ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের বড় অস্ত্র ১০ বছরের উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 আওয়ামী লীগের বড় অস্ত্র  ১০ বছরের উন্নয়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের বড় অস্ত্র ১০ বছরের উন্নয়নের চিত্র। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ যতটা এগিয়েছে বলা হয় এর আগের ৪০ বছরেও সেই কাজ হয়নি। আগে বাংলাদেশ বড় প্রকল্প করতে ভয় পেলেও এখন ছোট প্রকল্প গ্রহণের কথা চিন্তাই করে না। সমৃদ্ধ বাংলাদেশের এই চিত্র নিয়েই ভোটারদের কাছে টানছে আওয়ামী লীগ। উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষার আভাস মিলছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায়। তবে এবার নবীন আর প্রবীণ তারকারা উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে এখনও বিএনপির পক্ষে এ ধরনের প্রচার কাউকে চালাতে দেখা যায়নি। উল্টো জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিমের একটি ছবি বিকৃত করে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত এবং বিকৃত ছবি দিয়ে ফেসবুকে এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার শহীদ মিনার থেকে বরেণ্য অভিনয় শিল্পী, চিত্রশিল্পী, সঙ্গীত শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কাদের সমাবেশে বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের মানুষ পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছে। এদেশের মাটিতে আর সেই যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে টিকিয়ে রেখেছে বিএনপি। মুক্তিযোদ্ধা ‘বাই চান্স’ জেনারেল জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি। তিনি এ এদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধী আর খুনীদের রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। বিএনপিকে খুনীদের দল উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দল খুনীদের দল, দুর্নীতিবাজদের দল। যারা পাঁচ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আজকে এই দলের নেতা পলাতক, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আজকে কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসিন মন্টু, কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্ব দিচ্ছে লন্ডন থেকে খুনী, দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান। সে একসময়ের হাওয়া ভবনের যুবরাজ। আগামী নির্বাচনেই পরিষ্কার হয়ে যাবে দেশবাসী শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে থাকবে নাকি খুনী, দুর্নীতিবাজ, সাম্প্রদায়িক শক্তির পক্ষে থাকবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে দাবি করে কাদের বলেন, এই প্রচ- রোদের মধ্যে আপনারা বসে আছেন, এটা একটা চেতনার বিষয়, আদর্শের বিষয়। এই আদর্শ, চেতনা, মূল্যবোধ আপনাদের এখানে বসিয়ে রেখেছে। এটা দেখে বোঝা যায় আগামী নির্বাচনে আমরাই বিজয়ী হবো। শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন হাসান ইমাম, মনোরঞ্জন ঘোষ, জাহিদ হাসান, বাঁধন, শমী কায়সার, রোকেয়া প্রাচী, শাকিল খান, তানভীন সুইটি, মাহফুজ আহমেদ, অরুণা বিশ্বাস, তারিন, শামীমা তুষ্টি, এস ডি রুবেল, সায়মন, তারেক সুজাত, সত্যজিৎ দাস রুপু, চিত্রনায়িকা নতুন, জিয়াউল আহসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপসম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াসেফ ওসমান। প্রচারাভিযানের প্রথম দিনে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, জাতীয় সংসদ ভবন হয়ে ধানম-ি ৩২ নম্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে ৮টি ট্রাকে দেশের বরেণ্য শিল্পীরা সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগের প্রচারপত্র বিতরণ করেন। এই প্রচারপত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বর্তমান সরকারের সময় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষ মানব সম্পদ এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র ছিল। মোশারফ করিমের ছবি বিকৃত ॥ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সব থেকে আলোচিত অভিনেতা মোশারফ করিম। তিনি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। তার ছবি বিকৃত করে ভোট চাওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন বিএনপি কর্মীরা। বরেণ্য শিল্পীরা নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন। এটি দেখে আর সহ্য না হওয়ায় এমনটি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোন এক বিএনপি সমর্থক মোশারফ করিমের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেই ছবিতে দেখা যায় তারেক রহমানের নির্দেশে মোশারফ করিম ধানের শীষে ভোট চাইছেন। কিন্তু দুটি ছবি পাশাপাশি দিয়ে ফেসবুকে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা মোশারফ করিম এর ঘনিষ্ট বন্ধু শামীম জামান। এ প্রসঙ্গে শামীম জামান বলেন, মোশারফ করিমের একটি ফ্যান পেইজ রয়েছে। সেই পেইজ এর একটি ছবি নিয়ে তা বিকৃত করা হয়েছে। ছবিটি দুই তিন বছর আগের। প্রকৃত ছবিতে মোশারফ করিম এর হাতে তারই একটি প্রতিকৃতি সদৃশ ছবি দেখা যায়। এ বিষয়ে শামীম জামান জানান, প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার জন্যই তিনি দুটি ছবি পাশাপাশি দিয়ে শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, আমি মোশারফকে অনেক দিন ধরেই চিনি। মোশারফ অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনায় বিশ^াসী। তার মতো জনিপ্রয় অভিনেতাকে নিয়ে এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। ঢাকা-১০ এ তাপস ॥ উন্নয়নের সাতটি বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে গেলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় তিনি কলাবাগান থানার ডলফিন গলির বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানে নৌকার পক্ষে প্রচার চালান ও ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। প্রচারকালে তাপস নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি ৭টি পরিকল্পনার কথা ভোটারদের মাঝে তুলে ধরেন। তার পরিকল্পনাগুলো হচ্ছেÑ যানজট নিরসনে মেট্রোরেলের সংযোগ ধানম-ি ২৭ নম্বর থেকে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড় হয়ে নিউমার্কেট দিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। এর ফলে এলাকার যানজট প্রায় ৬০ শতাংশ কমবে। এ ছাড়াও ধানম-ি ২নং সড়ক থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ, হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্পের খালি জমিতে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন মডেল আবাসিক এলাকা স্থাপন, শহীদ শামছুন্নেছা আরজু মনি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা, কাঁটাবনে বহুতল বিশিষ্ট শহীদ লে. কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, বহুতল বিশিষ্ট হাজারীবাগ কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ এবং নিউমার্কেটে বহুতল পার্কিং লট নির্মাণ করা। ঢাকা-১২-তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ॥ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিজয় সরণি থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে তেজকুনি পাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে নামেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা দেখেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এটা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হতে পারে। বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, সুনির্দিষ্ট ওয়ারেন্ট ছাড়া কাউকে ধরা হচ্ছে না এবং নির্বাচন কমিশনে আমাদের যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আছেন তাদের জানিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ধরা হচ্ছে। আপনারা জানেন যে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের ধরা না হলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ঢাকা-১৮ আসন ॥ আসনটিতে উত্তরখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এর জন্য প্রথমেই মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। প্রচার অভিযানে জোট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণকে রক্ষা করতে আপনারা ধানের শীষে ভোট দিন। এই ধানের শীষ খালেদা জিয়ার মার্কা নয়, এটি দেশের ১৮ কোটি মানুষের মার্কা। আপনারা সবাই ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করুন। আপনাদের একটি ভোট খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত করবে। প্রচার অভিযানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
×