ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনূর আক্তার

শারাপোভার নতুন চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

  শারাপোভার নতুন চ্যালেঞ্জ

মারিয়া শারাপোভার ব্যাপারে নতুন করে বলার কিছুই নেই। বিশ্ব টেনিস কোর্টের আলোচিত নাম। গত দেড় দশক ধরেই টেনিস কোর্টে আলো ছড়াচ্ছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। এই সময়ের মধ্যে পাঁচটি গ্র্যান্ডস্লামসহ অসংখ্য শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন তিনি। তবে ২০১৬ সালে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের জন্ম দেন রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্ল। দীর্ঘ ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও কোর্টে ফিরেছেন ঠিকই। কিন্তু নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। তারপরও হাল ছাড়তে নারাজ মাশা। নতুন মৌসুমে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই কোর্টে নামতে চান ৩১ বছরের এই টেনিস তারকা। শারাপোভার ভক্তদের জন্য সুখবর। নতুন বছরের শুরুতেই কোর্টে নামছেন তিনি। শেনঝেন ওপেন দিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করবেন শারাপোভা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ওমেন টেনিস এ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউটিএ)। এ প্রসঙ্গে টুর্নামেন্টের পরিচালক লুইজ কার্ভালহো বলেন, ‘শেনঝেনের সকল ভক্তদের জন্য অগ্রিম সুখবর জানানোর দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছি। শেনঝেনের লংগ্যাং স্পোর্টস সেন্টার রোমাঞ্চকর এক সপ্তাহের জন্য অপেক্ষা করছে।’ রোমাঞ্চকর সেই সপ্তাহের কারণটা তো সুস্পষ্টই। পাঁচবারের গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী মারিয়া শারাপোভা ছাড়াও যে এই টুর্নামেন্টে খেলবেন বিশ্বের আরও বেশ কয়েকজন নামী দামী তারকা। যাদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৭ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জয়ী জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো এবং বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বরে থাকা ক্যারোলিন গার্সিয়া। যদিওবা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী সব খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশ করেননি আয়োজক কর্তৃপক্ষ। তবে স্বাগতিক চীনের দুই তারকা ওয়াং জিনুইয়ু এবং ওয়াং জিউয়ু খেলছেন সেটাও নিশ্চিত। আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে শেনঝেন ওপেন। চলবে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত। এবার অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের সপ্তম সংস্করণ। বয়সে একত্রিশকেও ছাড়িয়ে যাওয়া শারাপোভা সর্বশেষ মেজর শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন ২০১৪ সালে। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে সেবার সিমোনা হ্যালেপকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের পঞ্চম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। এর পরের চারটি বছর অবশ্য খুব বাজে কেটেছে তার। অথচ তার আগের সময়টা ছিল দারুণ ঝলমলে। একটু অতীতের দিকে তাকালেই ভেসে ওঠে শারাপোভার সেই পারফর্মেন্স। বিশেষ করে ২০০৪ সালের কথা। শারাপোভার বয়স তখন সতেরো। ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরক ঘটেছিল তার। দুইবারের উইম্বল্ডন চ্যাম্পিয়ন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জিতে নজর কেড়েছিলেন টেনিসপ্রেমীদের। সেই যে শুরু। এরপর আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। টেনিস কোর্টের পারফর্মেন্সে কখনও কখনও নিষ্প্রভ থাকলেও রূপ-সৌন্দর্য দিয়ে জায়গা করে নেন বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি টেনিসপ্রেমীদের হৃদয়ে। পাঁচটি গ্র্যান্ডসøামসহ মোট ৩৬টি ডব্লিউটিএ শিরোপা জিতেছেন শারাপোভা। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেও দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে বিশ্বের জনপ্রিয় এবং শীর্ষ ধনী এ্যাথলেট হওয়ার তকমাটাও মেখেছেন তার গায়ে। কিন্তু হায়। এই শারাপোভাই বিশ্ব টেনিসে কলঙ্কজনক এক অধ্যায়ের জন্ম দেন। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন মারিয়া শারাপোভাকে নিষিদ্ধ করেছিল। ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় রুশ এই টেনিস তারকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন চলার সময় করা ডোপ পরীক্ষায় তার দেহে নিষিদ্ধ উপাদান মেলডোনিয়াম পাওয়া গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন মার্চের শুরুতে একথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। তবে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও কোর্টে ফিরেন ২০১৭ সালে। যদিওবা কোর্টে ফেরার পর থেকে আর আগের শারাপোভার দেখা পায়নি তার সমর্থকরা। তবে নতুন বছরে কেমন পারফর্ম করবেন শারাপোভা? ক্যারিয়ারের গোধূলীবেলায় পারবেন কী নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে? ভক্ত-অনুরাগীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। এদিকে, সেরেনা উইলিয়ামসের সামনেও এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। কেননা, দুই বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সপ্তম শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে ৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামসকে পরাজিত করে মেলবোর্নে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিলেন আমেরিকান টেনিসের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। এরপরই প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন সেরেনা। সেজন্য অনেকটা সময় কোর্টের বাইরে থাকার পর এ বছর আবারও কোর্টে ফিরেন ৩৭ বছরের এই টেনিস তারকা। খেলেছেন দুটি মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালও। কিন্তু শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। তবে হাল না ছাড়া সেরেনা এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও ফেরার ঘোষণা দিলেন। মৌসুমের শেষ টুর্নামেন্ট ডব্লিউটিএ ট্যুর ফাইনালস খেলতে পারেননি সিমোনা হ্যালেপ। প্রকৃতপক্ষে রোমানিয়ান তারকাকে খেলতে দেয়নি পিঠের ইনজুরি। তবে হ্যালেপ ভক্তদের জন্য সুখবর। পুরোপুরি ফিট হয়েই নতুন মৌসুমে কোর্টে নামতে যাচ্ছেন বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নারী এককের এক নম্বর খেলোয়াড়। শুরুটা করবেন সিডনি ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্ট দিয়ে। টুর্নামেন্টের আয়োজক কর্তৃপক্ষই এক টুইট বার্তায় নিশ্চিত করেছে বিষয়টি। শুধু হ্যালেপ একা নন। সিডনির এই টুর্নামেন্টে খেলার নিশ্চয়তা দিয়েছেন জার্মানির এ্যাঞ্জেলিক কারবার এবং জাপানের নাওমি ওসাকাও। ২০১৮ সালের সবচেয়ে আলোচিত তারকা ওসাকা। এ বছরেই ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। জাপানের তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড় বছরের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম ইউএস ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন সেরেনা উইলিয়ামসকে পরাজিত করে। যদিওবা বছরের শেষ কয়েকটি টুর্নামেন্টে পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি ২০ বছরের এই তরুণ। হ্যালেপের জন্যও এ বছরটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ মৌসুমেই যে ক্যারিয়ারের প্রথম কোন গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জিতেন তিনি। ফ্রেঞ্চ ওপেনের মাধ্যমে। তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে বহুল প্রতীক্ষিত ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপার দেখা পান তিনি। নতুন বছরটা তাই তার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সমর্থকদেরও চোখ থাকবে হ্যালেপ-ওসাকাদের দিকে।
×