ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভা

‘খামোশ’ বললেই জনগণ চুপ হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

‘খামোশ’ বললেই জনগণ চুপ হবে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুদ্ধাপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের স্বজন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামিদের স্বজন, দুর্নীতিবাজ ও তাদের স্বজন এবং বাংলা ভাই ও জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকদের মনোনয়ন দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে এই অপরাধীরা যেন ভোট না পায়। তিনি বলেন, যারা আজকে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে রয়েছে তারা রাজনীতিটা কোথায় নামিয়েছে? মনে হয় রাজনীতিটাকে অপরাধী জগতের রাজনীতিতে পরিণত করেছে। রাজনীতি হবে মানুষের কল্যাণে, উন্নয়নের জন্য। আজকে সেখানে এই অপরাধী যদি এসে যায় তাহলে দেশের ভাগ্যে কী ঘটবে? এ বিষয়ে দেশের জনগণকে সচেতন থাকতে বলব। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ড. কামাল হোসেন, সুলতান মনসুর, কাদের সিদ্দিকী ও মান্নারা এত আবেগ দিয়ে জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা বলেন। এত আবেগ দিয়ে লেখা, এত বিবেক! কোথায় গেল সেই বিবেক? ওই ধানের শীষেই তারা নির্বাচন করছেন! কিভাবে তারা অপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলান? রাজনীতিকে কোথায় নামিয়েছেন তারা? তারা ক্ষমতায় গেলে দেশের ভাগ্যে কী ঘটবেÑ সেটাই আমার প্রশ্ন। ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, তাদের লজ্জা একটু কম লাগে বলেই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ‘খামোশ’ বলতে পারেন। তবে খামোশ বললেই জনগণ চুপ হবে না। মানুষের মুখ খামোশ হবে না। শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বক্তব্য রাখেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পারভীন জাহান কল্পনা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ আলীম চৌধুরীর কন্যা ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের কন্যা শমী কায়সার প্রমুখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামীসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে অন্য সাজাপ্রাপ্তদের স্বজনদের সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কামাল হোসেনরা এ লজ্জাটা রাখবে কোথায়? এটাই আমার প্রশ্ন। তারা লজ্জা পায়? নাকি পায় না? ওদের অনেকে আবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গেও নাকি কথা বলছেন? তারা আসলে কী চায়? প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যাদের আমরা পরাজিত করলাম, তাদের দোসরদের ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হলো! যারা এক সময় আমাদের দলে ছিল, এখন ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তারা বিএনপি জোটের সঙ্গে চলে গেল, তারা কিভাবে নির্বাচন করবে? এই প্রশ্নের জবাব কি তারা দিতে পারবে? তাদের আগের বিবেকগুলো কোথায় গেল? প্রধানমন্ত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, তাতে যুদ্ধাপরাধীদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোন অধিকার ছিল না অথচ যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত, আজ আমরা দেখি তাদের পরিবারের সদস্যদের বিএনপিসহ যে ঐক্য করা হয়েছে, তাতে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের (বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) কাছে আমার প্রশ্ন- যারা এত বড় অপরাধ করল, আর যে পাকিস্তানী বাহিনীকে আমরা পরাজিত করলাম, তাদের এই দোসরদের কিভাবে ধানের শীষে মনোনয়ন দেয়া হলো? এ প্রশ্নের জবাব জাতির কাছে তারা দিতে পারবে কিনা? তিনি বলেন, আমেরিকার কংগ্রেস থেকে একটি তালিকা পাঠিয়েছে সেখানেও জঙ্গীবাদী হিসেবে এদের নাম রয়েছে এবং ইতোমধ্যেই কানাডার আদালত বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এরা যদি নির্বাচিত হয়ে দেশের ক্ষমতায় আসে তাহলে সেই দেশের অবস্থা কোথায় দাঁড়াবে? মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা কিভাবে থাকবে? এদেশে শান্তি কিভাবে থাকবে এবং কিভাবে অগ্রগতি হবে? কোনদিনও হবে না যোগ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওয়াদা ছিল জাতির কাছে ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। সে অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করি এবং অনেকের বিচার হয়েছে ও রায় কার্যকর হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজকে আমরা দেখি যারা এই মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত তাদেরই পরিবারবর্গকে, আপনজনকে নিয়ে বিএনপিসহ জোট করা হয়েছে। সেই জোটে অনেকেই এখন আছে। তিনি বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। তিনি বলেন, আইয়ুব খান আমল থেকেই দেখা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচাররা ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য একটি দল গঠন করে। ক্ষমতা টিকে থাকতে প্রহসনের নির্বাচনও করে। বাংলাদেশেও জেনারেল জিয়াউর রহমানও তাই করেছিলেন। অপরাধীদের ভোট না দিতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধীদের ভোট দেবেন না। এই অপরাধীরা যেন আর কখনও নির্বাচিত হতে না পারে। সে যে অঞ্চলে এরা দাঁড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করুন। সম্পূর্ণভাবে এদের বয়কট করুন। এরা ক্ষমতায় এলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এদেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে, এদেশের ভাগ্য গড়ার জন্য আজকে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নটা হচ্ছে সেটাও থেমে যাবে। আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের আমলের ব্যাপক সাফল্য ও উন্নয়নগুলো ভোটারদের সামনে তুলে ধরার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সারাবিশ্বে এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোলমডেল। সরকারের এসব উন্নয়নের কথা ভোটারদের সামনে তুলে ধরে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হবে।
×