ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যত অত্যাচারই করুক শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

 যত অত্যাচারই করুক শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে বিএনপি ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনী প্রচারে ধানের শীষের প্রার্থীদের বাধা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন যত অত্যাচার করুক না কেন বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে। তিনি বলেন, ৫০ শতাংশ সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও ৩০ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগের খবর পাওয়া যাবে না। আর সে জন্যই পরাজয়ের ভয়ে নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে তারা। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। এর আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আরেক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন তফসিলের পর দলের প্রার্থীসহ ২ হাজার ১৭১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পুলিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তাই দেশে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। সর্বত্র নন-লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিরাজ করছে। সরকারী দল প্রচার চালালেও ধানের শীষের প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা হচ্ছে। প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। ধানের শীষের জোয়ার দেখে সরকার নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু নির্যাতন করে ধানের শীষের জোয়ার থামানো যাবে না। মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা ভোটারদের কাছে যেতে পারছি না। পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। সরকারী দল নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নৈরাজ্যজনক আচরণ অব্যাহত রাখবে। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদৌ হবে কি না, দেশের মানুষের মধ্যে এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কোন রাস্তা নেই। তাই সন্ত্রাসীরা এখন থেকেই ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ নেই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো দূরের কথা এখন সর্বত্র বিরাজ করছে নন-লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সারাদেশে একই অবস্থা। তিনি বলেন, সরকারী দলের সবকিছু আছে কিন্তু তাদের মাঠে ময়দানে ভোট নেই। আমরা বিশ্বাস করি শেষ পর্যন্ত জনগণের বিজয় হবেই। মওদুদ আরও বলেন, এ ধরনের নির্বাচন আমার জীবনে দেখি নাই। তফসিল ঘোষণার পর গ্রেফতার অভিযান আরও বেড়ে গেছে। তারপরও আমরা দৃঢতার সঙ্গে বিশ্বাস করি জনগণ এবার ভোট কেন্দ্রে যাবেই। এ সরকারের পতন অবশ্যই হবে। দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মওদুদ বলেন, আমার নোয়াখালীর নির্বাচনী এলাকাসহ (নোয়াখালী-৫) সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা সারাদেশে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের সহায়তায় নির্বাচন বানচাল করতে কাজ করছে। বিগত ৯ দিন ধরে আমার নির্বাচনী এলাকায় শতাধিক নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে যেন তারা নির্বাচনী কোন কাজে অংশগ্রহণ করতে না পারে। নিজের নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, ওবায়দুল কাদের ৭/৮টি গাড়ি ও শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে সরকারী সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে ক্ষমতা এবং প্রভাব দেখিয়ে সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে মাইকে বক্তব্য দেন। অথচ আমরা নিরাপত্তার অভাবে প্রচারে অংশ নিতে পারছি না। বিএনপি কার্যালয় ভাংচুর ও কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হচ্ছে। মওদুদ বলেন, সরকার বুঝে গেছে তাদের কোন ভোট নেই। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। তাই তারা এই হামলা মামলার পথ বেছে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কোন দাবিই মানা হয়নি। উল্টো এখন হামলা মামলা ও নির্যাতন বেড়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ। তফসিলের পর বিএনপির ২ হাজার ১৭১ জন গ্রেফতার- রিজভী ॥ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির প্রার্থীসহ ২ হাজার ১৭১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি আরও বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ১৮১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারী দলের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে ধানের শীষের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়ে নির্বাচনী প্রচারে বাধা, এলাকা ছাড়ার হুমকি, হামলা চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আহত করা ও গ্রেফতারসহ নানামুখী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে। রিজভী অভিযোগ করেন নির্বাচন নিয়ে জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং অফিসাররা ভয়ঙ্কর গোপন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন জেলা প্রশাসকরা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করছেন। আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি, রবিবার সকল জেলার প্রশাসকরা স্ব স্ব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ডেকে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত ভরাডুবির আশঙ্কায় অস্থির ও বেসামাল হয়ে পড়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে অনর্গল মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নেতাদের নামে ভিত্তিহীন কথা ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিবেশী একটি দেশকে নিজেদের পক্ষে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
×