ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারাদেশে প্রার্থীরা এখন ব্যস্ত গণসংযোগে

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

 সারাদেশে প্রার্থীরা এখন ব্যস্ত গণসংযোগে

শরীফুল ইসলাম ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১৪ দিন। এখন নিজ নিজ এলাকায় প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা। আর নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় কিছু সহিংস ঘটনার কারণে নির্বাচনী মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে কেন্দ্র থেকে সরকারী দল ও বিরোধী দলের সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত রাখার নির্দেশ দিচ্ছেন। নির্বাচন কাছাকাছি চলে আসায় সারাদেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রার্থীরা এখন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে প্রতিটি সংসদীয় এলাকাকে কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করে আঞ্চলিক সমন্বয় কেন্দ্র ও কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা হচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রভিত্তিক পুলিং এজেন্টসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নিজ নিজ দলীয় লোকদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হচ্ছে। কিভাবে অধিকতর যোগ্য লোকদের এসব দায়িত্ব দেয়া যায় এ নিয়ে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী পোস্টার, লিফলেট ইশতেহার প্রণয়নের ক্ষেত্রেও চমক সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর প্রচার জোরদারে নেয়া হচ্ছে নানা কৌশল। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ এ জোটের শরিক দলের নেতারা সিলেট শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। আজ শনিবার তারা ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নিজ নিজ অবস্থানে থেকে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছে। এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার ইশতেহার ঘোষণা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর পরদিন মঙ্গলবার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। দুই দলের নির্বাচনী ইশতেহারেই ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সময়োপযোগী কিছু প্রতিশ্রুতি থাকছে। আওয়ামী লীগ ইশতেহার ঘোষণা করবে ভিশন-২০৪১’র আলোকে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইশতেহার ঘোষণা করবে বিএনপির ভিশন-২০৩০’র আলোকে। অবশ্য ইতোমধ্যেই ওয়ার্কাস পার্টি ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ)সহ কয়েকটি দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এদিকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল প্রতিদিনই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করছে। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে এ দু’দলের অভিযোগের পাহাড় জমেছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই দু’দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ করছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিএনপির অভিযোগের পর অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে করছে অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলনে করছে অভিযোগ এমনকি বিবৃতি দিয়েও অভিযোগ করা হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করায় সবদিক থেকে অধিক সুবিধা পাচ্ছে। আর বিএনপি বিরোধী দলে থাকায় এবং দলের অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলা থাকায় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ৭ দফা দাবি দিয়েছিল তার একটিও মানা হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হয় এ নিয়ে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যেই আশঙ্কা রয়েছে। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা মাথায় নিয়ে এখন কারাগারে। আর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গ্রেফতারের ভয়ে দেশে আসছেন না। এ অবস্থায় নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কায় বিএনপি নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চাচ্ছে। পরিবেশ নষ্ট করে তারা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পাঁয়তারা করছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির দফায় দফায় অভিযোগ একটি রাজনৈতিক কৌশল। এ কৌশলের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে চাপে রেখে নির্বাচনের পরিবেশ নিজেদের অনুকূলে রাখতে চায় দলটি। তবে বিএনপি নেতারা মুখে বলার সময় যেভাবে অভিযোগের কথা বলে বাস্তবে নির্বাচন কমিশনে সুনির্দিষ্ট করে এত অভিযোগের কথা তুলে ধরতে পারছে না। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে আগেভাগে নির্বাচনী মাঠে সরব হওয়ায় আওয়ামী লীগ এখনও সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। আর বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের ওপর ভর করে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ায় কৌশলে কিছুটা পিছিয়ে আছে। ড. কামাল হোসেনের ওপর ভর না করে বিএনপি এককভাবে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়লে তাদের জন্য বেশি সুবিধা হতো। প্রসঙ্গত, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার বিএনপি এখন পর্যন্ত প্রস্তুতি জোরদার করতে পারেনি। আগের নির্বাচনগুলোতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে সর্বক্ষণিক টিম গঠন করে প্রস্তুতি জোরদার করার চেষ্টা করলেও এবার সেভাবে হচ্ছে না। এ ছাড়া আগের কটি নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান সর্বক্ষণিক তাঁর সঙ্গে থেকে নির্বাচন পরিচালনার কাজে সহযোগিতা করতেন এবং সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। কিন্তু এবার কেন্দ্র থেকে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার কাজ সমন্বয় করার তেমন কেউ নেই। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ক’জন সিনিয়র নেতা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। বাকি সব সিনিয়র নেতারা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের বিশাল একটি টিম নিয়ে সর্বক্ষণিক নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। কোথায় কি হচ্ছে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছেন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন দল কার চেয়ে বেশি কৌশল গ্রহণ করে নির্বাচনী প্রস্তুতি অধিকতর জোরদার করবে তা নিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। নির্বাচনের ২ দিন আগে প্রচার কাজ শেষ করতে হবে এটি মাথায় রেখেই যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে বড় রাজনৈতিক দলগুলো।
×