ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈশ্বরদীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হত্যা

উত্তাপ বাড়ছে উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 উত্তাপ বাড়ছে উৎসবমুখর  ভোটযুদ্ধে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার একথা বলা হচ্ছে। মাঠের বাস্তবতাও তাই। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হয়। ২০০১ সালের এক অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে চার দলীয় জোট। সারাদেশে জঙ্গী, সন্ত্রাস, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের উত্থান ঘটে তখন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটকে প্রত্যাখ্যান করে ভোটাররা। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী পরপর দু’বার নির্বাচনে অংশ না নিলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে। তাছাড়া রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ঐক্যফ্রন্টের গায়ে ভর করে নানা নাটকীয়তার পর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অন্য দলগুলোও নির্বাচনমুখী। যার প্রেক্ষিতে এখন সারাদেশে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ। ৩৯ নিবন্ধিতসহ দুই শতাধিক রাজনৈতিক দল ও ৯৬ স্বতন্ত্র প্রার্থী এবার ভোটের মাঠে। কিন্তু প্রচারে দ্বিতীয় দিনেই উৎসবের পাশাপাশি দেশের অন্তত ১৮ জেলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন সরকার সমর্থিত দলের নেতা নিহত হয়েছেন। ফলে ভোটযুদ্ধে বেড়েছে উত্তাপ। কোথাও বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোথাও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যেও বড় দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাংচুর করেছে বিএনপি। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশ নিতে পারছে না যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াত। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দলটি অন্তত ২৪ প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন। একাধিক প্রার্থী স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সারাদেশে ২২টির বেশি জেলা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব জেলায় জামায়াত, শিবিরসহ উগ্রবাদীদের অবস্থান বেশ। তাই প্রতি জেলায় এসব বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। সূত্র বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দলের নিবন্ধন বাতিলসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিশোধ নিতে বিএনপির লেবাসে যে কোন সময় আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে জামায়াত। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন দলের নেতারা বলছেন, মূলত নির্বাচনের পরিবেশকে ঘোলাটে করতেই এ ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। যার অনেকটাই পরিকল্পিত হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েকে আরও কঠোর ভূমিকা পালনের তাগিদ দিয়েছে তারা। পাশাপাশি ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও উৎসমুখর রাখতে নির্বাচন কমিশনকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল গঠনের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ তাদের। অন্যাথায় সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় চোখ উপড়ে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার দুপুরে উপজেলার মুলাডুলি বাণিজ্যিক ইক্ষু খামার সংলগ্ন পুরনো ইটভাঁটির খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আসাদুল ইসলাম এরশাদ (৩৪) মুলাডুলি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান মোক্কাস প্রামাণিকের ছেলে। আনুষ্ঠানিক নির্বাচন প্রচার শুরুর পর এ পর্যন্ত সারাদেশে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটল। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও ঘুনের ঘটনায় বিব্রত প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারও। নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই খুন ও সংঘর্ষের ঘটনা সরকারকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কি ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বুধবার এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, নির্বাচন কেন্দ্রে যেকোন ধরনের হামলা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন কেন্দ্রে বড় ধরনের নাশকতা বা হামলার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। তাদের কাছে কোন চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ নয়। অতীতেও তারা জঙ্গী-সন্ত্রাস খুব দক্ষতার সঙ্গে নির্মূল করেছেন। তারা যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত। নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হত্যার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। যারা হত্যার রাজনীতি করে তারা অতীতেও (২০১৪ সালে) জ্বালাও-পোড়াও করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তারাই আজ এসব হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অতন্ত দক্ষ। তারা যেকোন হামলা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় যারাই দায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবেন।
×