ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. কামাল জামায়াত প্রীতিতে ভুগছেন?

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ড. কামাল জামায়াত প্রীতিতে ভুগছেন?

শংকর কুমার দে ॥ ‘খামোশ’ শব্দটি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। ফার্সি ভাষার এই শব্দ বেশি ব্যবহার করে পাকিস্তানের উর্দুভাষীরা। উর্দু ভাষায় যে শব্দটি বেশি ব্যবহৃত হয়, ঠিক সে শব্দটিই উচ্চারণ করেছেন ঐক্যফ্রন্ট শীর্ষ নেতা ড. কামাল। ১৪ ডিসেম্বর সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এই শব্দটি উচ্চারণ করে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন তিনি। তাও আবার জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল, তাদের সঙ্গে নির্বাচন করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি সাংবাদিককে ধমকের সুরে বলেছেন, ‘খামোশ’। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ড. কামাল হোসেনের পাকিস্তানী স্টাইলে উর্দু শব্দ খামোশ প্রীতি নিয়ে নানামুখী বিশ্লেষণ চলছে। প্রতিবাদে ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে ভাংচুর হয়েছে, থানায় জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে, যা গোটা বিষয়টি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তাধীন। ড. কামাল হোসেনকে জামায়াত প্রসঙ্গে প্রশ্নকারী সাংবাদিককে ‘চুপ করো’ খামোশ বলে হুমকি দেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত জিডির রেশ ধরে ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাও। স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছেন, যার শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। আর জামায়াতকে ক্ষমতায় দেখতে চায় পাকিস্তান ও তার গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। জামায়াত যেই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরামও সেই একই প্রতীক ধানের শীষ নিয়েই নির্র্বাচন করছেন। এ কারণে খামোশ শব্দটি রাজনৈতিক মহলেও নতুন মাত্রার যোগ হয়েছে। কারণ, বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর গোপন যোগাযোগ, সংলাপের অডিও টেপ, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের যে ঝড় উঠেছে তা এখনও বইছে। এর মধ্যেই যুক্ত হয়েছে খামোশ শব্দটি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জামায়াতের তালিকা অনুযায়ী পাকিস্তানের দোসর জামায়াত, রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। এখন ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে ড. কামালের গণফোরামও। কারণ, ড. কামাল হোসেনরা ঐক্যফ্রন্ট গড়ার শুরুতে বলেছিলেন জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে ঐক্যফ্রন্টে আসতে হবে। জামায়াতকে কোনভাবেই ঐক্যফ্রন্টে নেয়া হবে না। এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ড. কামাল হোসেনকে কি গ্রাস করেছে স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত ? যেই খামোশ শব্দটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ সর্বমহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে তার উৎপত্তি কিভাবে ঘটেছিল তার বিবরণ সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। দিন: ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-২০১৮, সকাল। স্থান: মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। সাংবাদিক: জামায়াতের বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী ? ড. কামাল: এখন না, এখন না। শহীদ মিনারে কোন কথা না... সাংবাদিক: জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে.. তাদের সঙ্গে নির্বাচন... ড. কামাল: প্রশ্নই ওঠে না, প্রশ্নই ওঠে না। বেহুদা কথা। কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ? তোমার নাম কী? জেনে রাখব তোমাকে, চিনে রাখব। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা কর তোমরা। শহীদদের কথা চিন্তা কর। হে হে হে করছে। চুপ কর। সাংবাদিক: শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের কথা যে, আপনারা জামায়াতের সঙ্গে ... ড. কামাল: চুপ কর। চুপ কর। খামোশ। তোমার নাম কি?... চিনে রাখলাম... ড. কামাল এখন জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা, একাত্তরে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের বিষয়টিও তুচ্ছ ঘটনার মতোই বুদ্ধিজীবী দিবসে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রেগে গিয়ে, ক্ষেপে গিয়ে খামোশ বলে হুমকি দিয়েছেন প্রশ্নকারী সাংবাদিককে। তার মেয়েজামাই ডেভিড বার্গম্যানই তো সাংবাদিক। তার মেয়েজামাই বার্গম্যান যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করে মানবতাবিরোধী আদালতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাহলে কি তিনি মেয়ের জামাইয়ের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জামায়াতের প্রীতিতে পড়েছেন ? মেয়ের জামাইয়ের বাংলাদেশে প্রবেশ নিধিদ্ধ ॥ গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেনের স্বামী ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। তাকে বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আদালত অবমাননার দায়ে জরিমানা ও এজলাসকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বিতর্কিত লেখালেখি, অপপ্রচার, হেফাজতের আন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মনগড়া ও বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি বাংলাদেশে আসতে চাইলে যাতে ভিসা দেয়া না হয় সেজন্য বাংলাদেশের সকল দূতাবাস ও হাইকমিশনকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গণফোরাম সভাপতি ও সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বিতর্কিত লেখালেখি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত ছাড়াও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে আসছেন তিনি। হেফাজতের আন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হতাহতের মিথ্যা, ভুয়া তথ্য উপস্থাপনসহ মনগড়া ও বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশে এসে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যাতে কোন অপপ্রচার চালাতে না পারেন, সেজন্য সরকার সতর্ক রয়েছে। তিনি যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারেন, সেজন্য বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস, ইমিগ্রেশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পুলিশকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অনেক দেশ থেকে বাংলাদেশে ভিসা অন এ্যারাইভাল সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে আসার সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে ইমিগ্রেশন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশে আসতে চাইলে যাতে ভিসা দেয়া না হয় সেজন্য বাংলাদেশের সকল দূতাবাস ও হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, যেসব দেশ থেকে ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশে আসার সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশ থেকেও যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারেন, সেজন্য দেশের সকল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনকে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য সাজা দেয়া হয় ডেভিড বার্গম্যানকে। তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদ- দেয় যুদ্ধাপরাধীদের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তাকে ওইদিন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলা পর্যন্ত এজলাসকক্ষে বসে থাকতেও হয়। রায়ে ডেভিড বার্গম্যান কিভাবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করছেন, তা খতিয়ে দেখতে সরকারকে নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালে নিউএজের সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার উভয় মামলায় তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এ আদেশ দেয়। বিবৃতিদাতাদের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ॥ আদালত অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া জরিমানা ও এজলাসকক্ষে দাঁড়িয়ে থাকার সাজার রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিলেন ৪৯ বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিদাতারা ব্রিটিশ নাগরিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হলে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ডেভিড বার্গম্যানের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে যারা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাদের অন্যতম হচ্ছেন কলামিস্ট মহিউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ও সুজনের কর্মকর্তা এম হাফিজ উদ্দিন, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ইমতিয়াজ আহমেদ, মানবাধিকার নেত্রী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রমুখ। বিবৃতিদাতা ৪৯ জনের মধ্যে ১১ জন দেশের বাইরে অবস্থান করায় ট্রাইব্যুনাল তার আদেশ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে ওই ১১ জনকে অবহিত করা এবং তাদের ব্যাখ্যা সংগ্রহ করে ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আদেশ দিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশে এসে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অপপ্রচার চালিয়েছেন, হেফাজতের আন্দোলন নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে মিথ্যা, ভুয়া তথ্য উপস্থাপনসহ মনগড়া ও বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যাতে কোন অপপ্রচার চালাতে না পারেন সেজন্য ডেভিড বার্গম্যানের বাংলাদেশে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আদালত অবমাননার দায়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাকে পাঁচ হাজার টাকা আর্থদ-, অনাদায়ে একমাসের কারাদ- দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়। ব্রিটিশ সাংবাদিক ও ড. কামাল হোসেনের মেয়ের জামাই ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের সাজার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার কারণে আদালত শাস্তি দেয় ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে । ড. কামালের মেয়ের বিরুদ্ধেও ॥ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি বাংলাদেশে জামায়াতের পশ্চিমা লবিস্টদের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে একই লক্ষ্যে কাজ করছেন। সেই অভিযোগের রেশ না কাটতেই ২০১৮ সালের গত ২৯ মার্চ নটিংহাম ইউনিভার্সিটিতে ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন (ডেভিড বার্গম্যানের স্ত্রী) এক সেমিনারে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন। বিদেশের সেমিনারেও তিনি প্রচ্ছন্নভাবে হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন। তখনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে বিখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের গোটা পরিবারই কি হাসিনা ফোবিয়ায় ভুগতে শুরু করে পাকিস্তান প্রীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন ? স্ত্রীর কারণেই কি ড. কামালের খামোশ ॥ ড. কামাল হোসেনের স্ত্রী ড. হামিদা হোসেন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দ্রাবাদে। তার বাবা আব্দুল্লাহ শফি মোহাম্মদ আকন্দ ছিলেন একজন বিচারক। তাদের পারিবারিক উপাধি ছিল ‘আকন্দ’। হামিদা হোসেনের মাতা তুরস্কে বড় হয়েছেন এবং বিয়ের পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে হামিদা কনিষ্ঠ। তিনি মানবাধিকার নেত্রী, আইনগত চিকিৎসা এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ১৯৬২ সালে একবার বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে এ দেশে ফিরে আসেন ১৯৬৫ সালে। তিনি ১৯৬৫ সালে বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন, তিনি হায়দ্রাবাদে একটি মিশনারি স্কুলে ভর্তি হন। তার শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজী আর দ্বিতীয় ভাষা ছিল ফার্সি। এই স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে তিনি মেট্রিক পাস করেন। এর পর হায়দ্রাবাদ কলেজে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়লেসলি কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ পান। সেখানে তিন বছর পড়াশোনা করেন এবং সত্তরের দশকে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসের ওপর পিএইচডি করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পরে তিনি করাচীতে পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্সের গবেষণা সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতপর তিনি করাচীতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের একজন সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের ঢাকা অফিসে যোগ দেন তিনি। এছাড়া হামিদা হোসেন করাচী হতে প্রকাশিত রাজনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা আউটলুকে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জড়িত ছিলেন। পারিবারিকভাবে উর্দু ভাষায় খামোশ বলেন কি ॥ ড. কামাল হোসেনের জন্ম বরিশালের শায়েস্তাবাদে। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২-এর ৮ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তাকেও মুক্তি দেয়া হয়। তার স্ত্রী পাকিস্তানের ফার্সি ও উর্দুভাষী, মেয়ের জামাই বার্গম্যান ইংরেজী ভাষী, তিনি নিজে বিদেশে অধ্যয়ন করেছেন ইংরেজীতে, তার মেয়েও অধ্যয়ন করেছেন বিদেশে। এ কারণে ড. কামাল হোসেনের বাড়িতে পারিবারিকভাবে কথা বলার সময় বাংলা ভাষার চেয়ে ফার্সি বা উর্দু কিংবা ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করেন পরস্পরের সঙ্গে কথোপকথনে। পাকিস্তান প্রীতির কারণেই ড. কামাল হোসেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা উর্দুভাষীদের ব্যবহৃত খামোশ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন ?
×