ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জেতার পর মনে হয়েছিল তৃতীয় ওয়ানডেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজতো পাত্তাই পেল না। ৮ উইকেটে অনায়াসেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিল বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজের (৪/২৯) অসাধারণ বোলিংয়ের পর তামিম ইকবাল (অপরাজিত ৮১ রান) ও সৌম্য সরকারের (৮০ রান) ব্যাটিং নৈপুণ্যে সহজেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেও যায়। সাই হোপ অবশ্য সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচেও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অপরাজিত ১০৮ রানের জ্বলজ্বলে ইনিংস খেলেন। টানা দুই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু তার এই সেঞ্চুরির পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০০ রানও করতে পারেনি। ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ১৯৮ রান করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তা ক্যারিবীয়রা করতে পারেনি আসলে মেহেদী হাসান মিরাজের (৪/২৯) অসাধারণ ঘূর্ণি জাদুতে। মিরাজের সঙ্গে মাশরাফি বিন মর্তুজা (২/৩৪) ও সাকিব আল হাসানের (২/৪০) নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কাত হয় আসলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে স্কোর হয়েছে সেই স্কোর যে বাংলাদেশ সহজেই অতিক্রম করবে তা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শেষ হতেই বোঝা হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-সৌম্যের ১৩১ রানের জুটিতে ৩৮.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান করে জিতে বাংলাদেশ। এ বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর প্রতিশোধের মুখে এবার উল্টো পড়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজ নিজেদের করে নিতে হলে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক ওয়ানডেতে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। সেই জয় আসল সহজেই। ম্যাচটি না জিতলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর প্রতিশোধ নিত ক্যারিবীয়রা। সেই সুযোগই দিল না বাংলাদেশ। জুলাইয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল। বাংলাদেশকেই পাত্তাই দেয়নি। এবার দেশের মাটিতে সেই টেস্ট সিরিজের প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়েছে। জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশ সেই তোপে যেন পড়ে গিয়েছিল। সিরিজ ১-১ সমতায় ছিল। প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটে জিতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে সিরিজের ফয়সালা ছিল। বাংলাদেশ জিতেই মাঠ ছাড়ল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টানা দুই ওয়ানডে সিরিজে হারাল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ যে কতটা শক্তিশালী দল তা ভালভাবেই টের পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ওয়ানডেটি হয় সিলেটে। ভয়ও ছিল। এই স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকের ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিম্বাবুইয়ের কাছে হেরেছিল। এবার স্টেডিয়ামটির ওয়ানডে অভিষেক হয়। টেস্টের মতো উইকেট বুঝে ওঠা না গেলে ওয়ানডেতেও হার হয়ে যেতে পারত। আর তা হলেই বিপদ ঘনিয়ে আসত। সিরিজ হার হয়ে যেতে পারত বাংলাদেশের। তাছাড়া টসে যে দল জিতত, তারাই ফিল্ডিং নিত। শিশিরে যে পরে বোলিং করা কঠিন। ব্যাটিং করা অনেক সহজ। অধিনায়ক মাশরাফির কি ভাগ্য। টসে জিতলেন। ফিল্ডিং নিলেন। জিতলেনও। মাশরাফি ও সিলেটের ডাবল সেঞ্চুরির ম্যাচ ছিল শুক্রবার। সেই ম্যাচে বাংলাদেশই বাজিমাত করল। দেশের জার্সিতে ২০০ ওয়ানডে খেললেন মাশরাফি। সেটি তার দেশের মাটিতে বিদায়ী ম্যাচও হতে পারে। এমন ম্যাচ হয়েছে সিলেটে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০তম ওয়ানডে ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হলো সিলেটের। মাশরাফি ও সিলেট যেন একাকার হয়ে গেল। মাশরাফির ওয়ানডে ক্যারিয়ার হিসেব করলে শুক্রবার ২০২তম ওয়ানডে ম্যাচ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জার্সিতে ছিল ২০০তম ম্যাচ। এশিয়া একাদশের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন মাশরাফি। আর সিলেট ভেন্যুও একটি মাইলফলকে পা দিয়েছে একইদিন। সিলেট এখন বিশ্বের ২০০তম ওয়ানডে ভেন্যু। সিলেটের আগে বিশ্বের ১৯৯তম ওয়ানডে ভেন্যু হিসেবে যাত্রা করেছে কেরালার গ্রিনফিল্ড আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি বিশ্বের প্রথম ওয়ানডে ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড। এর ২১ বছর পর ১৯৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর শততম ওয়ানডে ভেন্যু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের সাহারা পার্ক স্টেডিয়াম। ২০০তম ওয়ানডে ভেন্যু হিসেবে নাম লেখাল সিলেট। এমন সুন্দর দিনে সুখস্মৃতিই মিলল বাংলাদেশের। ৬৯টি ওয়ানডে ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হাবিবুল বাশার। মাশরাফি দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি (৭০ ওয়ানডে) ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিলেন। রেকর্ডের দিনে মাশরাফিও পেয়ে গেলেন আনন্দ। সিরিজ জয়ের আনন্দ পেলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের।
×