ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বুধবার কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে। একাধিক পয়েন্টে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ অন্ততঃ ১৮ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সর্টগানের গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়েছে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে এদিন অন্ততঃ ২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ভুল ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছে বলে পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে। পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোয় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বুধবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের শিল্পনগরী কোনাবাড়ি ও কাশিমপুরের তুসুকা ও ইসলাম গ্রুপসহ আশেপাশের অন্ততঃ ১৫/১৬ টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এসময় তাদের সঙ্গে আশেপাশের আরো বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা যোগ দেয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুপুরের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও কোনাবাড়ি-কাশিমপুর সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা কয়েকটি গাড়ির কাঁচ ভাংচুর করে। এতে সড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কের ওপর থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে পুলিশ সর্টগানের গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এদিকে একই দাবীতে একইদিন সকাল হতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাইনবোর্ড এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট, প্রীতি সোয়েটার, ইন্টার স্টপ, রিয়াদ ও ম্যাট্রিক্স পোশাক কারখানাসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। পরে তারা মিছিল সহকারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে সড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে শিল্প পুলিশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় পুলিশের দুই সদস্যসহ ৭জন আহত হয়। গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় শ্রমিকরা রাস্তায় যানবাহন ভাংচুরের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। গাজীপুর শিল্প পুলিশের এএসপি মকবুল হোসেনসহ কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তা জানান, ভুল ধারণা থেকে শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে এ আন্দোলন করছে। সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামোয় পোশাক কারখানার সিনিয়র জুনিয়র অপারেটরদের মূল বেতনসহ আনুসাঙ্গিক খাতের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মহল সিনিয়র অপারেটরদের ভাতাদি বৃদ্ধি করা হয়নি বলে গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনে ইন্দন দেয়। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে তারা অযৌক্তিকভাবে বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবীতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করে আসছে। তবে বেতনের টাকা হাতে পেলেই শ্রমিকদের ভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এদিন বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সর্টগানে গুলি ও টিয়ার সেল ছুড়েছে।
×