ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংঘাতহীন নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ॥ রাষ্ট্রদূত

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 সংঘাতহীন নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ॥ রাষ্ট্রদূত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে নির্বাচনী সহিংসতা এড়ানো উচিত সব পক্ষের। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব পক্ষকেই নির্বাচনে সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানান। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, সহিংসতা গণতন্ত্রের কোন পন্থা হতে পারে না। তাই নির্বাচনী সহিংসতা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। আমরা সংঘাতহীন নির্বাচন দেখতে চাই। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। সেতুমন্ত্রীর দফতরে এই ব্রিফিং হয়। ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে এই পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের সংযত ও সহনশীল থাকার নির্দেশ দিয়েছি আমরা। এর আগে গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, সংসদ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ প্রচার দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে দেশটি নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অবাধ অংশগ্রহণের সুযোগও দেখতে চায়। গণমাধ্যম ও বিরোধী দলগুলো যেন তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যেবক্ষণ করছে। জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগির পরও বিভিন্ন আসনে শরিকরা নিজেদের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের ‘কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ভোট থেকে সরে যাবে বলে প্রার্থিতায় জোট নিয়ে এ কৌশল। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের একটা কৌশল আছে। কৌশলটা তো বলব না। আমাদের সুস্পষ্ট কৌশল আছে। এমনিই ছেড়ে দিয়েছি আমরা? আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ্যালায়েন্স দাঁড়িয়ে গেছে, আমরা না বুঝে কি দিয়েছি এটা। এরপরই মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন বুঝতে পারবেন। ওনারা (বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) যদি সরে (নির্বাচন থেকে) যায়? তারপর ? আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করতে দেব না।’ বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে -এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘না না, তারা সরে যাবে বলেই আমরা এ্যালায়েন্সকে নিয়ে কৌশল করেছি।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্য শরিক দল জোটের বাইরেও বিভিন্ন আসনে নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছে। জোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ১৭৪টি আসনে আলাদা প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। তবে মহাজোট থেকে ২৯টি আসন পেয়েছে জাপা এমন কথা বলা হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বশেষ জানানো হয়েছে ২৬টি আসন ছাড় দেয়ার কথা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টি-জাপা, বিকল্প ধারা ও জাতীয় পার্টি-জেপিকে নিয়ে মহাজোট গড়েছে আওয়ামী লীগ। ৩০০ আসনে মহাজোটের প্রার্থী ঠিক হওয়ার পরও দেখা গেছে, দেড় শতাধিক আসনে অন্য দলগুলোর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। শরিক দলগুলোর প্রার্থী থেকে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে উদ্বেগের মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে বৈঠকের পর দলের সাধারণ সম্পাদক কাদের ‘কৌশলের’ কথা জানালেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি, ১৪ দল, বিকল্প ধারার মধ্যে আসন ভাগাভাগি হলেও তার বাইরে অন্য দলগুলোর নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে ভোট করায় আওয়ামী লীগের আপত্তি নেই। এতে ভোটের ফলে প্রভাব পড়বে না- প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, আমাদের একটা কৌশল আছে, কৌশলটা তো বলব না। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে মন্ত্রী কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচন আশা করে। আমি বলেছি, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ অনেক ভাল। তাই প্রত্যাশা করছি, পিসফুলি হবে। সরকার কোন হস্তক্ষেপ করবে না। শুধু নির্বাচন কমিশন সহযোগিতা করবে যাতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা এই আশ্বাস আবারও দিয়েছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, সহিংসতা এড়িয়ে চলতে তার দল ‘যথাসাধ্য’ চেষ্টা করছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক ভায়োলেন্স চরম রূপ নিয়েছে নোয়াখালী ও ফরিদপুরে। ক্যাজুয়াল্টির দুইজনই আওয়ামী লীগের। সরকার হিসেবে এখানে ভায়োলেন্সকে এড়িয়ে চলেছি যথাসাধ্য। আমাদের নেত্রীর সংযম ও সহিষ্ণুতা প্র্যাকটিস করার বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। প্রচারে বাধা পাওয়া নিয়ে বিএনপির অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনি একজন প্রার্থী, আপনার পক্ষে জনমত যদি প্রবল হয়, কেউ বাধা দেয়ার সাহস পাবে না। কারও মিটিংয়ে পুলিশ বাধা দিয়েছে সেরকম কী হয়েছে? একটা-দুটো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটতেও পারে। এখন কারও যদি অবস্থান দুর্বল হয়, দুর্বল অবস্থানের কারণে তারা পিছিয়ে যায়, অবস্থানটা সবল হলে এগিয়ে যেতে পারত।
×