ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোট কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নয়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ভোট কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে ইসিতে আবেদন জানিয়েছেন ৩৪ হাজার ৬৭১। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইসিতে নিবন্ধন রয়েছে ১১৮ সংস্থার। এর মধ্যে এবারের নির্বাচনে আবেদন জানানো হয়েছে ৮১ সংস্থার পক্ষ থেকে। আর বিদেশী পর্যবেক্ষক থেকে আবেদন পড়েছে ১৬৭। শনিবার নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে উত্থাপিত সভার কার্যপত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সারাদেশে ২৫ হাজার ৯২০ পর্যবেক্ষককে অনুমতি দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানান গেছে। শনিবার নির্বাচন কমিশন বৈঠকে সাত এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষক ছাড়া নির্বাচনের সিগনেচার টিউন, টিভিসি, বিদেশী ও স্থানীয় সাংবাদিক, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের রাজনৈতিক দলের বক্তব্য প্রচার নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, দেশী ও বিদেশী পর্যবেক্ষকদের জন্য আলাদা নীতিমালা আছে। নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে তারা বেশিক্ষণ ভোটকক্ষের ভেতরে অবস্থান করতে পারবেন না। কক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচারও করতে পারবেন না তারা। কেন্দ্রের ভেতরে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে সাংবাদিকেরা মোবাইলে ছবি তুলে পারবেন। একই সঙ্গে শৃঙ্খলার স্বার্থে সংবাদকর্মী ও পর্যবেক্ষকরা যেন বড় বড় দলে ভোটকক্ষে প্রবেশ না করেন এবং বেশি সময় অবস্থান না করেন, সেই বিষয়ে আহ্বান জানান সিইসি। জানা গেছে নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে এখন পর্যন্ত ৮ বিদেশী সাংবাদিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সটার্নাল পাবলিসিটি উইংয়ের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকের কার্যপত্র উল্লেখ করা হয়, কোন কোন আসনে অধিক সংখ্যক পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করায় তা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সারাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ২৫ হাজার ৯২০ জন পর্যবেক্ষক মোতায়েনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় আলোচনার জন্য। জানা গেছে এর মধ্যে ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ১৪ পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টর রয়েছে। এছাড়া কয়েকদিন আগের আওয়ামী লৈিগর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম চারটি পর্যবেক্ষক সংস্থার নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে ইসি আপত্তি জানিয়েছেন। গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি সংস্থাকে পর্যবেক্ষকের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানান তিনি। তাদের আপত্তি জানানো এই চারটি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে রয়েছে ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউস ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ। ইসিকে দেয়া এক লিখিত বক্তব্যে এইচ টি ইমাম এই দাবি করেন ওই চার সংস্থা বিএনপি সমর্থিত। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নামে দলীয় কাজ করে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে দেশী ও বিদেশীরা কাজ করেন। দেশীয় যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে এদের মধ্যে চারটি সংস্থা একেবারেই দলীয়। তাদের সম্পর্কে মারাত্মক তথ্য আছে। এর মধ্যে ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রধান হচ্ছেন তালেয়া রেহমান। যিনি বিএনপির বড় নেতা ও সাংবাদিক-লেখক শফিক রেহমানের স্ত্রী। খান ফাউন্ডেশন চালান বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের স্ত্রী। লাইট হাউসের পেছনে প্রত্যক্ষভাবে রয়েছেন তারেক রহমান। আর বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদে নেপথ্যে এখন রয়েছেন আদিলুর রহমান খান। যার প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’। কয়েকদিন আগেই ইসি এর নিবন্ধন বাতিল করেছে। সাংবাদিকদের বিষয়ে নির্দেশনা কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার সাংবাদিকদের অনুমোদন ও কার্ড নির্বাচন কমিশন সচিবলায় থেকে দেয়া হয়। সকল টেলিভিশন চ্যারেন যেসব পত্রিকা বা সাপ্তাহিকের নাম পিআইডির মিডিয়া গাইডে ও ডিএফপির বিজ্ঞাপন তালিকায় রয়েছে সেই সব পত্রিকার সাংবাদিকদের তথ্য যাচাই করে কার্ড দেয়া হয়। এদিকে নির্বাচনের ১৫ দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত প্রচারের জন্য একটি সিগনেচার টিউনসহ কাউন্ট ডাউন তৈরি করা হয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সকল টিভি চ্যানেলে প্রচারের জন্য পাঠানো হবে। ভোটকক্ষের ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার নয় ॥ এদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের খবর প্রচারে এবার সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা বেঁধে দিয়েছে ইসি। ইসর নির্দেশনা অনুযায়ী ভোট কেন্দ্রে ভেতর থেকে সরাসরি সম্প্রদারের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা। ভোট কেন্দ্রে শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থের তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ভোটকক্ষের মধ্যে ছবি বা ভিডিও করতে কোন বাধা নেই। শুধু সরাসরি সম্প্রচার না করার অনুরোধ করা হচ্ছে। কমিশনের বৈঠক শেষে শনিবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচনের ভবনের মিডিয়া সেন্টারের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক বিধিনিষেধ সম্পর্কে এসব কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটকক্ষের ভেতর থেকে কোনভাবে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। টেলিভিশন, অনলাইন, মোবাইল বা ক্যামেরায় হোক- সরাসরি সম্প্রচার যেন না করে সে বিষয়ে অনুরোধ করছি। সেনাবাহিনী গ্রেফতার করতে পারবে ॥ এ সময় তিনি আরও বলেন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনী প্রয়োজন হলে গ্রেফতার করতে পারবে। তবে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হবে না। তারা গ্রেফতার করতে পারবে। তাদের সেই ক্ষমতা দেয়া আছে। যদি ম্যাজিস্ট্রেট থাকে বা কোন একটি এলাকা/কেন্দ্রে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে, তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ করার দরকার হয় তাহলে তারা গ্রেফতার করতে পারে। এটা আইনেই বলা আছে। সিআরপিসিতে আইনে যেভাবে আছে সেভাবেই তারা দায়িত্ব পালন করবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। তারা জরুরী প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় গ্রেফতার করতে পারবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে সেনা মোতায়েন করা হবে।
×