ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চলতি মাসের শেষেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন, গণমানুষের প্রতীক্ষা আর পছন্দের ভোট-উৎসব। এই ভোটে এদেশের মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। ভোট গুরুদায়িত্বও বটে। কারণ দেশের অগ্রযাত্রা নির্ভর করবে এই ভোটের ওপর। নির্বাচনে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা থাকে। এসব উজিয়ে প্রতিটি

সামজ ভাবনা - বিষয় ॥ ভোটের উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

সামজ ভাবনা - 	বিষয় ॥ ভোটের উৎসব

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তরুণরা মোহাঃ মারুফ আখতার (মজনু) ॥ সব দলের অংশগ্রহণে এবারের নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর। এ প্রত্যাশা নিয়ে ভোটের মাঠে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে তরুণ ভোটাররা। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের মাঠ দখলে রাখবে প্রায় এক কোটি ২২ লাখ তরুণ ভোটার। তরুণরাই স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ের মাসে বিজয়ের পতাকা বহন করবে তরুণ সমাজ। এখন সব রাজনৈতিক দলের কাছে তরুণরাই প্রধান ফ্যাক্টর। ফলে তরুণদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছিল তরুণ প্রার্থী মনোনয়নে আগ্রহী। মনোনয়ন সংগ্রহে পিছিয়ে ছিল না তরুণরা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছেন যা তরুণদের অধিক থেকে অধিকতর উৎসাহিত করছে। মাঠও গরম করে রেখেছে তরুণরা নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে। সুযোগ কাজে লাগাতে এবং দেশের অগ্রযাত্রা ধরে রাখতেও সজাগ তরুণ সমাজ। গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী আলোচনায় সরব তরুণরা, এমন কি ইন্টারনেটেও। এই তরুণদের একটি বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে আগ্রহী। ভোটের মাঠে তরুণরাই বড় ভূমিকা রাখবে বলে তরুণদের চাওয়া-পাওয়ার গুরুত্ব দিয়েই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিতে ব্যস্ত। বিজয়ের মাসে বিজয় হোক তরুণদের, স্বাধীনতা পক্ষের শক্তির এ প্রত্যাশা সকল নাগরিকের। নারীর ক্ষমতায়নে এবার নারী প্রার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রীড়া, শিক্ষা, শিল্প, চলচ্চিত্র জগত থেকেও অনেক নারী মনোনয়ন দৌড়ে ছিল এগিয়ে। লক্ষ্য নারী ক্ষমতায়ন জোরদারকরণ, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার। নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ ও ভোটের মাঠ থাকবে উৎসবমুখর। ভোটারদের মাঝেও উৎসবের আমেজ বাড়বে। অনেকের মতে ভোট হবে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। এখন যারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নেতৃত্বে আছেন তারাও এক সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন। ওইসব নেতারা নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশ বাঁচাও’ স্লোগান সামনে রেখে স্বাধীনতা/মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করছেন যা কলামিস্ট মান্যবর আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, স্বদেশ রায়, মুহম্মদ শফিকুর রহমানসহ অনেকে তাঁদের লেখনিতে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁদের কলামগুলো যদি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাত তাহলে বাংলাদেশের জনগণ কখনই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিকে ভোট দিত না। বিজয়ের মাসে আমরা আর একটি বিজয়ের প্রত্যাশী এবং তা হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির। স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে কোনক্রমেই নয়। এবার নির্বাচন ডিসেম্বর ২০১৮-এর স্লোগান হোক আমার ভোট আমি দিব, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে দিব।’ প্রত্যাশা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ‘বঙ্গবন্ধুর’ সুযোগ্যকন্যা, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের হাতে উদযাপিত হোক স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। পঞ্চগড় থেকে চলছে ভোট উৎসব আরিফ হোসাইন হিয়া ॥ বাঙালীর চিরায়ত জীবনে বারো মাসে তেরো পার্বণ। অনেক না পাওয়ার বেদনা, বঞ্চনার দুঃখ কিছুটা হলেও দূর করে এই পার্বণের উপলক্ষগুলো। আধুনিক পার্বণ হিসেবে যোগ হয়েছে নির্বাচন বা ভোট। ভোট এলেই অধিকার সচেতন বাঙালী একটা উৎসবের আমেজে মেতে ওঠে। আমাদের দেশে নির্বাচন নিয়ে যতদিন আগে থেকে আলোচনাÑসমালোচনা হয়, পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন আলোচনা হয় কি না আমার জানা নেই। আর মাত্র কিছুদিন পরই আমাদের দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের দুর্বলতা একটি সুবিদিত বিষয়। জাতীয় নির্বাচন হোক আর স্থানীয় নির্বাচন হোক ভোটযুদ্ধকে কেন্দ্র করে উৎসব মেজাজে মেতে ওঠে বাংলাদেশের মানুষ। