ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা সরকারকেই পুনর্নির্বাচিত করা উচিত

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

 শেখ হাসিনা সরকারকেই পুনর্নির্বাচিত করা উচিত

(গতকালের পর) ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বার্ষিকীতে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছবে বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে দেশের বিদ্যুত বিভাগ। একদিকে পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন (থারমাল বিদ্যুত) প্রকল্প, অপরদিকে সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লায় পরিচালিত বিদ্যুত উৎপাদন এবং এলএনজি গ্যাসে পরিচালিত বিদ্যুত উৎপাদনের বিভিন্ন উপায় ও পন্থায় পরিচালিত বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পসমূহ এগিয়ে যাচ্ছে দেশের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের চাহিদা ও ঘাটতি মেটাতে। ইতোমধ্যে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ, সরকারী ভর্তুকিতে ৪ টাকা ৮২ পয়সায় প্রতি ওয়াট বিুদ্যত সরবরাহ পাচ্ছেন। সরকার উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ক্রয় করছে প্রতি ওয়াট ৬ টাকা ২৫ পয়সা মূল্যে। বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতি ও উন্নয়নের অন্যতম হচ্ছে নারী সমাজের ব্যাপকভাবে ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের কারণে। নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়ায় দেশের নারী সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণের সুযোগ-সুবিধাসহ বিশেষ করে তাদের শিক্ষার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করে, ডড়সবহ ঊসঢ়ষড়ুসবহঃ বা নারীদের ক্ষমতায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ, নিষ্ঠা এবং ঐকান্ত্রিক প্রচেষ্টার সুফল অর্জনের লক্ষ্যে মূলনীতি, যথা নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মূল্যায়নের পদক্ষেপ আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসনীয় ও উল্লেখযোগ্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মেয়েরা আজ দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীর অনুপাত হারের সংখ্যা হলো ৫৩-৪৭, ২০০৯ সালের প্রথমার্ধে যা ছিল, ৩৫-৬৫। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহীত নারী ক্ষমতায়নের বিশেষ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের সার্বিক নিরাপত্তা, সম্মান, শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সর্বপ্রকার বৈষম্যহীন ব্যবস্থা করেছেন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নারী ক্ষমতায়নে। নারী শিক্ষার অগ্রগতি ও উন্নয়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা প্রণয়নের খরচের অর্থ ব্যবস্থা করেছেন জাতীয় বাজেটে। ডিগ্রী পর্যায়ে মেয়েদের বিনা পয়সায় পড়াশোনার সুযোগ, বৃত্তি প্রদান ও বইপত্র, দুপুরের খাবার সরবরাহ, বিদ্যালয়সমূহে মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থাসহ দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে ৬০ শতাংশ মহিলা শিক্ষিকা কর্মরত আছেন। প্রধানমন্ত্রীর নারী ক্ষমতায়নের ফলশ্রুতিতে আজ বাংলাদেশের মহিলা শ্রমিকসংখ্যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩৬ শতাংশে পরিণত হয়েছে। প্রায় ২.৩ মিলিয়ন নারী শ্রমিক আজ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। এছাড়া প্রায় ৪ মিলিয়ন নারী শ্রমিক দেশের গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত আছেন, (সূত্র : বাংলাদেশ লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৬-১৭)। শিল্প, কৃষি ব্যবসা বাণিজ্যে দেশের সরকারী প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থায়, সামরিক, নৌ, বিমান বাহিনীসহ,পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীতেও আজ দেশের নারী অফিসার ও সদস্যগণ পুরুষদের পাশাপাশি বিভিন্ন পদে পেশাগত দক্ষতার সাথে অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানীয়ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন, স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা ও জেলা ও উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৭৩ জন মহিলা জনপ্রতিনিধি আছেন, যাদের মোট সংখ্যার ২০ শতাংশ। আমাদের সংসদ নেতা, উপনেতা, স্পীকার ও বিরোধীদলীয় নেত্রী সকলেই মহিলা। জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট ও ফুটবলের খেলোয়াড়গণ আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা, শ্রম ও নৈপুণ্যের দ্বারা দেশের বিশেষ সুনাম ও সম্মান আনয়ন করছেন। সাঁতার, শূটিং এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় তাদের পারদর্শী সক্ষমতার দারুণ প্রমাণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের বদান্যতায় দেশে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে কর্মরত মহিলা মাতৃত্বকালীন অবস্থায় ছয় মাস সম্পূর্ণ বেতনসহ ছুটি ভোগ করতে পারেন। বাংলাদেশে নারীদের জন্য স্থাপিত ১৬,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু আছে, যার মাধ্যমে মহিলারা বিনা পয়সায় ৩০ প্রকারের ওষুধসহ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন। (সূত্র এসডিজি, ২০৩০ স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ২০১৭)। বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নে, বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত ও প্রণীত এই বিশাল কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সফলতা অর্জনে তিনি গত ২৭ এপ্রিল ২০১৮ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোবাল ওমেন লিডারশিপ’ এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসহ পুরস্কার