ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা

ভোটের মাঠে সহিংসতা ॥ যুবলীগ নেতা খুন নোয়াখালীতে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

 ভোটের মাঠে সহিংসতা ॥ যুবলীগ নেতা খুন নোয়াখালীতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ১১ জেলায় এ রকম ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে নোয়াখালীতে যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর এটাই প্রথম খুনের ঘটনা। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা। নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী মূলত সোমবার রাত থেকেই মাঠে নামেন দলীয় প্রার্থী-সমর্থকসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ১০ ডিসেম্বর থেকে ২১দিন প্রচার করা যাবে। নির্বাচনের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার বন্ধ হবে। তাই হাতে সময় কম। সারাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রচার। কিছু কিছু এলাকায় প্রচারের মাঠে অনেকটাই বেপরোয়া বিএনপির কর্মী সমর্থকরা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলছে হামলা। কোথাও বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা হামলার সঙ্গে যুক্ত নয়। নোয়াখালীতে যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা ॥ নোয়াখালী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালী সদরে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাকে মাথা থেঁতলে ও গুলি করে হত্যা করেছে একদল হামলাকারী, যাদের বিএনপি সমর্থক বলছে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার এওজবালিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে বলে সুধারাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান। নিহত মোঃ হানিফ (২৪) এওজবালিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় মোঃ মফিজ উল্লাহর ছেলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচার শুরুর প্রথম দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও হামলায় নিহতের ঘটনা এটি প্রথম। ওসি সাংবাদিকদের বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নুরু“ পাটোয়ারী হাটে বিএনপি একটি বৈঠক করে। বৈঠক শেষে তারা একটি মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন হানিফ ও আরেক জন। তখন বিএনপির মিছিলকারীরা প্রথমে হানিফের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটায় এবং পরে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়ে শটগান থেকে গুলি করে। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিজ বলেন, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার মাথা থেঁতলানো এবং শরীরের বিভিন্ন স্থালে ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ওই এলাকার বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন বিভিন্ন সময় একাধিকবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা এওজবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে হত্যারও চেষ্টা করেছে। সেটাতে ব্যর্থ হয়ে হানিফকে হত্যা করেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, আমাদের আজ কোন কর্মসূচী ছিল না। তারা আমাদের কোন কর্মসূচী পালন করতে দিচ্ছে না। এখন নিজেরা নিজেরা ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এদিকে, এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে আসেন। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি এই হামলা চালিয়েছে। তিনি হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। ঠাকুরগাঁওয়ে ফখরুলের গাড়ি বহরে হামলা ॥ ঠাকুরগাঁও থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি নির্বাচনী প্রচারের উদ্দেশে ঢাকা থেকে বিমানে ঠাকুরগাঁও আসছিলেন। পথিমধ্যে দানারহাট ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে গণসংযোগ শুরু করলে প্রতিপক্ষের একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক লাঠিসোটা নিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায় । এতে ৬/৭টি গাড়ি ভাংচুর করে। এ সময় মির্জা ফখরুলের কমপক্ষে ১০ জন সফর সঙ্গী আহত হয় বলে দাবি করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আজ সারাদেশে উস্কানি দিয়ে বিএনপির মিটিংয়ে হামলা ভাংচুর করা হচ্ছে। আমাদের দলীয় লোকজনকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে তারা যেন শান্ত থাকে কোনরকম উস্কানিতে পা না দেয়। রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা উস্কানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচনে না যাওয়ার জন্যই তারা হামলা করছে। হামলার বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারী দল যতই হামলা করুক না কেন বিএনপি নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে যাবে না। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হামলার ঘটনাটি প্রকৃত কি না সাজানো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রাঙ্গাবালীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ ॥ গলাচিপা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর বন্দরের খোলগোড়ায় একইস্থানে পাল্টাপাল্টি নির্বাচনী পথসভা কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কার্যালয় ভাংচুর ॥ ফরিদপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন সদরপুর নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনে নির্বাচনী প্রচার শুরুর প্রথম দিনই ভাঙ্গায় সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের তিনটি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছে ১০ জন। সোমবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে প্রচারের প্রথম দিনে ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের লোচনগঞ্জ বাজার প্রথম পরে একই ইউনিয়নের খাটরা গ্রামে, আজিমনগর ইউনিয়নের মুন্সিরবাজার ও কালামৃধা ইউনিয়নের সাওথার গ্রামসহ এ চারটি জায়গায় এ সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরায় ধানের শীষের পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ ॥ সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সাতক্ষীরার সদর আসনের বৈকারি, ঘোনা ও আলিপুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকের বিপুল সংখ্যক পোস্টার ছিঁড়ে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় সদর উপজেলার বৈকারি ইউনিয়নের কয়েকটি বাড়িতে হামলা, একটি দোকান ভাংচুর ও বিএনপি সমর্থক কয়েক ব্যক্তিকে মারপিট করেছে সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম সরোয়ার জানান, সোমবার সন্ধ্যায় তাদের কর্মী সমর্থকরা বৈকারি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগানোর পর একদল যুবক কাথ-া বাজার ও নাপিতঘাটা এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে এতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে তারা নুরুল মুন্সি, সাবেক ইউপি সদস্য জালাল ও খালেক হাজরার বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট করে চলে যায়। পরে তারা নাপিতঘাটায় একটি সারের দোকান তছনছ করে। ফটিকছড়িতে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ ৭॥ ফটিকছড়ি থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় উপজেলার নানুপুর বাজারে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহাজোট প্রার্থী আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ এটিএম পেয়ারুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে এক সংঘর্ষে ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ধুনটে বাড়িতে আগুন, মাইক্রো ও বাইক ভাংচুর ॥ বগুড়া অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় সোমবার রাত ও মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে আগুন ও মাইক্রোবাসসহ বেশকিছু মোটরসাইকেল ভাংচুর হয়েছে। তবে নির্বাচন কেন্দ্রিক এ ঘটনা দুটি ঘটেছে কিনা সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। এ ঘটনায় ধুনটে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ জানায়, সোমবার গভীর রাতে ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামে মুরাদ নামে এক যুবদলকর্মীর টিনশেড বাড়িতে আগুন লাগে। পুলিশের ধারণা পূর্ববিরোধের জের ধরে কে বা কারা এই আগুন লাগায়। রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। আগুনে ২টি ঘরসহ একটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি প্রার্থী গাড়িবহর নিয়ে ধুনটের গোসাইবাড়ি এলাকার দিকে যাওয়ার পথে ধুনট বাজার এলাকায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। প্রতিপক্ষ গ্রুপ এ হামলা চালালেও কারা এর সঙ্গে জড়িত পুলিশ তা নিশ্চিত কিছু বলতে পারেনি। এ ঘটনায় ২টি মাইক্রোবাস ও ৭/৮টি মোটরসাইকেল ভাংচুর হয়েছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ধুনট-শেরপুর সার্কেল) গাজিউর রহমান জানিয়েছেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে দুপক্ষকে সরিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি সমর্থকরা উপজেলার হুকুম আলীর মোড় এবং আওয়ামী ধুনট উপজেলা পরিষদ এলাকায় দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করছিল। বরিশালে বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১০ ॥ বরিশাল থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ধানের শীষের প্রার্থী এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে অভ্যর্থনা জানাতে এসে ফুল দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুগ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইসরাত হোসেন কচি তালুকদার। আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালীন বরিশাল বিমানবন্দর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দুর্গাপুরে আ’লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ ও অফিস ভাংচুর ॥ নেত্রকোনা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলার দুর্গাপুর উপজেলার মাকরাইল বাজারে সোমবার রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়। এ ঘটনায় পুলিশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইমাম হাসান আবুচানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। দুর্গাপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে তিনটি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার বিএনপি সমর্থক ফারুক আহমেদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থক শাহজাহানের তর্ক-বিতর্ক হয়। এর জের ধরে সোমবার সন্ধ্যার পর মাকরাইল বাজারে দু’পক্ষ অবস্থান নেয়। তাদের মধ্যে পরপর দু’দফা সংঘর্ষ বাধে। এতে আওয়ামী লীগ কর্মী শাহাজাহান, কিতাব আলী, নিজাম ও বিএনপি কর্মী ফারুক আহমেদ আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি কর্মীরা মাকরাইল বাজারে অবস্থিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। পুলিশের দাবিÑ বিএনপি কর্মীরা এ সময় ককটেলও বিস্ফোরণ ঘটনায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী কিতাব আলী, রফিকুল ইসলাম ও শাহজাহান মিয়া বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। বিস্ফোরক আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ এনে এসব মামলা দায়ের করা হয়। মামলার প্রেক্ষিতে দুর্গাপুর থানা পুলিশ রাতেই জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইমাম হাসান আবু চান, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আসাদ, যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ও ছাত্রদল কর্মী দুর্জয়কে গ্রেফতার করে। দুর্গাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার চারজনকেই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনাল এইড হিসেবে কর্মরত মানু মজুমদার। আর বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। নোয়াখালীতে মওদুদের পথসভা পন্ড, হামলা ভাংচুর ॥ নোয়াখালী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলার কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পথসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মওদুদ আহমদ। এ সময় সংঘর্ষে উভয় দলের অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছে। আহতের মধ্যে বিএনপির ২৫ জন এবং আওয়ামী লীগের ১০ জন রয়েছে বলে উভয় পক্ষ দাবি করেছে। হামলায় কমপক্ষে ২৫টি দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও বিএনপি অফিস ভাংচুর হয়। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হামলার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পথসভা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারের সভাস্থলে সমবেত হতে থাকে। এ সময় বিএনপি সমর্থকরা জিরো পয়েন্ট থেকে একটি মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগের মিছিলের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এরপর শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। হামলায় কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা লিটনসহ উভয় পক্ষের ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়। অপরদিকে কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম জানান, বিএনপির হামলায় তিনিসহ আওয়ামী লীগের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার নির্ধারিত পথসভাস্থলে আসেননি। কবিরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাছান জানান, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সব ধরনের সহিংসতা এড়াতে বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। নড়াইলে নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাংচুর নড়াইল থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নড়াইল-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী এনপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারমান এ জেড এম ফরিদুজ্জামানের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে লোহাগড়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ আসনে ফরিদুজ্জামানের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা। এ হামলায় অন্তত চার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন ফরিদুজ্জামান। তিনি বলেন, লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে আমাদের নির্বাচনী অফিসে হামলা চালানো হয়। অতর্কিত ভাবে হামলা চালিয়ে অফিসের চেয়ার, টেবিল, ফ্যানসহ অন্যান্য আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। এদিন বিকেলেই এখানে কর্মিসভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
×