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে যে উৎসবমুখর হাওয়া বইছে তা নজিরবিহীন। মিডিয়া জগত যেমন- সরকারী ও বেসরকারী প্রতিটি টেলিভিশনের প্রধান খবর নির্বাচন বা ভোটের। আবার দেশের প্রতিটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম নির্বাচন বা ভোটের উৎসব নিয়ে। এছাড়াও শহর-নগর কিংবা গ্রাম-গঞ্জে থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, হাট-বাজার ইত্যাদি জায়গায় চলছে ভোট নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলাপচারিতা। আমাদের দেশে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতির হারও পশ্চিমা দুনিয়ার যে কোন দেশের চেয়ে বেশি। শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনৈতিক সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকলেও নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে এদেশের মানুষ যে এগিয়ে তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। আর এমনই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বর্তমান সময়ে। ২০০৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে যে নির্বাচন হয়েছিল তাতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পূরণ হলেও জনগণকে বঞ্চিত ছিল ভোট উৎসবে মেতে উঠায়। উৎসবের বদলে যে কোন সময় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত থেকেছেন ভোটাররা। তবে এবারের নির্বাচনে কিছুটা ভয় বা আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেলেও ভোট উৎসব থেকে কোন দলই বঞ্চিত নয়। এটা গণমানুষের প্রতীক্ষা আর পছন্দের ভোট উৎসব। এই ভোটে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটুক এটাই সারা দেশের মানুষ আশা করে। মানুষ আগের চাইতে অনেক বেশি সচেতন। ভোটের আগে তাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ কষতে কেউ বাকি নেই। পছন্দের দল ও প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কেননা দেশের অগ্রযাত্রা নির্ভর করবে এই ভোটের মাধ্যমে। তাছাড়াও ভোটারদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে এবং গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ ও চর্চার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আর এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের সকল নাগরিক তার ন্যায্য দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকতে পারবে। পরিশেষে বলতে চাই দেশের সার্বিক উন্নয়ন বজায় রাখার স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাই। যে নির্বাচন বহির্বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ কিংবা আমাদের স্বাধীন দেশের মানক্ষুণœ হোক এমন নির্বাচন জাতি আশা করে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনই হোক ভোটের প্রকৃত উৎসব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের অস্তিত্বের পরীক্ষা গোপাল নাথ বাবুল ॥ প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন উৎসব বাঙালীর জীবনে আনন্দের উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। আধুনিককালে বাঙালীর জীবনে নির্বাচনও নতুন উৎসব হিসেবে যোগ হয়েছে। কেননা, চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণে হয় নদীর জোয়ার আর নির্বাচনের আকর্ষণে হয় ভোটের জোয়ার। নির্বাচন এলে বাঙালীর ঘরে ঘরে, পথে-ঘাটে, দোকানে-অফিসে বিশেষ করে চায়ের দোকানে তর্ক-বিতর্কের ঝড় উঠে। কারণ, ভোট উৎসব বাঙালীর জীবনে পার্বণের মতো গুরুত্ব ও আনন্দ নিয়ে আসে। আগে পাঁচ বছরে একবার এই উৎসব আমাদের জীবনে এলেও বর্তমানে স্থানীয় সরকার নামক কয়েক প্রকারের নির্বাচন যুক্ত হওয়ায় আমরা উক্ত সময়ের মধ্যে কয়েকবার এই উৎসবের মুখোমুখি হই। তাছাড়া ভোট এলে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই কিছুদিনের জন্য নিজেদের রাজা ভাবি। বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ভোটারের কাছে হাত পেতে দোয়া চান। যেসব প্রার্থীর জনগণের প্রতি বিশ্বাস নেই, তাদের পক্ষের লোক রাতে গিয়ে গোপনে মুষ্টিবদ্ধ হাত এগিয়ে দিতে কার্পণ্য করেন না। কারণ, ভোটের সময় প্রত্যেক প্রার্থী দাতা হাতেম তাই সেজে জনগণের মন যোগাতে চেষ্টা করেন এবং প্রার্থী হিসেবে প্রত্যেকে সবার চেয়ে সেরার তালিকায় নাম লেখাতে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। অনেকে গত ঈদের সময় অগ্রিম দোয়া নেয়ার পালা শেষ করে রেখেছেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ এর নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের ভোট উৎসব শুরু হয়েছে। সারাদেশ শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত। চায়ের কাপে ঝড় তুলছে বিভিন্ন প্রার্থীকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। জাতীয় নির্বাচনে দেশের প্রত্যেকটি দল অংশ নিয়েছে। যারা দলগত ভাবে অংশ নিতে পারেন নি, তারা অন্যদলের ব্যানারে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের একমাত্র সাধারণ নির্বাচনে বাঙ্গালী এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল। বাঙ্গালী কী বীরের জাতি হিসেবে বাঁচবে নাকি পাকিস্তানের গোলাম হয়ে বাঁচবে? সে পরীক্ষায় আমরা প্রমাণ করেছিলাম, বাঙালী বীরের জাতি। এবারের নির্বাচনও আমাদের জন্য অস্তিত্বের পরীক্ষা। পাশের দেশের চেয়ে আমরা উন্নয়নে বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্ববাসী অবাক। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বর্তমানে এশিয়াতে আমরা ১২তম স্থানে অবস্থান করছি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা অচিরে ৭ম স্থানে উঠে আসব বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আমরা শিল্প-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে সোনালি সময় পার করছি। এমন কী যে দেশটি আমাদের কোনদিন ভাল চায়নি, সে পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবিরাও তাদের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উপদেশ দিচ্ছেন, বাংলাদেশের পথ অনুসরণ করে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়ককে চলমান রাখতে সহযোগিতা করব নাকি দুর্নীতিতে পাঁচ বছরে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, পাকিস্তানের তল্পিবাহক, সন্ত্রাসী, খুনী, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পোড়ানো আগুন সন্ত্রাসীর দল বা জোটকে সহযোগিতা করব। আশা করি, আমরা এই পরীক্ষায়ও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হব। তাছাড়া এবারের নির্বাচনে সর্বাধিক সংখ্যক তরুণ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারাও শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসবে আশা করে সবাইকে উন্নয়নের মহাসড়ককে এগিয়ে নিতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছি। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে শুভবুদ্ধির উদয় হোক সাদাফ আমিন ॥ আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন এবং ২০০৮ সালে ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে ভোটার বেশ বেড়েছে বর্তমানে প্রায় আড়াই কোটি ভোটারই তরুণ। প্রতিটি আসনে গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত তরুণ ভোটার রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এঁরাই জয়-পরাজয়ে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন। আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রের ফাঁকা বুলি আমাদের মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিবিমুখ করে তুলেছে। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শুরু করে শহর পর্যায়ের একটা বিরাট অংশের মানুষজন কেবল দলীয় মার্কা দেখেই অন্ধভাবে ভোট প্রদান করে থাকে, প্রার্থীর যোগ্যতা মুখ্য বিষয় নয়, দলীয় মার্কাই মুখ্য বিষয় জনগণের এই অন্ধ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এখন একাধিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রেও স্বার্থান্বেষী পন্থায় বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের অবহেলা করে লবিং, টাকা, বল প্রয়োগে সিদ্ধ অযোগ্য তথাকথিত অর্থ-বলে বলীয়ান ক্ষমতাবানকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিচ্ছে। যার কারণে সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা এখন ‘সহমত ভাই’ আর অপরাজনীতিতে বন্দী হয়ে যাচ্ছে। জনগণের দাবি-দাওয়া সমাধানে সরকারের সঙ্গে আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র যে সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার কথা তা উচ্চাভিলাষী আমলাদের কারণে কখনও স্থাপিত হয়নি। আমাদের দেশের ক্ষমতার অপব্যাবহার বহুবার ও নানাভাবে ঘটেছে; কিন্তু প্রকৃত গণতন্ত্রচর্চা কখনই হয়ে ওঠেনি। পক্ষান্তরে ক্ষমতা হস্তান্তর পদ্ধতি রাজনীতির অপসংস্কৃতিকে ধারণ করে সাধারণ জনগণকে শোষণের যাঁতাকলে পিষে চলেছে। সমগ্র বাংলার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, এখানে শিল্প ও পুঁজির যে অভাবনীয় বিকাশ ঘটেছিল; কতিপয় গোষ্ঠীর রাজনীতিতে ধর্মবাণিজ্য চর্চার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কারণে সেই বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। অসাম্প্রদায়িক দাবি করলেও বিভিন্ন দল ও জোট নিভৃতে সাম্প্রদায়িকতা চর্চা করে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও এখন রাজনীতিকে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়। যার ফলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটা ভুল রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠছে। বিতর্কিত এসব রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার কারণে অদূর ভবিষ্যতে দেশের মানুষ কতটা নিরাপদ ও শান্তি-সমৃদ্ধিময় জীবন উপভোগের সুযোগ পাবে তা অনুমান করতেও এখন গা শিউরে ওঠে। হ্যাঁ, আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করছি আর আশার বিষয় হচ্ছে জনগণের মাঝে ক্রমেই রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়ছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেমন আমাদের কাম্য হওয়া উচিত তেমনি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে জনগণের রাজনৈতিক বিশ্বাস আমাদের রাজনৈতিক পরিবর্তন ও উন্নয়নে কতটা মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। জনগণের রাজনৈতিক বিশ্বাস ও সচেতনতা চর্চায় আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও দলীয় মতাদর্শন বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমন্বয়কারীর ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হবে। আমরা অপেক্ষায় থাকব আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সকল প্রার্থী ও ভোটারদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইশতেহারে বেকার প্রসঙ্গ মোহাম্মদ শরীফ ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দামামা বেজে উঠেছে। রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রার্থীরা ব্যস্ত প্রচারণায়। বেশ কিছু কারণে এবারের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এই নির্বাচনের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা কম হয়নি। আর যাই হোক জনগণ সন্ত্রাস, সহিংসতা দেখতে চায় না। চায় না রাজনৈতিক স্বার্থে বলির পাঁঠা হতে। চায় দেশ এগিয়ে যাক, শান্তি প্রতিষ্ঠা পাক এবার। সকল মিথ্যা বুলির আশ্বাস নিপাক যাক। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার নিয়ে চলছে আলোচনা। প্রতিশ্রুতির চমক দেখাতে চায় ভাবি শাসকেরা। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে প্রার্থীরা। এ বছর প্রতিশ্রুতির বড় খাত হতে পারে তরুণদের নিয়ে চিন্তা। কারণ ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে তরুণ ভোটার আড়াই কোটি। যারা একটি সরকার গঠন ও পতনে সহজেই প্রভাব ফেলতে পারে। বেকারত্ব গোছাতে কি প্লান নিয়ে আসছে প্রার্থীরা? দেশে বর্তমানে বেকার সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। যাদের ৪৭ শতাংশই উচ্চ শিক্ষিত। যে দল ক্ষমতায় আসুক সম্ভাবনার এই তরুণদের কাজ দিতে হবে। করে দিতে হবে তারুণ্যের শক্তিকে ব্যবহারের খাত। না হলে তারুণ্যের এই সম্ভাবনা রুপ নিবে কঠিন সমস্যায়। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো চাকরি প্রদানের কথা বলে, কিন্তু সেটা সরকার সীমিত পর্যায়েই দিতে পারছে। এছাড়া উদ্যোক্তা হওয়ার যে পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছে, তা অনেকাংশেই কাজে আসছে না। এই সমস্যার খুব সহজে সমাধান করার পথ নেই। এছাড়া আরও একটা প্রজন্ম বেকার হয়ে ভিড় জমাতে চাইছে। এর জন্যও মূলে হাত দিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রচুর শিক্ষিত বেকার তৈরি করে। দক্ষ জনবল তৈরিতে ব্যর্থতার পরিচয় মেলে। মহাজোট সরকার ২৭ লাখ সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। এবার সময় এসেছে বেকারদের দিকে তাকাবার; বেকারদের সম্পদে রুপান্তরিত করার স্বপ্ন দেখার, দেখাবার। আজকের বেকাররাই দেশকে এগিয়ে নিবে, করবে সমৃদ্ধ। তাই ইশতেহারে বেকাররা পাক অধিক গুরুত্ব। ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ, কুমিল্লা থেকে অনেক প্রত্যাশা মাহবুব এ রহমান ॥ ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় ছোট ছিলাম। ক্লাস ফাইভের সদ্য সমাপনী পরীক্ষাটা শেষ করেছি মাত্র। চারদিকে বইছে নির্বাচনের তুমুল হাওয়া। কেমন উৎসবমুখর পরিবেশ। যতটুকু মনে পড়ে, নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা ভোট চাইতে এলে তাদের থেকে পোস্টার-লিফলেট কুড়াতাম। নির্বাচনী প্রচারণার মাইকের আওয়াজ শুনলে কেমন জানি ছুটে যেতাম। বিষয়টা খুব উপভোগ করতাম। সময় তখন নির্বাচন বলতে শুধু উৎসব আর আনন্দ এগুলোই বুঝতাম। মধ্যখানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গেলেও সে নির্বাচনের কোন স্মৃতি নেই। কারণ সেবার আমদের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন প্রয়োজন পড়েনি। নির্বাচন মানেই আলাদা একটা আনন্দ। উৎসবের আনন্দ। জাতীয় নির্বাচন মানেই একটা জাতীয় উৎসব। প্রতি পাঁচ বছর পর পর আসে মাহেন্দ্রক্ষণ। মানুষ তাঁর পছন্দ মতো প্রতিনিধিদের বেছে নেয়। যারা আগামী পাঁচ বছর জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবে। এই ভোটকে ঘিরে জনসাধারণের থাকে আলাদা প্রত্যাশা। একটা অঞ্চল বা জাতির উন্নয়নকল্পে একজন যোগ্য নেতা বা প্রতিনিধি কিন্তু অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একজন যোগ্য প্রতিনিধির হাতে দেশ পড়লে উন্নতিটা খুব দ্রুত সাধিত হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা সর্বক্ষেত্রেই দেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই সময়টা দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে। ভোটকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি জনগণের কাম্য নয়। এ সময় ভোটারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন। নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করবে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে। সুতরাং ভোটার হিসেবে আমাদের উচিত এমন নেতৃত্ব বাছাই করা, যারা আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। এমন দেশ গঠন করবে, যেখানে থাকবে না কোন খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, নারী নির্যাতনসহ কোন ধরনের অপকর্ম। শিক্ষার বিস্তার আর উদ্ভাবনে উচ্চ শিখরে আরোহণ করবে প্রিয় মাতৃভূমি। গর্বে বিশ্বের বুকে পতপত করে উড়বে লাল সবুজের পতাকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেষ হাসি জনগণের অলোক আচার্য ॥ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা রকম অপপ্রচার আমরা দেখতে পাচ্ছি। অনেক নামী-দামী পত্রিকার নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় একই রকম ওয়েবসাইট খুলে বিভিন্ন অপপ্রচার করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্যই সাধারণ মানুষের ভেতর নেতিবাচক ধারণা ইচ্ছাকৃতভাবে জন্ম দেয়া এবং সেই সঙ্গে সেই মূল পত্রিকার সম্মানহানি করা। এর থেকে রক্ষা পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন যে, এ থেকে রক্ষা পেতে হলে নিজেদের সংবাদের নির্ভরযোগ্যতা এমন পর্যায়ে নিতে হবে যেন ভুয়া সংবাদ দেখেই বোঝা যায় যে এই সংবাদটি ঠিক নয়। এক্ষেত্রে তথ্যসূত্র, উক্তি, সময় এবং ঘটনার পারিপাশির্^কতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে তারপর প্রচার করা। নির্বাচনী পরিবেশ বলতে বোঝায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন দেশে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটে। সবাই সমানভাবে সুযোগ পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এবং ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে এ রকম একটা পরিবেশ। এটা নির্বচানের আগে এবং পরে। সাধারণ মানুষ টেনশনে থাকে এই ভেবে যে কোন হানাহানি বা লুটপাটের মতো কোন ঘটনা ঘটবে কি না। এ জন্য প্রথমে যেটা দরকার তা হলো ফলাফল মেনে নেয়ার অভ্যাস। আমাদের দেশের রাজনীতিতে ফলাফল মেনে নেয়ার সংস্কৃতি নেই বললেই চলে। বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে দিয়েই দেশ নির্বচানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নির্বাচন মানে এক পক্ষ জয় পাবে এবং অন্য পক্ষ পরাজিত হবে। অনেক দেশে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরে সেই ফলাফল মেনে নিতে দেখি। কিন্তু আমাদের দেশে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। এ দেশেও যদি প্রার্থীদের ফলাফল মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরি হয় তা হলে শৃঙ্খলা অনেকটাই বজায় থাকবে। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে যেন কোনভাবেই জননিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর সব হামলা এবং লুটতরাজের মতো ঘটনায় আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার। ডিসেম্বর মাস বাঙালীর আবেগ এবং ভালবাসার মাস। কারণ এ মাসেই আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। আমরা পেয়েছিলাম একটি পতাকা, একটি ভূখন্ড এবং বাঙালী হিসেবে আত্মপরিচয়। এই বিজয়ের মাসে আমাদের নির্বাচন। দেশবাসী তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে উৎসবে মেতে ওঠার। বিজয়ের মাসে উৎসবে মেতে উঠবে বাংলাদেশের মানুষ। বিজয়টা যেন শেষ পর্যন্ত জনগণেরই হয়। নির্বাচনের যে আনন্দ তার ভাগ দেশের সকলের মাঝে ছড়িয়ে যাক। শেষ হাসিটা যেন জনগণই হাসে। পাবনা থেকে
×