ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমতলীতে ঋণের দায়ে একজনের আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০১:৪০, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

আমতলীতে ঋণের দায়ে একজনের আত্মহত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা ॥ ঋণের বেড়াজালে দুধাল মৃধা দম্পতির জীবন। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অপমানিত হয় স্ত্রী রেনু বেগম। স্ত্রীর অপমান সইতে ও ঋণের টাকা জোগাড় করতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে স্বামী দুধাল মৃধা। পরিবারে কর্মক্ষম দুধালের মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পরেছে প্রতিবন্ধি শিশু রাতুলের চিকিৎসা ও স্কুল ছাত্রী সালমার শিক্ষা জীবন। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার পুর্ব কুকুয়া গ্রামে। জানাগেছে, উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব কুকুয়া গ্রামের দুধল মৃধা তার স্ত্রী রেনু বেগমের নামে বিভিন্ন সময়ে বে-সরকারী সংস্থা ব্র্যাক থেকে ৩০ হাজার, পদক্ষেপ থেকে ৩০ হাজার, আশা ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার, সিএমইএস থেকে ২০ হাজার ও কৃষি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। সপ্তাহ ও মাসিক কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এ পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছে সে। গত ৬ ডিসেম্বর ব্র্যাকের ঋণের কিস্তি দেয়ার কথা। কিস্তি আদায়ের জন্য ব্র্যাকের মাঠ কর্মী শারমিন আক্তার তার বাড়ীতে যায়। কিন্তু টাকা জোগাড় না হওয়ায় কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি রেনু বেগম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্র্যাক কর্মী শারমিন আক্তার ঋণ গৃহিতা রেনু বেগমকে গালাগাল করে সন্ধ্যার মধ্যে কিস্তির টাকা অফিসে নিয়ে যেতে বলে। টাকা নিতে না পারলে দম্পতিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এ সময় স্বামী দুধাল টমটম গাড়ী নিয়ে বাড়ীর বাহিরে ছিল। পরে স্ত্রী রেনু বেগম ব্র্যাক কর্মী শারমিনের শাসিয়ে যাওয়ার কথা স্বামীকে মোবাইল ফোনে জানায়। ঋণের কিস্তির টাকা জোগাড় করতে না পেরে দুধাল ওই রাতে বাড়ী ফিরেনি এবং মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। রাত নয়টার দিকে পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে। পরে তাকে বাড়ীর বাগানের গাছের সাথে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখতে পায়। পরিবারের লোকজন তাৎক্ষনিক তাকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় গাছ থেকে নামান। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা মর্গে প্রেরন করেছে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় স্ত্রীর অপমানে দুধালের আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকার মানুষ ফুঁসে উঠেছে। তারা দুধালের আত্মহত্যা প্ররোচনাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী করেছেন। এদিকে কর্মক্ষম দুধল মৃধার মৃত্যুতে পরিবারের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছাড়া ও হতাশা। অনিশ্চিত হয়ে পরেছে প্রতিবন্ধি শিশু রাতুলের চিকিৎসা ও নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী সালমার শিক্ষা জীবন। মঙ্গলবার দুধাল মৃধার বাড়ী গিয়ে দেখাগেছে, সুনশান নিরবতা। মানুষকে দেখলেই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে শিশু রাতুল। কেঁদে দিন কাটায় স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী সালমা। প্রত্যক্ষদর্শী সোনিয়া বেগম, তাজেল মৃধা ও খাদিজা জানান, ব্র্যাক কর্মী শারমিন ঋণের টাকা নিতে এসে রেনু বেগমকে গালাগাল করে। এবং সন্ধ্যার মধ্যে টাকা অফিসে না নিয়ে গেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। তারা আরো জানান, আমরা কর্মী শারমিনের গালাগালের প্রতিবাদ করলে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন মারা গেলেও ঋণের টাকা দিতে হবে। স্থানীয় মজিবর ফরাজী ও রুবেল মাষ্টার জানান, ঋণের কিস্তির টাকার জন্য একজন মারা যাবে এটা মেনে নেয়া যায় না। যারা দুধাল মৃধার মৃত্যুতে প্ররোচনা করেছে তাদের বিচাই চাই। নিহত দুধলের স্ত্রী রেনু বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ব্র্যাক কর্মী শারমিন আক্তার আমাকে গালাগাল করে এবং সন্ধ্যার মধ্যে কিস্তির টাকা অফিসে নিয়ে যেতে বলে। এ টাকা সন্ধ্যার মধ্যে অফিসে নিয়ে না গেলে আমাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় শারমিন। আমার স্বামী এ টাকা জোগাড় এবং আমার অপমান সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। যারা আমার স্বামীর মৃত্যুতে প্ররোচনা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। তিনি আরো বলেন, আমি প্রতিবন্ধি শিশুর চিকিৎসা ও মেয়েকে কিভাবে লেখাপড়া করাবো। ব্র্যাক আমতলী শাখার মাঠ কর্মী শারমিন গালাগালের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি ঋণের টাকা আদায় করতে গিয়েছিলাম। ব্র্যাক আমতলী শাখার ম্যানেজার নুরে আলম বলেন, আমার মাঠকর্মী কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য গিয়েছিল কিন্তু ঋণ গৃহিতা রেনু বেগম টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। তবে রেনু বেগম সন্ধ্যায় টাকা পরিশোদের কথা বলেছে। আমতলী থানার ওসি মোঃ আলাউদ্দিন মিলন বলেন, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পরিবার অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×