ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট

ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রকাশ্যে তেল চুরি

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রকাশ্যে তেল চুরি

রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ১৩ ডিসেম্বর ॥ এখন আর রাত নয় দিনেই শুরু করেছে মহাসড়কে প্রকাশ্যে তেল চুরি। চট্টগ্রাম থেকে ফেনী জেলার পূর্ব পর্যন্ত অগণিত সিন্ডিকেট এই তেল চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারইয়াহাট পৌরসভার চিনকি আস্তানা এলাকা, মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে এমন অপরাধ এখন চলছে প্রকাশ্য দিবালোকে । এতে করে সর্বস্বান্ত হচ্ছে ভোজ্যতেল ও জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিভিন্ন ব্যবসায়ী। সরেজমিনে দেখা যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিনকি আস্তানা এলাকায় পর্দা দেয়া দোকানের ভেতরে একটি ট্রাক আড়াল করে রাখা। কয়েকজন শ্রমিক ট্রাকের ভেতর থেকে বোঝাই করা ড্রামগুলো থেকে পাইপ দিয়ে একে একে ভোজ্যতেল নামিয়ে নিচ্ছে। প্রতি ড্রাম থেকে প্রায় ১০ লিটার করে ১৪ টি ড্রাম থেকে নেয়া হয় তেল। এক পর্যায়ে আর্থিক লেনদেন সেরে ট্রাকটি আবার ঢাকার দিকে রওনা হয়। আবার এসময় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রাকটি থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য দাঁড়াতে বললে উল্টো জোরে চালিয়ে পালিয়ে যায়। আবার দোকানের যেসব কর্মচারীরা তেল চুরি করছিল তারাও দ্রুত পালিয়ে যায়। আশপাশে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন থেকে জানা যায়, এই চোরাই তেলের দোকানটি দুলাল নামের ব্যক্তির । এইভাবে চোরাই তেল বিক্রি করেই সে এখন পাশ্ববর্তী ভবন, মার্কেট ও কয়েকটি দোকানের মালিক। এই বিষয়ে দুলালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই আমি অনেক পরিশ্রম করে দুপয়সা আয় করি, অনেকের সহ্য হয় না। শুধু আমি না, এই রুটের অন্তত ৫০টি দোকান আছে এমন। শুধু আমি কি অপরাধী? বাকিরা কারা তাদের নাম জানতে চাইলে সে তাদের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করে। কোন প্রকার আইন-কানুন না মেনেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই, সীতাকুন্ড উপজেলা থেকে শুরু করে চৌদ্দগ্রাম অবধি গড়ে উঠেছে জ্বালানি তেলের অবৈধ চোরাই দোকান। এছাড়া বিভিন্ন হাটবাজারে ও এইসব দোকান দিন দিন বৃদ্ধি পেলে ও প্রশাসন রয়েছে নীরব। চট্টগ্রামের সিটিগেট-এর পর থেকে মীরসরাই উপজেলার ধূমঘাট পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ জ্বালানি তেলের দোকান। এসব দোকানে বিশেষ করে ভোজ্যতেল ও ডিজেল ক্রয় করে ট্রাক ভর্তি তেলের গাড়ি থেকে। এছাড়া কেরোসিন, পেট্রোল, অকটেন কোনটাই বাদ দেয় না কেনাবেচা থেকে। আবার এসব দোকানের সঙ্গে রয়েছে একটি চোরাই সিন্ডিকেট। এরাই আবার বাজারজাত করে। ফলে রাত নয় দিনে দুপুরেও চলছে পার্কিং করা গাড়ি থেকে তেল চুরি । গাড়িগুলো থেকে এভাবে জ্বালানিদ্রব্য চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের ঘানি টানছে গাড়ির মালিকরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলা এলাকার ছোট কমলদহ, সোনাপাহাড়, ধূমঘাট, ফেনীর ফাজিলপুর, মুহুরীগঞ্জ ও চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশেই রয়েছে এসব অবৈধ তেলের দোকান। ঝুপড়ি মতো ছোট্ট একটি দোকান থাকে কিন্তু পেছনে অনেক প্রকার ড্রাম থাকে। তেল চুরির পাইপসহ নানান সরঞ্জামই এই ব্যবসার পুঁজি। রাস্তার পাশে ওদের চোরাই সিগন্যাল হিসেবে একটি ড্রাম থাকে শুধু। যারা চুরি করে তেল বিক্রি করবে ওরাই ওদের চেনে। গাড়ি থামাতেই ইশারায় কথা সেরে দ্রুত তেল চুরি সেরে, লেনদেন করে সরে যায়। জোরারগঞ্জ থানার ওসি ইফতেখার হাসান বলেন, এমন কিছু অপরাধ প্রবণতার খবর ইতেমধ্যে আমরাও পেয়েছি, শীঘ্রই এইসব বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
×