ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এড়াতে ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮

 জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এড়াতে ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে নানা রকম পদক্ষেপের কথা শোনা যায়। ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে বাড়তি কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূর করার উদ্যোগ নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ছাইয়ের মেঘ বায়ুমন্ডল ঢেকে দেয়। গন্ধকের কণা বিশাল উচ্চতায় উঠে সূর্যের আলোর পথে বাধা সৃষ্টি করে। তাপমাত্রা কমে যায়। খুব বড় আকারের অগ্ন্যুৎপাতের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে এমনকি আধ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা এবার প্রাকৃতিক এই ঘটনা নকল করার চেষ্টা করছেন। বায়ুম-লে গন্ধকের কণা ছেড়ে দিয়ে তাঁরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মোকাবেলা করতে চান। জার্মানির মাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউটের উলরিকে নিমায়ার বলেন, ‘আমাদের ধারণা, প্রযুক্তিগতভাবে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে গন্ধক ছেড়ে দেয়া সম্ভব।’ অতি ক্ষুদ্র এই কণা ঠিক রিফ্লেকটরের মতো সূর্যের আলোর একটি অংশ ঢেকে দিতে পারে। পৃথিবীর উপর এমন সুরক্ষার ছাতা মেলে ধরলে উষ্ণতা কমানো সম্ভব হবে। শুনতে খুব সহজ মনে হলেও এমন আইডিয়া কতটা বাস্তবসম্মত? উলরিকে নিমায়ার বলেন, ‘জলবায়ুর প্রণালী এতই জটিল, যে আমরা এমনকি হিসাবের মডেল দিয়েও অপ্রত্যাশিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার পূর্বাভাষ দিতে পারি না। তার অপ্রত্যাশিত পরিণতি সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারি না।’ তা সত্ত্বেও গোটা বিশ্বে বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তির সাহায্যে জলবায়ুর উপর হস্তক্ষেপের প্রক্রিয়ার খোঁজ করছেন। পৃথিবীর গতি-প্রকৃতির রাসায়নিক ও পদার্থগত কার্যপ্রণালীর উপর হস্তক্ষেপ ‘ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে পরিচিত। হেল্মহলৎস সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস ওশলিস আমাদের পৃথিবীর উপর এমন হস্তক্ষেপের পরিণতি নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রো. ওশলিস বলেন, ‘আমরা ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দুটি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য করি। প্রথমটি উপসর্গ হিসাবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মোকাবেলা করতে সূর্যের আলোর তীব্রতা কমানো বা ছায়া সৃষ্টির চেষ্টা করে। দ্বিতীয় পদ্ধতি জলবায়ু পরিবর্তনের উৎসে আঘাত করে, অর্থাৎ বায়ুম-ল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সরিয়ে মহাসাগর অথবা মাটিতে নিয়ে আসে।’ অপেক্ষাকৃত ছোট আকারে হস্তক্ষেপের প্রভাবও বিশাল হতে পারে। আন্দ্রেয়াস ওশলিস-এর অসংখ্য কম্পিউটার সিমুলেশনে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু আইডিয়া আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত সহজ মনে হতে পারে। যেমন মহাসাগরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা রাখার উদ্যোগ। কারণ উষ্ণ পানির তুলনায় শীতল পানি অনেক বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধরে রাখতে পারে। বিশাল পাম্পের মাধ্যমে সমুদ্রের গভীর থেকে শীতল পানি তুলে উপরের স্তরে আনা যেতে পারে। সমুদ্র তখন বায়ুম-লের বাড়তি কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেবে। সমুদ্রবিজ্ঞানী প্রো. আন্দ্রেয়াস ওশলিস বলেন, ‘মডেল সিমুলেশনের মাধ্যমে আমাদের ধারণা হয়েছে, যে এভাবে আমরা বর্তমান কার্বন নির্গমনের ১০ শতাংশ ক্ষতি পূরণ করতে পারি। কিন্তু তার জন্য দক্ষিণের মহাসাগরের বিশাল ইকোসিস্টেমের উপর হস্তক্ষেপ করতে হবে। সেখানে এ্যালজির বৃদ্ধি ও অক্সিজেন কমে যাবে। প্রশ্ন হলো, আজ যে নির্গমন ঘটছে, তার মাত্র ১০ শতাংশ কমাতে আমরা কি সত্যি এমনটা করতে চাই?’ উত্তরমেরু সাগরে পরীক্ষা চালিয়ে একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে। গবেষকরা সার প্রয়োগ করে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন চাষ করেছেন। সেগুলো বিকশিত হওয়ার সময় ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধরে রাখে। তারপর প্ল্যাঙ্কটন সমুদ্রের তলদেশে তলিয়ে যায়। এভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিরাপদে দূর করা যায়। স্রোতের মাধ্যমে সেই সার গোটা বিশ্বের মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও বড়জোর ১০ শতাংশ নির্গমন কমানো সম্ভব হবে। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
×