ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইসিতে ঐক্যফ্রন্টের চিঠি

ড. কামালের ওপর হামলা দুঃখজনক ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ড. কামালের ওপর হামলা দুঃখজনক ॥ সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামালের ওপর হামলার ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক। তিনি একজন সিনিয়র সিটিজেন, প্রখ্যাত ব্যক্তি। তার ওপর হামলা কখনও প্রত্যাশিত নয়। এটা ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে। তার কাছে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে তা পাঠানো হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। শনিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন। গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ড. কামাল হোসেনসহ দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে দেয়া হয়। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাত করে লিখিতভাবে এ দাবি জানায়। শুক্রবার মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে কামাল হোসেনের ওপর হামলার অভিযোগ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, কর্মসূচী থেকে ফেরার সময় এই হামলা হয়। তাদের বহরের ৭-৮টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। এতে আ স ম আবদুর রবের গাড়িচালকসহ ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন। পরে আলাল সাংবাদিকদের বলেন, ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার বিষয়ে ইসি সচিব বলেছেন, ওনারা নাকি অবহিতই না। এটা খুব আশ্চর্য লাগে আমাদের কাছে। খুব কষ্ট লাগে। এটা আমাদের কাছে খুব বিস্ময়কর লাগে। এটা কিভাবে সম্ভব! নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছেন, ওনারা জানতেন না এবং টিভিতেও দেখতে পারেননি। পরবর্তীতে ওনারা ঘটনাটি শুনেছেন অফিস আওয়ারের পরে। ওনারা কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেননি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সব জায়গায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ তিন বাহিনীর মোকাবেলা করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া। এ তিন বাহিনীকে মোকাবেলা করতে তো আমরা পারব না। তারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো করছে। সারাদেশে বিভিন্ন আসনে যে হামলা ও সহিংসতা হয়েছে, সে বিষয়গুলো আমরা ইসিকে জানিয়েছি। আক্রমণ বন্ধ করতে ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, যে ছয় পুলিশের দায়িত্বশীল আচরণের মধ্য দিয়ে আক্রমণ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি, সে পুলিশদের বিরুদ্ধে আমরা যত অভিযোগ করেছি, সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো থেকে একজন পুলিশকেও বদলি বা ক্লোজ করা হয়নি। একথা আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি। আমরা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু তারা তো এ সুযোগে দ্বিগুণ উৎসাহে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। তিনি বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদের স্ত্রী ও বিএনপি প্রার্থী রোমানা মাহমুদের নির্বাচনী প্রচারে গুলি করা হয়েছে। তিনি আহত এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। তার কর্মীরাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমরা মামলা করতে গিয়েছি, পুলিশ মামলা নেয়নি। এখন পর্যন্ত অন্য কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু দাউদকে প্রত্যাহার করতে বলেছি। কমিশনের কাছে বড় কিছুই চাইনি। তাদের ক্লোজ করার জন্য বলেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কয়েকদিন আগে বললেন, নির্বাচনের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আমরা তো জীবন নিয়েই বাঁচতে পারছি না। এত মারপিটের পরও আমরা মাঠে আছি। আমরা ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকব। নির্বাচন কমিশন আমাদের বক্তব্য শোনেন, কিন্তু প্রতিকার পাই না। তাই সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আমরা রাষ্ট্রপতির কাছেও বলব। তার সাক্ষাতের জন্য চিঠিও দেয়া হয়েছে। তাও কাজ না হলে জনগণের কাছে বিচারের ভার ছেড়ে দেব। এদিকে কমিশনের বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, তার ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। এ ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের যাতে অহেতুক হয়রানি, গ্রেফতার না করা হয় সেজন্য আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশনা দেয়া হবে বলে জানান সিইসি। বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেই তাদেরকে যেন অহেতুক হয়রানি না করা হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আগামীকাল-পরশুর মধ্যেই আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব। আগেও বলেছি নিষ্প্রয়োজনে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। যারা নেতা রয়েছেন, তাদের যদি কোন ফৌজদারি অপরাধ না থাকে যেন অহেতুক হয়রানি না করে। বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, অহেতুক কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা বলা যাবে না। হয়ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমা ও ওয়ারেন্ট থাকতে পারে। সেই কারণে তাদের গ্রেফতার করে থাকতে পারে। এটা তাৎক্ষণিক বলতে পারব না। আমরা মনে করি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে। প্রার্থীরা তাদের প্রচার চালাতে পারছে। প্রচারে তাদের কোন বাধা নেই। স্থানীয়ভাবে ফৌজদারি অপরাধ ঘটলে সেক্ষেত্রে তারা মামলা করবে বা আমাদের কাছে পাঠাবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। বাম গণতান্ত্রিক জোটের অভিযোগ ইসিতে ॥ এদিকে সারাদেশে অন্তত ১০টি আসনে জোটের প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেয়া হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। নির্বাচনী প্রচার ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গণসংযোগে বাধা-হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার এসব অভিযোগ করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে বাম জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসেন।
×