বা সম্মান প্রাপ্তি। বাংলাদেশের গোটা নারী সমাজকে সম্মানের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে, যার গোটা কৃতিত্ব শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ, প্রচেষ্টা ও ঐকান্তিক সদিচ্ছারই প্রতিফলন। বিশ্ব কূটনীতি বা পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ একটি সফল পররাষ্ট্র নীতির দেশ হিসেবে দাবিদার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক প্রণীত ও ঘোষিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলমন্ত্র ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়’ এই ঐতিহাসিক পররাষ্ট্র নীতির মূল আদর্শ ও মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে, তার গর্বিত কন্যা, প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও নিজ স্বার্থ সংরক্ষণ করে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূল লক্ষ্য ও আদর্শের সামঞ্জস্য সংরক্ষণ করে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে অত্যন্ত গৌরব, সম্মান ও মর্যাদার উর্ধ আসনে তুলে ধরে রাখতে অত্যন্ত সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সাথে সক্ষম হয়েছেন। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার হতে এক মিলিয়নেরও অধিক রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু নাগরিকদের প্রতি তার ও তার সরকারের প্রদর্শিত মানবিক সাহায্যও বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় প্রদান করে শেখ হাসিনা যে মহাত্ম ও মানবতা প্রদর্শন করেছেন তার এই বিশাল মানবতার বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল এচিবম্যান্ট ফর হিউম্যানিটারিজম রিসপন্স টু দি রোহিঙ্গা’ পদক প্রদান করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান পদকটি বিশ্বের খ্যাতিমান অপর তিনজন ব্যক্তিত্ব, যথাক্রমে জাতিসংঘের সাবেক ও প্রয়াত সেক্রেটারি জেনারেল কফি আনান, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল বুট্টোস বুট্টোস ঘালি ও ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মারটি আতিসারী দ্বয়ছে। এই পদকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও বন্ধুত্ব স্থাপনে তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানিত করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন ও বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানার সম্মিলিত ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত, মানবিক ইচ্ছা ও সহনশীলতার বশে প্রভাবিত হয়ে, নিজ আবাসভূমি থেকে উৎখাতকৃত রোহিঙ্গাদের প্রতি এক মহান মানবতা ও উদারতা প্রদর্শন করে,বিশ্ব মানবতা, স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালবাসার এক অতূলনীয় অপূর্ব প্রশংসনীয় নিদর্শন ও উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অসহায়, অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও স্বদেশ থেকে অন্যায় ও অমানবিকভাবে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয়সহ সকল মানবিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেদিন খুলে দেয়া হয়েছিল দরজা। রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নৃশৃংস বর্বরতার অবর্ণনীয় পরিস্থিতি ও ঘটনাকে উপেক্ষা করে নীরবতা পালন না করে থাকেননি শেখ হাসিনা ও তার সরকার। তাৎক্ষণিকভাবে মানবতার রক্ষা ও সাহায্যার্থে সরকারের সকল বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের সকল স্তরের জনবলকে নিয়োগ করেছেন জরুরী ভিত্তিতে। সেসময় রোহিঙ্গা জনস্রোতকে বাংলাদেশ ভূখ-ে প্রবেশ বন্ধ করার জন্য, বিভিন্ন মহল কর্তৃক মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের উপর আক্রমণ করে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক, মতলববাজি বিভিন্ন হরেক রকমের দাবি সংবলিত পরামর্শকে গুরুত্বপ্রদান না করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা অত্যন্ত দক্ষতা, বিচক্ষণতা, সহনশীলতা ও কূটনৈতিক কৌশল অবলম্ব করে, সমগ্র বিশ্বের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন অকুণ্ঠভাবে। তার দূরদর্শী কূটনৈতিক কার্যক্রম ও তৎপরতার ফলে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন বন্ধ করে একটি সফল ও বাস্তব কূটনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হয়ে, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত সকল দেশ ও রাষ্ট্র, শেখ হাসিনার সরকারের মানবিক নেতৃত্ব ও সাড়া দেয়ার, মানবতার প্রতি ভালবাসা ও সহমর্মিতার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় ভূয়সী প্রশংসা করে তার সরকারের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ও সাহায্য সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কূটনৈতিক সফলতা, প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বিশ্ব কূটনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ সরকার জোড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, মাতৃভূমির স্বদেশ হতে বিতাড়িত এক কোটি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ আবাসভূমি মিয়ানমারে সম্মানীয়ভাবে, নিরাপদে প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সাথে জঙ্গী ও সন্ত্রাস বিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পরিচালিত চলমান কর্মসূচীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং সম্মিলিত অংশীদারিত্বর ভিত্তিতে একযোগে কাজে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্ব পরিমন্ডলকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত করে, বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা রক্ষায় একটি স্থিতিশীল বিশ্ব ব্যবস্থা কায়েমের সর্বাত্মক অবদান রেখেছেন শেখ হাসিনাও তার পরিচালিত সরকার। চলবে...
×