ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগের ২ কর্মীকে বিএনপি খুন করেছে, প্রমাণ আছে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 আওয়ামী লীগের ২ কর্মীকে বিএনপি খুন করেছে, প্রমাণ আছে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এখনও সহিংস রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। পল্টনের সংঘর্ষ দিয়ে বিএনপি নির্বাচনের সহিংসতা শুরু করেছে। পল্টনে যে নারকীয় তা-ব তা এখন তারা চালাচ্ছে। মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় আওয়ামী লীগের দুই নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে বিএনপি। এর প্রমাণও আছে। এটা কোন সাজানো বানানো কথা নয়। বুধবার দুপুরে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে নৌকার প্রচারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মিথ্যাচার করছে, তারা এখনও সহিংস রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তিনি বলেন, এ দুটি হত্যার ঘটনায় (নোয়াখালী ও ফরিদপুর) বিএনপি আবারও প্রমাণ করল তারা সন্ত্রাসী দল। কানাডার আদালত ভুল রায় দেয়নি। তারা (বিএনপি) যে সন্ত্রাসের দল এটা প্রমাণিত। ওবায়দুল কাদের বলেন, সহিংসতা কারা করছে? এখন ফখরুল সাহেব সহিংসতার কথা, নাশকতার কথা বলছেন, সরকারী দলের নিপীড়নের কথা বলছেন, এই নিপীড়ন কারা করছে? তিনি বলেন, নোয়াখালীতে আমাদের এক কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার চোখে মরিচের গুড়া ব্যবহার করা হয়েছে, ইট দিয়ে মাথা থেতলে দিয়ে পরে তাকে গুলি করা হয়েছে। ফরিদপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, নয়াপল্টন অফিস থেকে আপনারা যা করেছেন তার নেতৃত্ব দিয়েছেন মির্জা আব্বাস। এখন তার মেয়ে পর্যন্ত সন্ত্রাসী। এটা ভাবতে অবাক লাগে, গোটা পরিবারকে সন্ত্রাসী বানিয়েছে। নিজেও সন্ত্রাস করে এখন পরিবারকে দিয়েও সন্ত্রাস করাচ্ছে। ভাষণ দিয়ে লাভ নেই, এ্যাকশনে যেতে হবে ॥ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন আর ভাষণ দিয়ে লাভ নেই, এ্যাকশনে যেতে হবে। অনেক কাজ, অনেক ক্যাম্পেন করতে হবে। প্রতিটি ঘরে নৌকা মার্কায় ভোট চাই সংবলিত চিঠি পৌঁছাতে হবে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ভাঙ্গা হাট কোথাও জমছে না। তারা বলছে গণজোয়ার, আমার কাছে বিষয়টি বড় হাস্যকর মনে হয়। এটা গণজোয়ার নয়, গণভাটা। নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির গণজোয়ার নয় গণভাটা শুরু হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত তিন-চার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম না। নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা ও আমার নির্বাচনী এলাকায় গেছি। আমি শুধু আপনাদের এতটুকু বলতে পারি, যা সত্য নয় তা প্রচার করে লাভ নেই। ৩০ তারিখ তো আমরা চাপা দিতে পারব না। যখন ফল বের হবে তখনই বোঝা যাবে। এবার প্রচারে গিয়ে এরকম জনস্রোত আমি এর আগে কখনও নৌকার পক্ষে দেখিনি। এটা আসলেই গণজোয়ার। আমি যা দেখেছি অভূতপূর্ব ও অচিন্তনীয়।’ বিএনপিতে গণভাটা চলছে ॥ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ বড় বড় কথা বলেন, তিনি গত পাঁচ বছরে পৌনে ৪ বছর তার নির্বাচনী এলাকায় যাননি। এখন নির্বাচনের কারণে তিনি যাচ্ছেন- এজন্য তাকে স্বাগত জানাই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলে তো নির্বাচন জমবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমতে হবে, না হলে নির্বাচন কিসের। উনি কিন্তু জমাতে পারছেন না, বিএনপির ভাঙ্গা হাট কোথাও জমছে না। নোয়াখালী-কুমিল্লায় তাদের কোন প্রার্থী এখনও মাঠে নেই, কিন্তু তারা বলছে গণজোয়ার। আমার কাছে বিষয়টি বড় হাস্যকর মনে হয়। এটা গণজোয়ার না, এটা গণভাটা। বিএনপিতে এখন গণভাটা চলছে। জোয়ারের মুখ গত ১০ বছরে ১০ মিনিটের জন্যও বিএনপি দেখেনি, এমনকি ছোট ঢেউ কোথাও কেউ লক্ষ্য করেনি। এর আগে মওদুদ সাহেব কতবার বলেছেন, চেহারা পাল্টে যাবে।’ শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হবে ॥ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মঙ্গলবার ব্যারিস্টার মওদুদ এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন। আমি বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছি, তার জনসভার লোক সংখ্যা ১৫শ’ থেকে ২২শ’। এটা যদি গণজোয়ার হয়, তাহলে গণজোয়ার কাকে বলে আমি জানি না। নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার সময় তাদের হাতে লাঠি-সোটা ককটেল এগুলো থাকে। এসবের বেধড়ক ব্যবহার করে আমাদের কিছু কর্মীকে আহত করেছে। এরপরে জনগণের প্রতিরোধের মুখে তিনি উপজেলায় একটি সভা-সমাবেশও করতে পারেননি। গণজোয়ার থাকলে তিনি জনগণের প্রতিরোধ ভেঙ্গে সভাস্থলে পৌঁছাতে পারতেন। তিনি এত বড় মাপের নেতা যে, তার সভাস্থল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটি চায়ের দোকানে বসে সাত-আটজন নিয়ে সভা করেন। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ পথে আসার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৫০ শতাংশ সুষ্ঠু ভোট কেন বলছেন, শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হবে।’ তিনি বলেন, আমি মির্জা ফখরুলের মতো সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব করি না। আপনারা নির্বাচনে থাকুন, আপনারা সরবেন না। আপনাদের শেষ পর্যন্ত থাকা দরকার। আপনাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু সেটা ৩০ তারিখে জনগণ বুঝিয়ে দেবে। সেটা দেখার জন্য হলেও আপনাদের থাকা উচিত। কেউ কেউ মতলবে আছেন, একসময় এই অজুহাত, ওই অজুহাত দিয়ে বলবেন নির্বাচনের পরিবেশ নেই। হারা যে কত শোচনীয় হারা হবে, সেটা আপনারা টের পাবেন। বহু আসনে ২০০৮ সাল থেকেও খারাপ অবস্থা হবে। আপনাদের সেই শোচনীয় পরাজয়ের জন্য অপেক্ষা করুন, শান্তিপূর্ণ পথে আসুন। নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ দেবেন না। আজকে রাজনীতি কোথায় গেছে? কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও মান্নারা এখন তারেক রহমানের নির্দেশে চলেন। তারা এখন তারেকের নাটাইয়ের টানে চলে, লন্ডন থেকে রশি টানে, আর লন্ডন থেকে রশি ছাড়ে।’ নির্বাচনে বিএনপির ভাঙ্গা হাট জমছে না ॥ সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দেখছে যে তাদের ভাঙ্গা হাট জমছে না। বিএনপির নির্বাচনের হাট ভেঙ্গে গেছে। আন্দোলনের হাট অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। আমি সড়ক পথে ফেনী থেকে নোয়াখালী গেছি। ধানের শীষের একটি স্লোগানও শুনিনি। তারা নির্বাচন করবে তাদের একটা প্রার্থীও মাঠে নেই। আর মাঠে থাকবে কেন? মনোনয়নের জন্য টাকা দিয়েছে, সেই টাকা পাচ্ছে না। এখন তারা কখনও মির্জা ফখরুলের অফিস ভাঙ্গে, কখনও তারা খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। আবার কখনও নয়াপল্টন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়, কখনও গুলশান অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়। মিডিয়ার একটি অংশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার ওই অংশটি আমাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেন করছে। ঠাকুরগাঁওয়ে ফখরুলের কর্মীরা বিক্ষোভ করেছে, কেউ কেউ তা প্রচার করেছে, অথচ আমাদের দুই কর্মী নৃশংসভাবে নিহত হলো, সেই খবর কোন মিডিয়াতে নেই। দুঃখের সঙ্গে বলছি, আপনারা কেন আমাদের সঙ্গে এই ব্যবহারটা করছেন? একটা দল হিসেবে আমরা তো অতিরিক্ত কিছু চাইছি না। আমাদের দুজন কর্মীকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, সেটা এত বড় কোন নিউজ না, হেডলাইন হলো ফখরুল। অথচ ফখরুলের গাড়ির একটি কাঁচও ভাঙ্গেনি। আমাদের আওয়ামী লীগের অফিস ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে, সে খবর কোথাও