ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই তারকা প্রার্থীর লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 দুই তারকা প্রার্থীর লড়াই

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী ॥ নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট) আসনে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় মহাজোট থেকে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বৃহস্পতিবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর বাদলের নেতৃত্বে স্থানীয় ইসলামী ফাউন্ডেশনে মতবিনিময় সভা করেছেন দলের নেতারা। তাছাড়া চরহাজারী ৯নং ওয়ার্ডের কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ ও চর পার্বতীর রহিমিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ ও মতবিনিময় করেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে নির্বাচনী প্রচারে অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীরা প্রচারে ব্যস্ত। বড় দুই দলের দুই তারকা খচিত ও হেভিওয়েট নেতার নির্বাচনী লড়াই নিয়ে এরই মধ্যে এ এলাকাসহ সাড়াদেশে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ঝড় উঠছে দুর্গম চরাঞ্চল বেষ্টিত চায়ের দোকানগুলোতেও একই সুর কোন প্রার্থী জয় লাভ করতে পারবে। দলীয়ভাবে কোন দলের অবস্থা কেমন। পাশাপাশি বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা সমালোচনা চলছে। তাঁর পক্ষে প্রতিটি নির্বাচনী জনসংযোগ জনজোয়ারের সৃষ্টি হয়। দুই উপজেলার সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণেই প্রমাণ করে দেয় তাঁর জনপ্রিয়তার তরুণ, যুবক বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশু-কিশোর পর্যন্ত সকলের মুখে মুখে ওবায়দুল কাদেরের নাম। সরেজমিনে জানা গেছে, সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ বিএনপির চাইতে কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে বেশ শক্তিশালী। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন তেমন কোন তৎপরতা না থাকায় বিএনপির সংগঠন নির্বাচনে গিয়ে লড়াই করার মতো গোছানো নয়। উপজেলা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতে, নোয়াখালী-৫ আসনে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থানে আসার পেছনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলসহ নেতৃবৃন্দরা বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। দলীয় নেতাদের দূরদর্শিতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, দলের প্রতি আন্তরিকতা, দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচনমুখী করা ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওবায়দুল কাদেরের পক্ষে ভোট চেয়ে গণসংযোগ এবং গত ১০ বছর ধরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- সঠিকভাবে পরিচালনাসহ তার ব্যক্তিগত ইমেজ দিয়ে দলকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরের সহধর্মিণী ইসরাতুন নেসা কাদের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুুল কাদের মির্জা ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের নেতা ফখরুল ইসলাম রাহাতও ভূমিকা রেখে চলেছেন। জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের উপকূলীয় এলাকায় নদীভাঙন রোধে ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুছাপুর ক্লোজার প্রকল্প বাস্তবায়ন, ৩২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়ক ও সেতু প্রকল্পের মতো বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নসহ উপজেলার প্রত্যেকটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি মসজিদ, মক্তব, মন্দির, রাস্তাঘাট, পুল কালভার্ট, সরকারী দফতরের মধ্যে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সুদৃশ্য থানা ভবন নির্মাণ অন্যতম। এসব উন্নয়নমূলক কাজ ওবায়দুল কাদেরকে নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে দল ক্ষমতায় থাকাকালে মওদুদ আহমদও এলাকায় কিছু উন্নয়ন কাজ করেছেন। এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জে ২৩ বেল্ট রেগুলেটর নির্মাণ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা অন্যতম। স্থাপিত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। আগামী সংসদ নির্বাচন বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত জানান, ওবায়দুল একজন সফল মন্ত্রী। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর সারা দেশের ন্যায় কোম্পানীগঞ্জেও দলকে সংগঠিত করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে ওবায়দুল কাদেরের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কারণে নোয়াখালী-৫ আসনে তিনি একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বলে সকলে নিশ্চিত মনে করি। দলীয় প্রার্থী বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই সেলিম জানান, এ আসনে আমাদের প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আমরা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। কী কারণে জয়লাভ করতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তা সরকার পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ সরকারের আমলে বিদ্যুত, গ্যাস ও চালের মূল্য বেড়েছে। সৃষ্টি হয়নি কর্মসংস্থানের সুযোগ। উল্টো বিঘ্নিত হয়েছে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। সর্বোপরি আওয়ামী লীগের নেতিবাচক কর্মকান্ড ও জোট সরকারের আমলের উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে সাধারণ মানুষ ধানের শীষে ভোট দিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নির্বাচিত করবে।
×