ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বল্প পরিসরে সেনাবাহিনী যাচ্ছে জেলায় জেলায়

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 স্বল্প পরিসরে সেনাবাহিনী যাচ্ছে জেলায় জেলায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইসিতে দায়ের করা বিএনপির বেশিরভাগ অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অনেকের নামে আগেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। কিন্তু তারা আত্মগোপনে থাকায় তখন গ্রেফতার করা যায়নি। নির্বাচন উপলক্ষে এদের অনেকেই প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে বলে মন্তব্য করেছেন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ। ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামালের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, তার বিষয়ে কেউ ইসিতে অভিযোগ করেননি। শুক্রবার বিকেলে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দিন এসব মন্তব্য করেন। সকালে মিরপুরে ড. কামালের গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ৩শ’ আসনে নির্বাচন হচ্ছে। নেতিবাচক যেসব ঘটনা ঘটছে, তা তুলনামূলক কম। তারপরও পুলিশকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কেউ ইসিতে অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিএনপির অভিযোগের বেশিরভাগেরই সত্যতা নেই। যেসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, সেগুলো অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠ নেতাদের হয়রানি না করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়গুলো ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে ইসিতে প্রতিবেদন পাঠাবে। কমিশন থেকেও পুলিশকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সিনিয়র কোন নেতাকে যেন হয়রানি করা না হয়। কিছু অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ৭ দিন আগে সব আসনে ব্যালট পেপার পৌঁছে যাবে। ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুধু মাঠ পর্যায়ে প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ বাকি রয়েছে। প্রস্তুতির মধ্যে আরেকটা বিষয় রয়ে গেছে, তা হলো ব্যালট পেপার তৈরি। নির্বাচনের ৭ দিন আগে ৩শ’ আসনে আমরা ব্যালট পেপার পৌঁছাতে সক্ষম হব। কিছু কিছু এলাকা সম্পর্কে হাইকোর্টের নির্দেশনা আসছে। সেগুলো সমন্বয় করে ব্যালট পেপার তৈরি করা হবে। যেসব আসনে সমস্যা নেই সেগুলোয় ব্যালট ছাপা শুরু হয়েছে। অন্যগুলো যথাযথ সময়ে তৈরি করে এলাকায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। তারা রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। নির্বাচনে তিন ধরনের বিচারক মাঠে থাকবে। ৬৫২ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আচরণবিধি প্রতিপালনে কাজ করছেন, ২৪৬ যুগ্ম জেলা জজ নির্বাচনে অনিয়ম খতিয়ে দেখছেন। নির্বাচনের সময় চারদিন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৬৪০। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে হাজার খানেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। তারা বিচারিক দায়িত্ব পালন করবেন। আলাদাভাবে কাউকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করেন। ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিশ ব্যবহার করতে পারবে। অন্যরা বহন করতে পারবে, কিন্তু ব্যবহার করতে পারবে না। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হচ্ছে। সব দল নির্বাচনে আসছে। তাই মোবাইল ব্যবহারের বিষয়ে এমন প্রস্তাব এসেছে। সশস্ত্র বাহিনীর ছোট ছোট টিম যাচ্ছে জেলায় জেলায় ॥ আজ শনিবার ছোট ছোট টিম আকারে জেলায় জেলায় যাচ্ছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। মূলত নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো ও নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য জেলায় জেলায় সশস্ত্র বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে ২৪ তারিখ থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। কমিশন সচিব বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে-পরে মিলিয়ে ১০ দিন সেনা সদস্য মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের ছয় দিন আগে মোতায়েন হবে সেনাবাহিনী। ভোটের পরও দু দিন নির্বাচনী এলাকাগুলোয় থাকবেন তারা। ইসির সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মূলত স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্বাহী হাকিমও চেয়ে ইসি যে চিঠি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে আচরণবিধি প্রতিপালনে ভোটের দু’দিন আগে থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত নির্বাহী হাকিম নিয়োগ করা প্রয়োজন। সশস্ত্রবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসারের মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী হাকিম নিয়োগের প্রয়োজন হবে। গত ৮ নবেম্বর তফসিল ঘোষণার সময়ই সিইসি বলেছিলেন, নির্বাচন চলাকালে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বেসামরিক প্রশাসনকে-প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ‘এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ বিধানের অধীনে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন থাকবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকেও সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ॥ নির্বাচনে সেনাবাহিনী কি ধরনের দায়িত্ব পালন করবে তাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ইসির এক কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতি জেলা/উপজেলা/ মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা দেবেন তারা। রিটার্নিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদা ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষে কোন প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না তারা। ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার এবং সংশ্লিষ্ট ও বিধি অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। উপকূলীয় এলাকায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে নৌবাহিনী। ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতি জেলায় নিয়োজিত রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের কম-বেশি করা যাবে। সেনা সদরের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা সদস্য রিজার্ভ হিসেবে মোতায়েন থাকবে। সড়ক/মহাসড়কে নিরাপদ যান চলাচল ও স্বাভাবিক আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে। বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহনে সহায়তা করবে। ইভিএম ব্যবহার হবে যে ৬ এলাকায় কারিগরি সহায়তায় (অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া) ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবে। তারা ছয়টি নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত নিরাপত্তা বিধানে নিবিড় ও গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী তাদের আওতাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার মধ্যে যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারে ভোট হবে, সেসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবে তাদের নিরাপত্তা বিধানসহ প্রয়োজন অনুসারে আনুষঙ্গিক বিষয়াদির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর টিম ওই ছয় এলাকায় ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সংক্রান্ত নিরাপত্তা বিধানে নিবিড় ও অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তারা দায়িত্ব পালন করবে। ইসি কর্মকর্তা জানান, ২০০১ সালের আগে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত কোন বিধান আরপিওতে ছিল না। ১৯৭৩ থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও জেলা/থানা/উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। ২০০১ সালের এক অধ্যাদেশে নির্বাচনে ল এনফোর্সিং এজেন্সির সংজ্ঞায় ‘ডিফেন্স সার্ভিস’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালে তা বাদ দেয়া হয়। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন জানান, বিজিবি সদস্যদের ১২ দিনের জন্য মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ২২ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তারা। সেই সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে ৬ দিনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৬ থেকে ৩১ ডিসেম্বর নিয়োজিত রাখা হবে তাদের। ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের ভোটের দুই দিন আগে ২৮ ডিসেম্বর থেকে মোতায়েন করা হবে।
×