নেই। মিডিয়ার একাংশ আমাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ক্যাম্পেন করছে। মনে হচ্ছে, তারাই ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র। মনে হচ্ছে, তারাই বিএনপির কাগজ। বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত খবরের কাগজ একটি অংশ দলের হয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মিথ্যাচারে বাংলাদেশের জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। এতে নিজের (গণমাধ্যম) বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। ধানের শীষের নিচে ধামা-চাপাতি ব্যবহার করছে ॥ ওবায়দুল কাদের বালেন, ‘জামায়াতের কায়দায় তারা এখন প্রচার চালাচ্ছে। বড় বড় লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেছে। তারা লাঠির সঙ্গে পতাকা ব্যবহার করছে এবং সেটা প্ল্যাকার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ বিকেলে এইচটি ইমাম নির্বাচন কমিশনে যাবেন এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে। তারা ধানের শীষের নিচে ধামা-চাপাতি ব্যবহার করছে। এটা পুলিশ লক্ষ্য করেছে, বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকে জানানো উচিত।’ বিএনপির অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ করে বলছি প্রচারে আমি কোন সরকারী গাড়ি ব্যবহার করি না। আমার সঙ্গে এক মন্ত্রী হিসেবে ও একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যে নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা, সেই হিসেবে আমার সঙ্গে কিছু পুলিশ থাকে। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির পতাকা নামিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এটা সরকারী গাড়ি নয়। মওদুদ সাহেবের সঙ্গেও পুলিশ আছে, এটা তার নিরাপত্তার জন্য। তিনি মিথ্যাচার করছেন জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। তিনি ভেবেছিলেন তার নির্বাচনী এলাকায় গেলে হাজার হাজার জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত নেমে আসবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সভাপতির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মতো। যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি, তাদের এবারের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করার সুবর্ণ সুযোগ। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের অবশ্যই বিজয়ী হতে হবে। বিজয়ের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেছেন। তাঁর এ কর্মসূচীর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমরা স্বল্প পরিসরে রাজধানীতে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার শুরু করলাম। আজ থেকে নির্বাচনী প্রচারের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রচার কার্যক্রমে সংস্কৃতি, সাহিত্য, নাটক, ক্রীড়াবিদরা অংশগ্রহণ করবেন। সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্যোগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নৌকার প্রচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সরকারের টানা দশ বছরের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র নিয়ে তৈরি একটি খ-চিত্র প্রদর্শিত হয়। এ সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনী প্রচার উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-দফতর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ব্যবসায়ী নেতা বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, তারকাদের মধ্যে শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, শাকিল খান, তানভীন সুইটি, অরুণা বিশ্বাস, শাহরিয়ার নাজিম জয়, শুভ্র দেবসহ বিশিষ্ট অভিনয় শিল্পী, শিক্ষাবিদ, সঙ্গীত শিল্পী, ক্রীড়াবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা।
×