবে ? ঠিক কতটা সময় বাঁচবে ? তার জবাবে নর্দান ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের কাটিহার ডিভিশনের এডিআরএম পার্থ প্রতিম রায় বলেন, ‘১৯৬৫ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল চালু ছিল। তা বন্ধ হয়ে গেলে পরে আমাদের তরফে নতুন রেলপথ গড়ে তোলা হয়। দুই দেশের উদ্যোগে এখন আবার পুরনো রুটটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে নতুন করে রেলপথ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত মালগাড়ি-ই চলবে। তবে ভবিষ্যতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সময় খুব একটা বাঁচবে বলে মনে হয় না। শিলিগুড়ি থেকে শিয়ালদহ আসতে খামোকা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঘুরপথে আসতে যাবেন কেন মানুষ ?’ নতুন রেলপথ বসাতে এবং পরিকাঠামোগত উন্নতি ঘটাতে রেল মন্ত্রকের তরফে ঠিক কত টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মোট ৭টি সীমান্ত চেকপয়েন্ট রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র তিনটি পথে ট্রেন চলাচল করে। হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তাতে আখেরে লাভই হবে বাংলাদেশের। ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গেও রেলপথে যোগাযোগ স্থাপনে পদক্ষেপ করতে পারবে তারা।
×